বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পাপকর্ম না করেও মানুষ কীভাবে পাপ কর্মের ভাগী হয় তা তিরমিজি শরীফের বরাতে বর্ণিত একটি হাদীস হতে অবগত হওয়া যায়। হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘এই উম্মতের শেষ যুগে মসখ হওয়া (মানুষ কুকুর ও বানর প্রভৃতি আকারে বিকৃত হওয়া) এবং কযফ হবে (আসমান হতে পাথর বর্ষিত হওয়া)।’ কেউ প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি এ অবস্থায় হালাক (ধ্বংস) হতে পারি, যখন আমাদের মধ্যে নেক লোকেরা (সালেহীন) থাকেন।’ হুজুর (সা.) বললেন: ‘হ্যাঁ, যখন খাবাসত এর আধিক্য হবে, অর্থাৎ মন্দ অনাচারের প্রাদুর্ভাবের সময় নেক লোকদের উপস্থিতি কালেও আজাব হতে পারে। পরস্পর নেক কাজের হুকুম করা এবং মন্দ কাজগুলো হতে বিরত রাখার কথাও বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর শাস্তি (আজাব) নাজেল করবেন। কোনো কোনো হাদীস অনুযায়ী, দোয়া করা হবে কিন্তু দোয়া কবুল হবে না। অপর এক হাদীসে আছে, যে দলে কোনো অবৈধ কাজ চালু হয় এবং তারা সে কাজ রোধ করতে সক্ষম অথচ রোধ করে না, তাহলে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তাদের ওপর কোনো আজাব নাজেল করবেন।
একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, একবার আল্লাহ তাআলা হজরত জিবরাইল (আ.) কে নির্দেশ করেন যে, ‘অমুক জনপদকে ধ্বংস করে দাও।’ তিনি আরজ করলেন, ‘সে জনপদে অমুক বান্দার অবস্থান, যে কখনো আপনার নাফরমানি করেনি।’ আল্লাহ বললেন: ‘এ কথা ঠিক, কিন্তু আমার জন্য কখনো তার কপালে বিরক্ত ও ক্ষোভের লক্ষণ দেখা যায়নি। অর্থাৎ আমার অবাধ্যগুলোকে দেখেও তার দুঃখ, ক্ষোভ হয়নি যা নিম্নতর।’ (মেশকাত)
না জায়েজ কর্মকান্ডগুলো দেখার পরও নিম্নতম যাদের দুঃখ কষ্ট হয়নি, ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টির উদয় যাদের মধ্যে হয়নি, তাদের সম্পর্কে বহু সতর্কবাণী এসেছে। অর্থাৎ প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকলেও অন্তত তা দেখে অসন্তুষ্ট ও মনে মনে ঘৃণা পোষণ করা উচিত এবং এটাই ঈমানের সর্বনিম্ন ও দুর্বলতম স্তর।
রসূলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বলেছেন, ‘সেই সত্তার কসম, যার কব্জায় আমার প্রাণ! তোমরা নেক কাজের নির্দেশ করো, লোকদের মধ্যে তাবলীগ করো এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখো। তা না করলে আল্লাহ তোমাদের ওপর আজাব নাজেল করবেন এবং তোমরা সে সময় দোয়াও করবে, কিন্তু দোয়া কবুল হবে না।’
‘আম’ বা গণআজাব সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘কয়েকজন লোক কোনো (নাজায়েজ) কাজ করলে আম বা সাধারণ আজাব আসে না, যতক্ষণ না ওদের সামনে সে কাজ করা হয় এবং তারা তা রোধ করতে সক্ষম কিন্তু রোধ করে না এবং যখন সময় হবে তখন আম ও খাছ অর্থাৎ সাধারণ ও বিশিষ্ট সবার ওপর আজাব নাজেল হবে এবং ভালো মন্দ কেউ এ গণ আজাব হতে রক্ষা পাবে না।’
আজকে সমগ্র বিশ্বে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব মহানবী (সা.)-এর এতদ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রতিফলন নয় কি? এ বৈশ্বিক গণআজাব হতে মুক্তির একমাত্র পথ বিশ্ব স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণ করা, তার আনুগত্য স্বীকার করা, তারই প্রদর্শিত পথের অনুসরণ করা, তওবা-তিল্লাহ করা এবং তারই দিকে নিজেকে রুজু করা।
(হজরত মওলানা যাকারিয়া (রহ.) রচিত ‘আল এতে দালু ফি মারাতিবির রিজাল’ পুস্তক অবলম্বনে) মানুষের অপরাধ ও পাপ-তাপের কারণে, তাদের অপকর্মের দরুন ছোট-বড় সকল প্রকারের বিপর্যয় ও অনাকাক্সিক্ষত, অশুভ ঘটনা ঘটে থাকে যা, তাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যেও থাকে না। (পূর্ব বর্ণিত) আলোচ্য আয়াত সম্পর্কে হজরত ইমাম হাসান (রা.) বলেন, আয়াতটি নাজেল হওয়ার পর রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘সেই জাত সত্তার কসম, যার কব্জায় রয়েছে আমার প্রাণ! কোনো লাকড়ির ক্ষত, আচর অথবা কোনো রগের নড়াচড়া-রক্ত চলাচল কিংবা পদস্খলন, হোঁচট খাওয়া অথবা কোথাও হতে পাথর এসে শরীরে আঘাত করা, এ সব ক্ষত আঘাতের যেসব ঘটনা ঘটে, সবই কোনো পাপের কারণে ঘটে থাকে।’
হজরত আবু মূসা আশ‘আরী (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘কোনো বান্দার ওপর কোনো জখম বা আঘাত এলে অথবা তার চেয়েও কোনো নিম্ন স্তরের লঘু কোনো বস্তু পৌঁছলে তা তারই কোনো কৃতকর্মের ফল।’
হজরত ইমরান ইবনে হোছাইন (রা.) এর শরীরে কোনো কষ্ট অনুভ‚ত হচ্ছিল। লোকেরা সহানুভ‚তি প্রদর্শনের জন্য তাকে দেখতে আসেন এবং তার এই কষ্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে থাকেন। এতে তিনি বললেন, ‘দুঃখ প্রকাশ করার কী আছে? নিশ্চয়ই কোনো পাপের কারণে এ অবস্থা হয়েছে।’
হজরত যাহ্হাক (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে ভুলে যায়, তা কোনো গোনাহের কারণে হয়ে থাকে।’ অতঃপর তিনি বর্ণিত আয়াত পাঠ করেন এবং বলেন যে, ‘কোরআন শরীফ ভুলে যাওয়ার মতো বিপদ আর কী হতে পারে।’
হজরত সিদ্দীকে আকবার এর কন্যা হজরত আসমা (রা.)-এর শির ব্যথার স্থানে হাত রেখে বলতে লাগলেন, ‘আমার পাপ কর্মগুলোর কারণে।’ (অর্থাৎ কন্যার মাথা ব্যথা পিতার পাপের কারণে এ কথাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন)। (দোররে মনসুর ইবনে কাসির)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।