বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সংসদে পবিত্র কোরআনের ব্যাখা হচ্ছে। বক্তৃতায় এর উদ্ধৃতি ও নিজের দাবি প্রমাণে এর ব্যবহারও চলছে। এমনকি বলা হচ্ছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা পবিত্র কোরআনেই আছে। কোরআনে আছে কথাটির অর্থ ধরতে হবে ইসলামে আছে। কারণ ইসলামের মৌলিক সব বিষয় কোরআনে বিস্তারিতভাবে থাকে না। এটি রাসূল (সা.) এর নিকট আল্লাহর ওহির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গরূপে বিবৃত হয়ে কোরআন বা সুন্নাহ যে ভাবেই হোক বাস্তবে রূপান্তরিত হয়। এখানে কোরআনে আছে কি না, এর অর্থ ইসলাম একে সমর্থন করে কি না।
এখানে প্রথমেই পাঠককে জানতে হবে যে, ধর্ম নিরপেক্ষতা কী। যদি একটি সমাজে সব ধর্মের লোকেদের নাগরিক সম্প্রীতি, সামাজিক সহাবস্থান ও সবার নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার বুঝানো হয়, তাহলে উত্তরে বলা যাবে যে, এমন ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহাবস্থান ইসলামে আছে। আর যদি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে কেউ পশ্চিমা পরিভাষা সেক্যুলারিজমের সরাসরি অনুবাদ তথা সমার্থবোধক শব্দ হিসাবে নিয়ে বলতে চান, এটি কি কোরআনে বা ইসলামে আছে? তাহলে এক কথায় জবাব হবে, না অবশ্যই নেই। থাকতে পারে না। কারণ ইসলাম একটি ধর্ম। কোরআন এর ধর্মগ্রন্থ। নবী করিম (সা.) নিজে এই ধর্মের রাসূল। যিনি নিজে একটি ধর্মের প্রবক্তা তিনি কী করে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারেন। একটি ধর্মগ্রন্থ কী করে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারে। ইসলাম একটি ধর্ম হয়ে সেটি কী করে ধর্ম নিরপেক্ষ হয়।
এ নিয়ে আলাপ খুবই দীর্ঘ। সীমিত অর্থে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহাবস্থান ও সম্প্রীতি বোঝাতে ধর্ম নিরপেক্ষতা শব্দ ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব তো ইসলামী সমাজ ও সভ্যতা ও স্বীকৃত ও যুগে যুগে যথাযথ উপায়ে পরিচালিত কিন্তু এ শব্দটির মূল পরিভাষা সেক্যুলারিজম কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়। এটি একটি ঈমান ইসলাম ও কোরআনবিরোধী পরিভাষা যাতে কোনো মুসলমান বিশ্বাসী হতে পারে না।
ইসলামের প্রথমদিকে মক্কার কাফির মুশরিকরা আল্লাহর নবীর নিকট একটি সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল যে, কিছুদিন আপনি আমাদের উপাস্য দেবদেবীর উপাসনা করবেন আর কিছুদিন আমরা আপনার আল্লাহর ইবাদত করব। সব ধর্মের একটি সমন্বিত ধর্মীয় সংস্কৃতি চালুর চিন্তা থেকেই এ প্রস্তাব তারা দিয়েছিল। এর জবাবে আল্লাহ তার রাসূল (সা.) কে নির্দেশ দিলেন, ‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন, হে অবিশ্বাসীরা, তোমরা যাদের উপাসনা কর আমি তাদের উপাসনা করি না। আমি যার ইবাদত করি তোমরা তার ইবাদতকারী নও। তোমরা যাদের উপসনা কর আমি তার ইবাদতকারী নই। আমি যার ইবাদত করি তোমরা তার উপসনাকারী নও। তোমাদের ধর্মকর্ম ও পরকালীন পরিণামফল তোমাদের আর আমার ধর্মকর্ম ও পরকালীন পরিণাম ফল আমার।’ যার শেষ পংক্তিটির আরবি হলো, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন।’
এখানে কাফির মুশরিকদের সাথে ধর্মকর্ম, বিশ্বাস ও উপসনা এক হওয়া যে কোনোদিনই সম্ভব নয়, সে কথাটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমাদের ধর্ম ও পারলৌকিক প্রতিফল একরকম, আমার ধর্ম ও পারলৌকিক প্রতিফল অন্যরকম। এটি সব ধর্মের গ্রহণযোগ্যতার মিউচুয়াল ঘোষণা নয়। কোরআন বরং এখানে অন্যান্য ধর্ম থেকে নিজেকে দায়মুক্ত ও স্বতন্ত্র ঘোষণা করেছে। অতএব, এ আয়াতের অর্থ মর্ম বক্তব্য ও বার্তা অনুধাবন করেই এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। এর মনমতো ব্যাখ্যা বা গড়পড়তা ব্যবহার কোরআনের উদ্দেশ্যের সাথে যায় না। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি নিজের মনমতো কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবে সে যেন জাহান্নামে তার আসন নির্ধারণ করে নেয়। সুতরাং পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ছাড়া পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, উদ্ধৃতি, তরজমা ও তাফসির না করাই অধিক মঙ্গলজনক। দুনিয়ার অন্য সব কাজের মতো আল্লাহর কিতাব নিয়ে খামখেয়ালি মোটেও ঠিক কাজ নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।