বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম সমগ্র মানবের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, পরিপূর্ণ দ্বীন-ধর্ম, এতে কোনো কিছুর অভাব নেই। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন : ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি এবং (এই পূর্ণতার দ্বারা) তোমাদের প্রতি আমার এনাম (পুরস্কার) পূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমি এ বিষয়ের ওপর সন্তুষ্ট (এবং তাকে পছন্দ করি) যে, তোমাদের দ্বীন (ধর্ম) এবং মাজহাব ইসলাম হোক। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম তোমাদের জন্য আমার পছন্দনীয় এবং তোমাদের দ্বীন মাজহাব।’ (সূরা-মায়েদা) এটি একটি খোদা প্রদত্ত মহা তম্গা, অপূর্ব পুরস্কার। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় মুসলমানদের জন্য আর কী হতে পারে? এ খোদায়ী ঘোষণাকে অস্বীকারকারী কি নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করতে পারে? এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল দ্বীন ও দুনিয়া তথা পার্থিব ও পরকালীন বড়-ছোট প্রয়োজনীয় এবং এমন কোনো বিষয় বাকি রাখেননি, যে সম্পর্কে পরিষ্কার, স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য বিধিবিধান বর্ণনা করেননি, সেগুলোর উপকার ও ক্ষতিকর দিকগুলো বলে দেননি এবং এ সমস্ত বিষয় কেবল জবানি উপদেশ ও কিতাবী বয়ান নয়, বরং আল্লাহর রাসূল বরং রাসূলের ভক্তপ্রেমিক অনুসারী দলগুলো তার উত্তরসূরিরা সেগুলোর ওপর আমল করে বাস্তবায়ন করছেন এবং তা পরীক্ষাও করেছেন। সুতরাং- দ্বীন দুনিয়ার সকল মঙ্গল-কল্যাণ তারই ইত্তেবা অনুসরণের মধ্যে নিহিত। হুজুর (সা.) এর সকল কাজকর্ম, চাল-চলন এবং পদক্ষেপ সাহাবায়ে কেরাম ও মোহাদ্দেসদের বদৌওলতে আজো কিতাবসমূহে সংরক্ষিত আছে। তারা হুজুর (সা.) এর হাদীসগুলোকে কঠোর পরিশ্রম, সাধনা ও ব্যাপক গবেষণা, অনুসন্ধানের মাধ্যমে তন্ন তন্ন করে যাচাই-বাছাই করে গ্রন্থাকারে দুনিয়াবাসীর সামনে রেখে গেছেন। হাদীস সংকলনে মোহাদ্দেসীনে কেরামের এ ভূমিকা বিশ^ ইতিহাসে অনন্য, বিরল। তারা হাদীসের রাবী অর্থাৎ বর্ণনাকারীদের পরিচয় অনুসন্ধান করে যে ‘রিজাল শাস্ত্র’ এবং ‘মোছতালা হাতুল হাদীস’Ñ হাদীসের পরিভাষা প্রণয়ন করেছেন তা আরেকটি বিস্ময়। তাদের সংকলিত হাদীস গ্রন্থাবলির সংখ্যা (প্রসদ্ধি সিহা সিত্তাহসহ) শতাধিক হবে। এসব হাদীসগ্রন্থ পাঠ করে যারা রাসূল (সা.) এর শিক্ষা আমাদেরকে উপহার দিয়ে গেছেন, তারা অতি সৌভাগ্যবান।
তিক্ত হলেও এ কথা সত্য যে, এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী তথা কথিত বুদ্ধিজীবী ইসলামের মহান আদর্শ-শিক্ষাগুলোকে ‘সেকেলে’ আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করেন না এবং যারা এ আদর্শ অনুসরণের কথা বলেন, প্রচার করেন, ইসলামী সুন্নতগুলো অনুসরণের উপদেশ দেন, তাদের নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টার ত্রুটি করেন না। তাদের কাছে ইসলাম ‘বাসি যুগের ধর্ম’, বর্তমান উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগে এ ধর্ম অচল, অকার্যকর ইত্যাদি। আর এ বিষাক্ত স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে চলাটা উন্নত মানসিকতা ও প্রগতির নিদর্শন মনে করা হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপতৎপরতা চালানো অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এ প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবী মহল ইসলামের খুৎ বের করার চেষ্টায় লিপ্ত, সুযোগ পেলে ছোবল মারার জন্য ওত পেতে থাকে। বিশেষভাবে আলেম সমাজ তাদের আক্রমণের প্রধান শিকার হয়ে থাকে।
নানা প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক, রোগ বালাই এবং মহামারি প্রভৃতি মানুষের পরীক্ষা স্বরূপ এবং তাদের অপকর্ম ও পাপাচারের কারণেই এসব নানা দুর্যোগ ঘটছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: ‘এবং যা কিছু বিপদ তোমাদের ওপর (বাস্তবে) আপতিত হয়, তা তোমাদেরই কর্মকাণ্ডের দরুণ আপতিত হয় (এবং প্রত্যেক পাপের জন্য হয় না, বরং বহু পাপ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন) এবং যদি প্রত্যেক গুণাহর কারণে দুনিয়াতে পাকড়াও শুরু হয়, তাহলে জমিনে আশ্রয় নিয়ে তোমরা কোথাও) আল্লাহকে দুর্বল করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত কোনো সাহায্যকারী-মদদগার নেই।’ (সূরা- শোরা)।
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন : ‘স্থল, জলে (অর্থাৎ শুষ্ক ও তরল তথা সমগ্র দুনিয়ায়) লোকদের কর্মকাণ্ডের কারণে ফিতনা-ফাসাদ সংঘটিত হচ্ছে এবং নানা ধরনের বালা, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প ইত্যাদি অবতীর্ণ হচ্ছে, যাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের কোনো কোনো পাপাচারের শাস্তির স্বাদ উপভোগ করান, হতে পারে তারা নিজেদের সে সব কর্মকাণ্ড হতে বিরত হয়ে যায়।’ (সূরা- রূম)।
বালা, মুসিবত, বিপদাপদ মানুষের কৃতকর্মের ফল। উপরে বর্ণিত সূরা শোরা ও সূরা রূমে আল্লাহর এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তাতে তারা বিচলিত হয়ে পড়েন। অনুরূপ আরো বিভিন্ন আয়াতেও একই মর্মের কথা ব্যক্ত হয়েছে। এতদ সম্পর্কে বহু হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিষয়টি এমনভাবে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এতে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে আর কোনো সন্দেহ থাকল না। সূরা শোরা’র আয়াতে বলা হয়েছে : ‘তোমাদের ওপর যে সব বিপদাপদ আপতিত হয় তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল।’ এ সম্পর্কে হজরত আলী (রা.) এর একটি বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হে আলী! রোগ বালাই হোক কিংবা কোনো প্রকারের আজাব হোক অথবা দুনিয়ার যে কোনো বিপদ-বিপর্যয় হোক, যা তোমার কাছে পৌঁছে তা নিজের কর্ম ফল (অর্থাৎ তোমাদের কৃতকর্মের ফল)।’ হুজুর (সা.) এর এ স্পষ্ট ব্যাখ্যার পর আয়াত সম্পর্কে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকে না।
বর্ণিত ঘটনাবলী সরাসরি সাহাবায়ে কেরামের জীবনভিত্তিক। তাছাড়া কোনো কোনো সময় বিপদাপদ, দুর্ঘটনা ও বিপর্যয়গুলোর আরো নানা কারাণ থাকে, যার ফলে আম্বিয়ায়ে কেরাম ও মাসুম শিশুদের জীবনে এরূপ পতিত হওয়ার নানা দৃষ্টান্ত রয়েছে। পাপ না করেও পাপের ভাগী হওয়ারও বহু উদাহরণ দেখা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।