Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এখনই সময় মেরামতের

তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বেহাল

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশের সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতির কারণে দেশে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ইতোমধ্যে পণ্যবাহী ট্টাকের ভাড়া প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে মালিকরা। বর্ধিত ভাড়ার প্রভাব পড়েছে চালসহ তরিতরকারি ও নিত্যপণ্যে। বেহাল সড়কের কারণে একদিকে দুর্ভোগ, অন্যদিকে চালসহ নিত্যপণ্যের চড়া দামে খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী গাড়ী চালকরা বলছেন, দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের মধ্যে সড়ক-মহাসড়কের ছোট ছোট গর্তগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গত ১৩ এপ্রিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে প্রকৌশলীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় অবকাঠামো নির্মাণকাজ লকডাউনে নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন। এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শতভাগ মাস্ক পরিধান করে সংস্কার কাজ চালানোর নির্দেশও দেয়া হয়। ওই সময়ে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে সড়কে গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাস্তা ফাঁকা থাকবে। তাই এসময় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মত গুরুত্বপূর্ণ ফাঁকা সড়কে কোন সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। তবে কঠোর লকডাউনেও দেশের মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

নিয়মিত সংস্কার না করায় সড়ক-মহাসড়কের এ হাল হয়েছে উল্লেখ করে ট্টাকচালক মমতাজ উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশব্যাপী লকডাউনে এখন বন্ধ রয়েছে দূর পাল্লাসহ সব গণপরিবহন। এ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কের খানা-খন্দ সংস্কার করলে টেকসইভাবে করা যেত। মমতাজ অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, সামনের দিনগুলোতে আরো কঠিন সময় পার করতে হবে এসব সড়কে যাতায়াতকারীদের।

তবে এ প্রসঙ্গে এলজিইডি’র চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক প্রকৌশলী তফাজ্জল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বেহাল সড়কের হাল ফেরাতে দরকার পরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনা। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে হবে। তিনি বলেন, এখন লকডাউনে দেশের সড়ক মহাসড়কে তেমন গাড়ীর চাপ নেই। এখন অল্প সময়ে সড়কের সংস্কার কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারত সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি স্তরে এক ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। এজন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে উল্লেখ করে এই প্রকৌশলী বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণেই সারাদেশে এক সাথে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার আইনের শাসন।

এদিকে ঈদুল আযহা এগিয়ে আসছে, ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুমও চলছে। বর্ষাকালে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতোমধ্যে সড়কে কোরবানীর পশু পরিবহন শুরু হয়েছে। এতে মহাসড়কের ওপর চাপ পড়বে। তবে ঈদের আগে যদি তৃতীয় দফায় লকডাউন আর না বাড়ানো হয় তাহলে দেশের মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়লে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।

এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে নকলা ব্রিজ পর্যন্ত মহাসড়কের বেহাল দশা এখনও কাটেনি। ফরিদপুরে গাড়ীর চাপে সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে। গাজীপুর জেলার প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়াও কুমিল্লা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া অংশের ২০ কিলোমিটার, ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ৬ কিলোমিটার, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়ক, শরিয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়ক, সিলেটের আঞ্চলিক সড়কসহ মহাসড়কের বিরাট অংশের বেহাল অবস্থা। অপরদিকে, ভারী বৃষ্টিপাতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল অংশে অসংখ্য খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লাসহ নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার লাখ লাখ মানুষের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দেশের পাইপলাইনখ্যাত মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরকার বিপুল অর্থ ব্যয়ে মহাসড়কটি নির্মাণ করলেও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মহাসড়কের কোথাও দেবে গেছে, কোথাও বা ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে মানসম্পন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমছে। এ অবস্থায় দ্রুতগতির যানবাহন চালকদের গাড়ি চালাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

যোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ কাজের কারণেই সড়ক বারবার ভাঙে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, একটি মহাসড়ক ভালোভাবে নির্মাণ করলে আট বছর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হওয়ার কথা নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের বয়স এখনও আট বছর হয়নি। কিন্তু আরও আগে থেকেই এগুলো ভাঙছে ও মেরামত করতে হচ্ছে। নির্মাণের ২/৩ বছর থেকেই যদি মেরামত করতে হয়, তাহলে কীভাবে সেটা সড়ক হলো!

এদিকে সারাদেশে তিন হাজার পাঁচ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ভাঙাচোরা। যা দেশের সড়ক-মহাসড়কের সোয়া ১৬ ভাগ। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কের ৪৮৭ কিলোমিটার ভাঙাচোরা, যা জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্যরে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ যান চলাচলের অনুপযুক্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে এসব সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে না। এসব রাস্তা মেরামতে আগামী পাঁচ বছরে ২০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (এইচডিএম) বিভাগের প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জরিপ করে ২০২১-২২ সালের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত ২৭ জুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ