পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়ছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকায় ভারত থেকে আসা ঢলে পানি বাড়ছে দ্রুত। এতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্তত ২২ থেকে ২৫টি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা ২০ থেকে ২৫ দিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র । পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের আতঙ্কে দিশেহারা নদীতীরের বাসিন্দারা। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা-মেঘনা হয়ে ভাটিতে চাঁদপুর-নোয়াখালী পর্যন্ত নদীভাঙন বিস্তৃত হচ্ছে। প্রতিদিনই নদীর ঘূর্ণিস্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। করাল স্রোতের আঘাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পড়ছে কিংবা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উজানে প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, অনেক এলাকায় অতি ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব, মধ্য-ভারতে অতিবৃষ্টির সাথে সাথেই প্রতিবেশি দেশটি নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে সবধরনের বাঁধ, ব্যারেজ খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। আর বানের পানি গড়াচ্ছে ভাটির দেশ বাংলাদেশের দিকেই।
এ অবস্থায় দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। উত্তরের চর ও নিম্নাঞ্চলে ফল-ফসলের বিস্তীর্ণ জমি, সড়ক রাস্তাঘাট, হাটবাজার, জনবসতি তলিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারী সংক্রমণ যখন ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করছে- কঠোর লকডাউনে কর্মহীন মানুষের মধ্যে বাড়ছে অভাব অনটন, ঠিক তখনই বন্যা ও নদীভাঙনের আতঙ্কে অন্তত ২০ থেকে ২২টি জেলার নদীতীরের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত বছরে ভারতের ঢলে ৩৩টি জেলায় তিন থেকে পাঁচ দফায় বন্যার ক্ষত এখনও শুকায়নি অনেক গ্রাম-গঞ্জ-জনপদে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) জানিয়েছে আগামী ২৪ ঘন্টা ধরলা, তিস্তা এবং যমুনার পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে গেলেই সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এছাড়া ভারত থেকে আসা ঢলে সিলেট, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জেও বন্যার প্রভাব পড়তে পারে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে দেশের ১০৯টি পর্যবেক্ষণাধীন সমতল স্টেশনের মধ্যে ৫৬টিতে পানি বাড়ছে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের ২৫টি জেলার নিম্নাঞ্চলে এবার বন্যা হতে পারে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা ২০ থেকে ২৫ দিন স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে ৫জুলাই বৈঠক করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে ঝুঁকিতে থাকা এলাকার জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যার বেশি ঝুঁকিতে থাকা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জামালপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকেরা সভায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। সভায় জেলা প্রশাসকেরা জানান, প্রতিটি জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বন্যার প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়গুলো বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক ও কক্ষগুলোর চাবি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকা স্পিডবোট ও ট্রলার প্রস্তুত আছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বরাদ্দ করতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে করোনা যাতে না ছড়িয়ে পড়ে, সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়। বন্যাকবলিত এলাকার সবাই যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়, কোনো পরিবার যাতে বাঁধে আশ্রয় না নেয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এই মুহূর্তে বন্যার বড় কোনও ঝুঁকি নেই। তবে আমরা প্রস্তুতি রেখেছি। আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। জরুরি খাদ্য সরবরাহে পর্যাপ্ত টাকা ও খাদ্য-সামগ্রী জেলা প্রশাসকদের কাছে দেওয়া আছে। পানি বাড়তে থাকলে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার প্রস্ততিও আছে। ডিসিদের সেভাবে তৈরি থাকতে বলেছি। বন্যায় যাতে গবাদিপশু- বিশেষ করে কোরবানির পশুর কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। করোনার মধ্যেও প্রকৌশলীরা দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন জেলায় দিনরাত কাজ করছেন।
বন্যা ও নদী ভাঙ্গার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙ্গণ প্রতিরোধে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত তিন উপজেলা উলিপুর, রাজারহাট ও ভুরুঙ্গামারিতে প্রতি পরিবারকে তিন হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের অন্তবর্তী পূর্বাভাসেও বন্যার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। গত রোববার আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসে অতিবৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকায় কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা দু’টি বর্ষাকালীন লঘুচাপ এবং এরমধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরফলে উজানে এবং দেশের অভ্যন্তরে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ভাটির দেশ বাংলাদেশে মাঝারি অথবা বড় আকারের বন্যার কারণ উজানের ঢল। প্রধান নদ-নদীসমূহের মূল অববাহিকা এলাকা (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) হচ্ছে উত্তর-পূর্ব ও মধ্য-ভারত, হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসহ নেপাল, তিব্বতসহ চীন। নদ-নদীভেদে প্রায় ৭৫ থেকে ৯২ শতাংশ পানি আসে উজানের এসব অঞ্চল থেকে। এরমধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারত তথা আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মিজোরাম, সিকিম, হিমালয় পাদদেশীয় ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে প্রধান নদ-নদীসমূহে ঢল-বানের পানি গড়ায় গড়ে ৮০ শতাংশ। এবার বর্ষার মৌসুমী বায়ুর আগমন (গত ৬ জুন), বিস্তার ও সক্রিয়তা বেশ আগেভাগে। বর্তমানে মৌসুমী বায়ু সক্রিয়। অনেক জায়গায় জোরালো। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর থেকে বাংলাদেশ, ভারতের ব্যাপক অংশ ও নেপাল অভিমুখে আসছে প্রচুর মেঘমালা, জলীয়বাষ্প। এরফলে উজানে ভারতে অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গতবছর বন্যাকালেও আবহাওয়ার একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে।
বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব ও মধ্য-ভারত, তিব্বতসহ চীন, নেপালসহ হিমালয় অঞ্চলে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির ঘনঘটা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় আগামী দুয়েক সপ্তাহে এ অঞ্চলে বিশেষত নেপাল, ভারতের বিহার, মধ্য প্রদেশ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, সিকিম অঞ্চলে বর্ষণের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল বন্যা কবলিত হতে পারে।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, ভারতের ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢলের পানিতে ইতোমধ্যে তলিয়ে যায় সিলেটের গোয়ানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ডাউকি এবং সারী নদী দিয়ে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত রবিবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ইতোমধ্যে উপজেলার জাফলং চা-বাগানসহ কয়েকটি রাস্তা-ঘাটের উপর দিয়ে প্রবল স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিছুটা। এদিকে সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারী বর্ষণ কয়েকদিন অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি বেড়ে তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীসহ সীমান্ত এলাকার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে জেলার চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে যমুনার ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় নদী তীরের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, গত কয়েক দিনের বর্ষন আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপদসীমার ছুই ছুই করছে। ধীরে ধীরে তিস্তা ভয়ংকর রূপ ধারন করছে। ধরলার পানিও প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চর প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এই ভাঙনে নদীর পাড়ের মানুষ আতঙ্কিত রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারতের ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলাসহ ১৬টি নদ নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদী সংলগ্ন ৩০টি চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পাট, সবজি ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। কয়েকদিন ধরে এসব ক্ষেত ডুবে থাকায় ফসল নষ্টের আশঙ্কা করছে কৃষকরা। দ্রুত পানি বাড়ায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি চরের নিচু এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। রাজারহাট উপজেলার গাবুর হেলান, খিতাবখা, উলিপুর উপজেলার দরিকিশোরপুর, থেতরাই, কিশোরপুর ও হোকডাঙাসহ কয়েকটি পয়েন্টে তিস্তা নদী ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুধকুমার নদের ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তার ১২টি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে খরস্রোতা তিস্তা নদীর করালগ্রাসে ৮০ টি পরিবার তাদের বসতভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নীচে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াইপিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ক্লিনিক গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর এখন হুমকীর মুখে রয়েছে। যে কোন মহুর্তে এসব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরাম পুর ইউনিয়নের হরিমাপুর পদ্মারচর এলাকায় শুরু হয়েছে নদীভাঙ্গন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভিটে মাটি সব হারিয়েছে।
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, জেলার ধামইরহাটের আত্রাই নদীর বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। প্রায় দেড়শো মিটার জায়গা ধসে যাওয়ার যে কোন মূর্হুতে বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। এতে লোকালয় এবং শত শত সবজি খেত পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। সেই সাথে উপজেলা থেকে উপজেলা সড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আশংকা রয়েছে। এক্ষুনি ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি ছিল ৫২.৩৫ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্রীজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতের ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পচ্ছে। তবে এখনও টাঙ্গাইল অংশে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে চরাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের চরাঞ্চলের কষ্টাপাড়া, ভারকুটিয়া, গাবসারা, গোবিন্দাসীসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, বীজতলা, সবজি, পাট, তিলসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। হুমকিতে রয়েছে ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
শেরপুর জেলা সংবাদাতা জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার পানি কমেছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। তবে শেরপুর সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি বন্দি মানুষ দূর্ভোগের মধ্যে আছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাড়িঘর, মাছের পুকুর, আউশ ধানের আবাদ, আমন বীজতলা ও শাকসবজীর আবাদ।
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, অবিরাম বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তির জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলছে।
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের বিশুনাথপুর, দক্ষিণ ও উত্তর কাউজানি গ্রাম দৌলদিয়া ইউনিয়নের ৭নং ছত্তার মেম্বরপাড়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তিল, ধান ও বাদাম চাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দূরর্গত এলাকায় চাষিদের কোন খোজ খবর না নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সংবাদদাতা জানান, সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়ন এলাকার মহানন্দা নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা এলাকার মানুষ। টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে মহানন্দা নদীতে। পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের কৃষিজমি ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রাম থেকে কয়েক মিটার দূরেই ভাঙ্গনের তাণ্ডবলীলা দেখা দিচ্ছে মহানন্দায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।