বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যিলহজ শুরু হয়েছে; নখ-চুল না কাটি, না ছাটি : এ দশকের একটি বিশেষ আমল হলো- যিলহজ্বের চাঁদ ওঠা থেকে নিয়ে কুরবানী করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা। এতে একদিকে হাজী সাহেবানের সাথে একরকম সাদৃশ্য প্রকাশ পায়। পাশাপাশি এর জন্য রয়েছে বিশেষ ফজিলতও। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যখন যিলহজের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম : ১৯৭৭)।
অতএব যিলহজ আগমনের পূর্বেই নখ-চুল কেটে ছেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়। যারা কুরবানী করবেন তারা এ আমলের প্রতি তো যত্নবান হবেনই। আর বিভিন্ন বর্ণনা ও সাহাবা-তাবেয়ীনের আমলের নিরিখে এ-ও বুঝে আসে যে, যারা কুরবানী করবেন না তারাও এ ফজিলতপূর্ণ আমলে শরীক হতে পারেন। এমনকি এসময় বাচ্চাদের চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকাও ভালো; যা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল থেকে বোঝা যায়। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ : ২৭৮৯)।
ইয়াওমে আরাফা; গুরুত্ব ও ফজিলত : যিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস হলো নয় তারিখ। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ীÑ ‘ইয়াওমু আরাফা’। এ দিনটি হজের মূল দিন। আরাফার ময়দানে হাজী সাহেবানের উকূফ-অবস্থান এ দিনেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা এ দিনকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন। দ্বীন-ইসলামকে পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন এ দিনেই। এ দিনেই নাযিল হয়েছে কোরআনে কারীমের সর্বশেষ আয়াত : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা: ৩)।
এ দিনে বান্দার দিকে রবের রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে থাকেন এ দিনে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহীহ মুসলিম : ১৩৪৮)।
যে দিনের রোজায় মাফ হয় দুই বছরের গুনাহ : এ দিনের একটি রোজায় বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আরাফার দিনের (নয় যিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম : ১১৬২)। প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহজের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। অতএব যে এলাকা যখন যিলহজের নয় তারিখে উপনীত হবে সে এলাকায় তখন এ বিধান প্রযোজ্য হবে।
যিলহজের ফজিলতপূর্ণ প্রথম দশকের মাঝে যেহেতু ইয়াওমে আরাফা তথা নয় যিলহজ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিবসটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথেই আমলে নেয়া চাই। পুরো দশক সম্ভব না হলেও কমপক্ষে এ দিনে রোজা রাখার চেষ্টা করি। নেক আমলে আরো আগ্রগামী হই। যিকির, দুআ, ইস্তিগফার, সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি তাসবীহ বেশি বেশি পাঠ করি। যেহেতু এ দিবসে মহান মালিকের পক্ষ থেকে ব্যাপক ক্ষমার ঘোষণা এসেছে, বিশেষ করে হাজী সাহেবানের জন্য, সেখানে আমরাও দূরদেশ থেকে সেই ব্যাপক ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভ করতে উন্মুখ হই।
হাদীস শরীফে আরাফার দিনের দুআকে শ্রেষ্ঠ দুআ বলা হয়েছে। নবীজী বলেন : শ্রেষ্ঠ দুআ (যিকির) আরাফার দুআ। দুআ-যিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ঐ দুআ, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো : ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদীর’ (জামে তিরমিযী : ৩৫৮৫)। অতএব আমরা এ দুআটির প্রতিও বিশেষ ইহতিমাম করতে পারি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।