Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাস্তায় মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানচলাচল

লকডাউনের ৮ম দিন শিথিল চেকপোস্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

লকডাউনের অষ্টম দিনে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা যেমন বেড়েছে, তেমনি তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যান চলাচলও বাড়ছে। গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে রিকশা-ব্যক্তিগত গাড়িসহ নানান যানবাহন ব্যবহার করে মানুষের চলাচল আগের সাতদিনের তুলনায় ছিল অনেক বেশি। চেকপোস্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম ছিল ঢিলেঢালা। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর টহল টিম মূল রাস্তায় থাকলেও অলিগলিসহ এলাকার বাজারগুলোতে মানুষের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি। যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেকপোস্টগুলোতে শিথিলতা দেখা গেছে। বিধিনিষেধের প্রথম দিনগুলোতে যে চেকপোস্টগুলোতে প্রায় প্রতিটি গাড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছিল, গতকাল সেখানে গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়। কিছু কিছু চেকপোস্ট অনেকটাই খালি পড়ে ছিল। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা কিংবা কনস্টেবলদের আশপাশে বসে গল্প করতে দেখা যায়। এসব চেকপোস্ট দিয়ে অবাধে গাড়ি চলাচল করছে। এই মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি।

আমাদের সংবাদদাতারা সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন রাজধানীতে প্রাইভেটকার ও রিকশার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলেজ গেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, কাকরাইল, বাড্ডা ও মতিঝিলে দেখা যায়, এসব এলাকায় রাস্তায় মানুষের চলাচল যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিভিন্ন যানবাহনের চাপ। ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি বের হওয়ায় এসব স্থানের বিভিন্ন সিগন্যালে কিছুটা যানজটও দেখা গেছে। সকালে উত্তরা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। অবাধে চলছে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অফিসের বড় বাসও চলাচল করছে। অনেকে রিকশায় চড়ে নিজ গন্তব্যে ছুটছেন। কেউ কেউ চলাচল করছেন হেঁটেই। এছাড়া বিভিন্ন মোড়ে অসংখ্য মানুষকে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। শুধু উত্তরা এলাকায় নয়, একই চিত্র ছিল রাজধানীর মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, নিউমার্কেট, মিরপুর এলাকায়ও।

জানা যায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে বিধিনিষেধের প্রথমদিন থেকেই চেকপোস্ট বসানো হয়। শুরুর দিনগুলোতে এই চেকপোস্টে কড়াকড়ি ছিল। কিন্তু গতকাল দুটি পোস্টে অবস্থান করে দেখা গেছে, কোনো গাড়িকে পুলিশের চেকের মুখে পড়তে হচ্ছে না। অবাধে গাড়ি চলাচল করছে। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রচুর প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও রিকশা চলতে দেখা গেছে। কিছু কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলতে দেখা গেছে।

তবে গতকাল দিনভর অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগরী এলাকা থেকে এক হাজার ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা। এছাড়াও ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। গতকাল পর্যন্ত রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৬৪ জন।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের অষ্টম দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএমপির ৮টি বিভাগের রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা এলাকায় সরকারি নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় এক হাজার ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। লকডাউনে সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ডিএমপি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক বিভাগ ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। অকারণে ও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়ায় এবং লকডাউনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া আমাদের সারা দেশের সংবাদদাতারা লকডাউনের ৮ম দিনের যে তথ্য পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।

সিলেট ব্যুরো জানায়, কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে শহরের সড়কগুলোতে মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি। গতকাল নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, আগের দিনগুলোর চেয়ে সড়কে যানবহন অনেক বেড়েছে। এদিকে, করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে সিলেটে। সেই সাথে সীমিত হয়ে আসছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। লকডাউন ভেঙে কাজে বের হওয়া মানুষের সংখ্যাও অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যানবাহনও বেড়েছে সড়কে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যানবাহনের চলাচল। লকডাউন মানার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর বিধিনিষেধের ৮ম দিন গতকাল চুয়াডাঙ্গায় কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গার সড়কগুলোতে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি। সকাল থেকে জেলার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তদারকি করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অপ্রয়োজনে বাইরে আসা ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৪১টি মামলায় ৪৩ জনকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ১ জনকে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছে ৪ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ৩ প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউনে পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে রাস্তায় অবাধে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে গতকাল টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্রই দেখা গেছে। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৪টি চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন কার্যকর করতে কাজ করে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। এছাড়া র‌্যাব ও আনসার সদস্যরাও মাঠে টহল দিচ্ছে।

বান্দরবান থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কঠোর লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় গত পাঁচ দিনে ২২৭টি মামলা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৭৬ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরেজমিন দেখা যায়, লকডাউনে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জেলা শহরসহ সাত উপজেলায় প্রশাসন কঠোর রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মোট ১৮টি টিম সরকারি নির্দেশনা পালনের জন্য একযোগে কাজ করছেন। পাশাপাশি তাদের সহায়তা করছেন- সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যেও গতকাল রাস্তায় মানুষের ভিড় বেড়েছে। বাজারে জটলা বেঁধে কেনাকাটা করছে জনসাধারণ। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। রাস্তায় যানবাহন চলাচলও বেড়েছে। মোটরসাইকেলেও একাধিক লোক বসে চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নেমেছে- সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনছার ব্যাটালিয়ান সদস্যরা। কারণে-অকারণে রাস্তায় বের হওয়া মানুষের যাতায়াত ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ১৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছেন। লকডাউন অমান্য করায় ৪৬ জনকে ২৬ হাজার ৮৯০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন, মার্কেট, দোকানপাট এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস। উপজেলা প্রশাসন ২৫ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত লকডাউন অমান্য করায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১২ হাজার ৭৫০ টাকা অর্থদন্ড করেন এবং ৪৩টি মামলা দায়ের করেন।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউন উপেক্ষা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার কারণে ৪ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিককে ৯ শত টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউন বাস্তবায়নে পৌর শহরে প্রবেশের বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে মাইকিং করা হচ্ছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সৈয়দপুরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে নামে প্রশাসন। সৈয়দপুরে লকডাউনে দোকান খুলে রাখায় শহরের ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২ মামলায় জরিমানা করা হয় ৭৪ হাজার টাকা।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লকডাউন

৭ এপ্রিল, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ