Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভবনের নিচে তিন‘শ বছরের ঐতিহ্য ‘মটকা’

সিভিল ইঞ্জিনিয়াররাও হতবাক প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ৯:১৪ পিএম

চট্টগ্রাম নগরীর একটি পুরাতন ভবন ভেঙ্গে তলায় খনন করতে গিয়ে পাওয়া গেছে ৩০০ বছরের পুরনো মটকা। মাটির তৈরী এই মটকার ওপরই তিনশ বছর দাঁড়িয়ে ছিলো ইট, চুন ও সুরকি দিয়ে তৈরী দ্বিতল ভবনটি। নগরীর পাথরঘাটা নজু মিয়া লেইনে হাজার বর্গফুটের ওই ভবন খুঁড়ে মাটির নিচে শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া গেছে ২৪টি মটকা। এসব মটকার ওপর ২২ ইঞ্চি ইট সুকির আস্তরণ ছিল। ভবনের দেয়ালও ২২ ইঞ্চি পুরো। ভিটির তলায় এসব মটকা খালি এবং উপুড় করা ছিল।

এদিকে তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় আগেকার মাটির মটকাগুলো প্রত্ন সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এসব মটকা যাদুঘরে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী শরিয়ত উল্লাহ তিনশ বছর আগে মিয়ানমারের রেঙ্গুন (ইয়াঙ্গুন) থেকে সার বোঝাই জাহাজে সমুদ্র পথে এই মাটির মটকা এনেছিলেন। সেগুলো মাটিতে পুঁতে রেখে তার ওপর ইট, চুন ও সুরকি দিয়ে ভবনটি তৈরি করেন। সংস্কারের জন্য ভবনটি ভাঙ্গা হলে মাটির খুঁড়ে ২৪টি মটকা পাওয়া যায়। ভবনের নিচে মাটির ভেতর থেকে একের পর এক আস্ত মটকা বের হয়ে আসার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এসব মটকা দেখতে সেখানে মানুষের ভিড় জমে। সেখানে ছুটে যান প্রকৌশলী ও প্রত্ম গবেষকরাও। ইউএসটিসির ভিসি চুয়েটের সাবেক ভিসি ও চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছেন, ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ভবন নিরাপদ রাখতে এই মাটির মটকা ব্যবহার করা হতো। তবে তিনশ বছর ধরে হাজার টন ওজনের ভবন কিভাবে মাটির মটকা ধারণ করেছে, তা পরীক্ষা ও গবেষণা করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, পুরনো মটকাগুলো এখন প্রত্ন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। ২০১৫ সালের প্রত্ন আইনে স্থাবর সম্পত্তি ১০০ বছর ও অস্থাবর সম্পত্তি ৭৫ বছরের পুরনো হলে তা প্রত্ন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এগুলো আগ্রাবাদ জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষণ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান. ব্যবসায়ী হাজী শরিয়ত উল্লাহ তিনশত বছর আগে ঘরের ভিটির তলায় স্থাপন করে ইট সুরকির সুরম্য ভবন নির্মাণ করেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় তার উত্তরসূরিরা ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন। ইতোমধ্যে ভবনটির উপরের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভিটি ভাঙতে গিয়েই একের পর এক মাটির মটকা বের হয়ে আসে। যেগুলো শুধু ভিটির পাকা ফ্লোরের নিচে উপুড় করে স্থাপন করা হয়েছে। ভিটির নিচে অন্তত দুইশ’ মটকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাটির নিচে মটকা পাওয়ার ঘটনায় শুরুতে অনেকে সেখানে গুপ্তধন আছে বলে মনে করেন। তবে খালি মটকা বের করে আনায় এখানে কোনো ধরনের গুপ্তধন থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে ১১৮ হাজী নজু মিয়া লেনের সুরম্য বাড়িটি নির্মাণে তৎকালে ব্যয় করা হয় ২৫ হাজার রুপিরও বেশি অর্থ। প্রায় ছয় গন্ডা জায়গার উপর ৪০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল, বড় বড় পিলার দিয়ে নির্মিত বাড়িটিতে কাঠের বীমের উপর চুন সুরকির বেশ পুরো ছাদ দেয়া হয়েছিল। শরিয়ত উল্লাহ সওদাগর বেশির ভাগ সময় রেঙ্গুনে থাকলেও তার পরিবার পরিজন বাড়িটিতে বসবাস করতেন। তার মৃত্যুর পর বসবাস করতেন তার পুত্র বাদশা মিয়াসহ স্বজনেরা। বাদশা মিয়াও ইন্তেকাল করেছেন। বর্তমানে তৃতীয় প্রজন্মের মোহাম্মদ ফারুক, আবদুল মোতালেব, শুক্কুর মিয়া, নাসির মিয়া, মঞ্জু মিয়া, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন।

তাদের অনেকেরই বয়স ষাটের কাছাকাছি ঠেকেছে। দিনে দিনে বাড়িটির জৌলুশ নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির সময় ছাদ ছুঁইয়ে পানি পড়ে। নানাভাবে সংস্কার করে বাড়িটি ব্যবহার উপযোগী রাখার চেষ্টা করা হয়। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় স্বজনেরা মিলে ভবনটি ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ইতোমধ্যে দেয়াল এবং ছাদসহ ভবনের উপরিভাগ পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। চলছে ভিটিসহ ভিত ভাঙার কাজ। তখনই মাটির দুই ফুটের মতো গভীরে উঁকি দেয় মটকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিনশ বছরের ঐতিহ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ