পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অগ্রহায়ণের শুরুতে দেশের উত্তরাঞ্চলে বাড়তে শুরু করেছে শীতের দাপট। পুঞ্জিকার পাতা অনুযায়ী এখন শীত এসে গেছে। রাজধানীতে শীতের আমেজ বিরাজ করলেও উত্তরাঞ্চলে প্রচন্ড শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। এতে তিস্তা, পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। চরাঞ্চলে ধু ধু ফাঁকা মাঠ হওয়ায় হিমেল বাতাস বেশি। সকাল থেকে কুয়াশা ও কনকনে শীতে নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ গরম কাপড়ের পাশাপাশি খড়কুটো আগুনের আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যা থেকে কুয়াশা ও শিশির বিন্দু শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলো দেখা গেলেও শীতের মাত্রা তেমন একটা কমছে না। গরিব সাধারণ মানুষ ও দিনমজুররা পড়ে গেছেন চরম বিপাকে।
আবহাওয়া অফিস জানান, প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। এরই মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ ডিগ্রিতে। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমেছে। তবে কখনো চরাঞ্চরের তাপমাত্রা পরিমাণ করা না হলেও গ্রামের চেয়ে চরাঞ্চলে তাপমাত্রা আরো কম।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নার্থ রায় জানান, গত ২৯ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমালয়ের হিমেল বাতাসের কারণে এই তাপমাত্রা উঠানামা বেশি করে এবং বেশির ভাগ দিনের বেলাতেও শীতের পাশাপাশি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে।
রংপুরের আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, নভেম্বরের শুরু থেকেই উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা নিম্নগামী হতে শুরু করেছে। দিনের তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করলেও রাতের তাপমাত্রা নেমে আসছে ১৫ থেকে ১২ ডিগ্রিতে। তবে চরাঞ্চলে এ তাপমাত্রা আরো কম। এ অবস্থায় শীতকষ্টে ভুগতে শুরু করেছে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষ।
কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের আবহাওয়া এক পর্যবেক্ষক জানান, ডিসেম্বর মাসে দুটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। সেসময় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, করতোয়া, ঘাঘটসহ প্রায় দুই শতাধিক নদী নদ-নদী বেষ্টিত উত্তরাঞ্চল। এসবের মধ্যে যমুনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা নদীতে চরাঞ্চলের সংখ্যা প্রায় এক দেড় হাজারের বেশি। এ চরাঞ্চলগুলোয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। যার বেশিরভাগই হতদরিদ্র গরিব কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক শ্রেণি। বন্যায় বার বার দুর্দশায় পড়তে হয়। আবার নদ-নদীর ভাঙনের শিকার এসব পরিবারে আয়ের তেমন উৎস নেই। তাই শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কিনতে পারেন না। ফলে প্রতিবছর শীত এলেই তাদের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়। রংপুরের কুড়িগ্রামের উলিপুরের থেতরাই, গুনাইগাছ, গরাইপিয়ার, রমনা, চিলমারী চরাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চরম দূরবস্থায় মধ্যে রয়েছে। এখন খড়কুটো দিয়ে ঠান্ডা নিবারন করলেও সামনে আরো বেশি ঠান্ডা পড়তে সে আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর চরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে গেছেন। একজন জানালেন, কুয়াশার কারণে সন্ধ্যার পর পরই ঘরে ঢুকতে হয়। পীরগাছা উপজেলার শিবদেব চর, জোয়ানের চর, রহমতের চরসহ শতাধিক চরে এক লাখ মানুষ বসবাস করেন। এসব চরের মানুষের পেশা কৃষি, গবাদি পশু পালন, মাছ ধরা। প্রতি বছর বন্যা, খরা ও শীত মোকাবিলা করে অতিকষ্টে দিনযাপন করেন তারা। এবার আগাম শীতে কাবু হয়ে গেছেন। মতিউর রহমান নামের একজন বলেন, প্রতিবছর বন্যা আর শীত এলেই আমাদের দুর্ভোগ বাড়ে। এবারও শীত পড়তে শুরু করেছে কিন্তু গরম কাপড় নেই বললেই চলে। চরে তেমন কাজকর্ম নেই, তাই রোজগারও কম। এ অবস্থায় সরকারিভাবে কিছু কম্বল দেওয়া হলে মানুষ উপকৃত হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলের পাড়ের মো. নামদেল আলীর স্ত্রী মোছা. মিনা বেগম বলেন, আমাদের নিজেদের কোনো ঘরবাড়ি নেই। অন্যের বাড়িতে থাকি। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। সে কাজও সবসময় হয় না। ছোট দুটি ছেলে। তাদের শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই।
চরাঞ্চলের ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি বছর উত্তরাঞ্জলে তীব্র শীতের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। তবে তাদের বেশিরভাগই গ্রামগঞ্জের হতদরিদ্রদের গরম কাপড় দেন। চরাঞ্চলে অতিদরিদ্রদের তারা কিছুই দেন না। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দলের নেতা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী কিছু কম্বলসহ কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। কিন্তু দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে দূরত্ব এবং সময় বেশি লাগার জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় না।
জানতে চাইলে তিস্তার চরের একাধিক হতদরিদ্র জানান, তারা এখন যে শীত পড়ছে তাতেই অস্থির; সামনে আরো বেশি ঠান্ডা পড়লে শীতবস্ত্রের অভাবে বিপর্যয়ে পড়বেন। এখন সময় থাকতে চরাঞ্চলগুলোর দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতবন্ত্র বিতরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।