বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
এক সময়ের বরগুনা জেলার সর্ববৃহৎ খাল সুবন্দি এখন মরা খালে রূপান্তরিত হয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠির মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ পানিবদ্ধতার কারণে কচুরিপানা ভর্তি খালের পঁচা পানির দুর্গন্ধ, মশা-মাছি ও বিষধর নানা প্রজাতির সাপের কারণে খালের দু’পাড়ে বসবাসরত অধিবাসীরা চরম প্রতিক‚লতার মধ্যে বেঁচে আছেন। আমতলী উপজেলার ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সুবন্ধি খালের দু’পাড়ের ২৬টি গ্রামের ৮০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত পঁচা পানির দুর্গন্ধ সহ্য করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলীর চাওড়া খাল আমতলী পৌরসভার একাংশ, আমতলী সদর, হলদিয়া এবং চাওড়া ইউনিয়নের হৃদয় হিসেবে বিবেচিত। এই খালটি ৩টি ইউনিয়ন এবং আমতলী পৌরসভার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রমত্তা পায়রা নদীর সাথে মিশেছে। এই খালের অন্তত ২০টি শাখা খালের মাধ্যমে ২৬ গ্রামের ৮০ হাজার মানুষের পানি প্রবাহ এবং জীবন-জীবিকা গড়ে ওঠে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে আমতলীর চাওড়া খালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধ নির্মাণের সময় বিপরীত দিকের সুবন্ধি নামক স্থান দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য খোলা রাখা হয়। এই অংশের মাধ্যমে চাওরা খালের পানি গাবুয়া এবং আগুনমুখা নদীতে ওঠা নামা করত। নদীর এই খোলা অংশটিতে ২০০৯ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন তালুকদার এলাকাবাসীর বিরোধিতার মুখে বাঁধ নির্মাণ করে আটকে দেয়। ফলে চাওড়া খালের আমতলী এবং সুবন্ধি অংশে বাঁধ দেয়ায় ভেতরের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
পানি নিষ্কাশনের অভাবে শাখা প্রশাখাগুলো সম্পূর্ণ মরে যেতে থাকে এবং অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানিবদ্ধতায় ফসল হারায় প্রায় ১৫টি গ্রামের কৃষক। মূল চাওড়া খাল কচুরিপানায় ভরে মানুষের সেচ কাজসহ নৌচলাচল সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় মশা মাছি এবং সাপের উপদ্রব। কচুরিপানায় খাল ভরে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। মানুষ তো দূরের কথা কোন পশু পাখিও এই পানি ব্যবহার করতে পারছে না। শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পচে যাওয়ায় সেচ কাজেও লাগানো যাচ্ছে না। এই খালের পঁচা পানি ব্যবহারের ফলে অনেকেই ভোগেন পানিবাহিত নানা রোগে।
চাওড়া খালে এই বাঁধের কারণে আমতলী পৌরসভার ৩ এবং ৭নং ওয়ার্ডসহ আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, মহিষডাঙ্গা, নাচনা পাড়া, পূর্ব আমতলী, আড়–য়া বৈরাগী, চলাভাঙ্গা, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, লক্ষী, রাওঘা, কাঠালিয়া, এমপির হাট, রামজি, চিলা, ঘুঘুমারি, সোনাউটা, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এবং চাওড়া ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা, কাউনিয়া, চন্দ্রা, পাতাকাটা, তালুকদার হাট, লোদাসহ ২৬টি গ্রামের ৮০ হাজার মানুষ পড়েছে মহাবিপদে। খালে কচুরিপানার কারণে আরো ২০টি শাখা খালও মরে কচুরিপানা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় মানুষ শুকনো মৌসুমে পানি সঙ্কটে পড়ে মারাত্মকভাবে। বলইবুনিয়া, হলদিয়ার কাউনিয়া, রামজির খাল, ঘুঘুমারি খাল, আড়–য়াবৈড়াগি খাল, নাচনাপাড়া খাল, চিলা খাল, ছুরিকাটা খাল, লোদা খাল, চলাভাঙ্গা খাল, পাতাকাটা খাল, লক্ষীর খাল এবং কালীগঞ্জের খাল মরা খালগুলোর অন্যতম।
বেলা বরিশালের সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, চাওড়া খালের সমস্যার কারণে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নিত্য দিনকার ব্যবহারযোগ্য পানি সমস্যায় ভুগছে। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে এই খালের পারে বসবাসরত ২৬টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। চাওরা খালের এই বাঁধ এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে সঠিক প্রকল্প গ্রহন জরুরি।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম জানান, চাওড়া খালের কচুরিপানা অপসারণ করে খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং সকল ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ৭৫৬ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, চাওড়া খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য যা করা প্রয়োজন সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।