বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আরবি বার মাসের সর্বশেষ মাস যিলহজ। এ মাসে রয়েছে ইসলামের মূল পাঁচ ভিত্তির অন্যতম হজ্বের বিধান এবং মুসলিম উম্মাহর দু’টি উৎসবের একটি ঈদুল আযহা।
ইসলামের মহান দু’টি শিআর ও নিদর্শন- হজ ও কুরবানী। রয়েছে ইয়াওমে আরাফা, আইয়ামে তাশরীক এবং যিলহজের বরকত ও ফজিলতপূর্ণ প্রথম দশক। যিলহজ মাস ‘আশহুরে হুরুম’ তথা ইসলামের সম্মানিত চার মাসের অন্যতম প্রধান ফযীলতপূর্ণ মাস। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন : আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। (সূরা তাওবা : ৩৬)।
এ চার মাস কী কী? হাদীস শরীফে তা বলে দেয়া হয়েছে। নবী কারীম (সা.) বলেন : সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল। (কারণ, জাহেলি যুগে আরবরা নিজেদের স্বার্থ ও মর্জিমত মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে রেখেছিল।) বার মাসে এক বছর । এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিকÑ যিলকদ, যিলহজ ও মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (সহীহ বুখারী : ৪৬৬২)।
আর এ চার মাসের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো পবিত্র যিলহজ মাস। নবী কারীম (সা.) বলেন : জেনে রেখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো, তোমাদের এই মাস (যিলহজ)। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৯৩১)। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এ মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যমণ্ডিত। কোরআন ও হাদীসে এ মাসের জন্য বিশেষভাবে যে কয়টি আমলের কথা উল্লেখ হয়েছে এখানে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
আশারা যিলহজ বা যিলহজের প্রথম দশক : যিলহজ মাস সম্মানিত মাস। আর এ মাসের প্রথম দশক সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা কসম করে বলেন : শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির। (সূরা ফাজর : ১-২)। এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা যিলহজের প্রথম দশ রাত উদ্দেশ্য। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত ইবনে যুবাইর (রা.) ও মুজাহিদ রাহ.-সহ পূর্ববর্তী পরবর্তী অনেকেই এমনটি বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা ফাজর দ্রষ্টব্য)।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আল্লাহর নিকট যিলহজের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয় কি? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)। (সহীহ বুখারী : ৯৬৯)।
অতএব মুমিন বান্দার উচিত যিলহজ মাসে নেক আমলের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া। বিভিন্ন নেক আমলের প্রতি আরো অগ্রসর হওয়া। কেননা এ মাসের আমলগুলো আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যন্ত প্রিয়।
বেশি বেশি করি ‘তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ’ : হাদীস শরীফে এ মাসের আমলের ব্যাপারে বলা হয়েছে : আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু লিল্লাহ তাসবীহ পাঠ কর। (মুসনাদে আহমাদ : ৫৪৪৬)। তো এ মাসে এসকল যিকিরের মাধ্যমে আমরা আমাদের যবানকে সতেজ রাখতে পারি। তেমনিভাবে অন্যান্য নফল ইবাদতের মাধ্যমেও রাখতে পারি এ মাসকে প্রাণবন্ত। বিশেষ করে প্রথম দশক।
এ দশকে মনোযোগী হই রোজার প্রতি : হাদীস শরীফে বিশেষভাবে এ সময় রোজা রাখার কথা এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত এ দশক (৯ দিন) রোজা রাখতেন। হাদীস শরীফের মৌলিক গ্রন্থগুলোতে এ দশকে রোজা রাখার ব্যাপারে স্বতন্ত্র অধ্যায় নির্ধারিত হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজের নয়টি দিবসে (সাধারণত) রোজা রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ : ২৪৩৭)।
অতএব সম্ভব হলে এ দশকে রোজা রাখার প্রতি মনোযোগ দেয়া জরুরি। পুরো নয় দিন রোজা রাখতে কষ্ট হলে যে কয়টি সম্ভব সে কয়টি রাখতে পারি। তাতেও সাওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।