বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কিয়ামতের বড় নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন হলো দাজ্জালের আগমন ও তার ধ্বংস হওয়া। হাদীসের কিতাবসমূহে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে দাজ্জালের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক নবীই তাঁর উম্মতগণকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের কতিপয় চিহ্ন বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসে মুতাওয়াতির ও উম্মতে মোহাম্মাদীর ‘ইজমা’ বা ঐক্যমত্য দ্বারা দাজ্জালের বিষয়টি প্রমাণিত।
এ পর্যায়ে ‘দাজ্জাল’ শব্দের আভিধানিক ও ব্যবহারিক অর্থ জানা একান্ত দরকার। নিম্নে এর বিশদ আলোচনা সন্নিবেশ করা হলো (ক) ‘দাজ্জাল’ শব্দের অভিধানগত অর্থ প্রতারক, মিথ্যাবাদী, সত্য মিথ্যার মিশ্রণকারী। অভিধানের এ দৃষ্টিকোণ থেকে উপরোল্লিখিত বিশেষণযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে দাজ্জাল বলা যেতে পারে।
(খ) ‘দাজ্জালুন’ শব্দের মূল অর্থ হলো মিশ্রিত করা। যেমন কোনো বস্তু মিশ্রিত ও খলত-মলত হলে আরবিতে ‘দাজ্জালা’ বলা হয়। এখানে দাজ্জাল বলতে মিথ্যাবাদী ও একচোখ কানা ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। সে মিথ্যা ও যাদুকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করে দিবে। (লিসানুল আরব : ১২/২৮৪-২৮৫)। (গ) দাজ্জাল অর্থ মিথ্যাবাদী। হাদীস শরীফে উক্ত হয়েছে : আপনি কি জানেন দাজ্জাল কি? দাজ্জাল হলো পথ ভ্রষ্টতা, কুফর ও ফিতনার উৎস। নবীগণ উম্মতদেরকে তাঁর সম্পর্কে সচেতন করেছেন ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
(ঘ) কেউ কেউ বলেন : দাজ্জাল যেহেতু মানুষের সামনে সত্য মিথ্যার মিশ্রণ ঘটাবে, তাই দাজ্জাল নাম তার জন্য নির্ধারিত। (ঙ) আবার কারো মতে ‘দাজলুন’ শব্দ হতে দাজ্জাল শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ সুদক্ষ মিশ্রণকারী। সে দক্ষতার সাথে মিথ্যা ও যাদুর সাথে সত্যকে মিশ্রিত করে দিবে। (শরহে আকিদায়ে সিফারানিয়্যাহ : ২/৮৬, ৯৯)।
মোট কথা দাজ্জাল হলো এক বিশেষ কাফির ব্যক্তি। হাদীসসমূহে বিশ^াস ও নির্ভরতার সাথে যার আলোচনা বর্তমান। এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হলো এই যে, সে ইয়াহুদী বংশোদ্ভূত হবে। সে খোদা হওয়ার দাবি করবে। তার দু’চোখের মাঝে কাফ্, ফা, রা, অর্থাৎ কাফির বা কুফর লেখা থাকবে। তার ডান চক্ষু দৃষ্টিহীন হবে। তার ডান চোখে আঙ্গুরের ন্যায় উঠন্ত দানার মতো থাকবে। ভূপৃষ্ঠে সে চল্লিশ দিন বিচরণ করবে।
তবে সে চল্লিশ দিনের প্রথম দিনটি এক বছরের সমান লম্বা হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে। তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের সমপরিমাণ দৈর্ঘ হবে। বান্দাহগণকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তার হাতে বিভিন্ন অলৌকিক বিষয় ও যাদুর কারিশমা প্রকাশ করবেন। সে মানুষকে হত্যা করে আবার জীবিত করবে। আসমান তার নির্দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। সে ভূমিকে নির্দেশ দিলে ভূমি উদ্ভিদ, ফল-ফসল উদগিরণ করবে।
জনবসতিহীন, বিরাম স্থান দিয়ে গমনকালে সে স্থানের প্রতি সে নির্দেশ দিবে : তুমি তোমার গোপন সম্পদের ভাণ্ডার বের করে দাও। ভূমি তার সুপ্ত ভাণ্ডার বের করে দিবে। অতঃপর সম্পদের সে ভাণ্ডার মধু মক্ষিকার মতো তার পেছনে পেছনে গমন করতে থাকবে। এভাবে চলতে চলতে দাজ্জাল পূরা ভূপৃষ্ঠ মন্থন করে ছাড়বে। কেবল মক্কা-মদীনা ছাড়া পৃথিবীর এমন কোনো শহর নগর থাকবে না, যেখানে দাজ্জালের পদচারণা হবে না। শুধুমাত্র উক্ত দুটি নগরে ফিরিশতাদের প্রহরা থাকার কারণে সে প্রবেশ করতে পারবে না।
বস্তুত : দাজ্জালের ফিতনা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফিতনা হিসেবে বিবেচিত হবে। দাজ্জাল সম্পর্কে হযরত কাতাদাহ (রা.) বলেন; হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : দাজ্জালের দু’চোখের মাঝে কাফ-ফা-রা অর্থাৎ কাফির লেখা থাকবে। (সহীহ মুসলিম-২/৪০০)।
বর্তমান সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে দাজ্জালের আগমন ঘটবে। প্রথমে সে নবুওয়তের দাবি করবে। সেখান হতে সে ইস্পাহান যাবে। ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী তার অনুসারী ও অনুগামী হয়ে যাবে। এবার সে নিজের দল ভারী হয়ে গেছে বলে মনে করবে এবং তার পর সে খোদা বলে দাবী করতে থাকবে। সে নিজের বিশাল বাহিনী সঙ্গে করে ভূপৃষ্ঠে ফিতনা ও অশান্তি সৃষ্টি করবে। অনেক পথভ্রষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও রাষ্ট্র-শক্তি তার সাথী ও সহযোগী হয়ে যাবে। আল্লাহপাক দাজ্জালের ফিতনা হতে ঈমানদারগণকে হেফাজত করুন, আমিন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।