বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিলো।
তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন্ জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিলো। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সূরা বাকারার এই আয়াতটি- ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’।
যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী (সা.)বললেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহ ইবনে হিব্বান : ৭৮৪)।
গত আলোচনা ও আজকের আলোচনার দুই ঘটনায় নবী (সা.) এর সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দুবৃর্ত্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ। এ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসীর ফজিলত সংক্রান্ত মোট তিনটি হাদীস উল্লিখিত হয়েছে। এই হাদীসগুলো থেকে প্রতিদিন আটবার এই আয়াত পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে- সকাল-সন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ও শোওয়ার সময়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ যদি এই মোবারক আয়াতের অর্থ-মর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সাথে তা পাঠ করে তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত বরকতের বিষয় হবে।
কোরআন মাজীদের তিলাওয়াত যেহেতু একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত তাই অর্থ না বুঝলেও তা অর্থহীন নয়। অর্থ না বুঝলেও তিলাওয়াতের সওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু এই মাসআলার অর্থ কিছুতেই এই নয় যে, কোরআন মাজীদের অর্থ বোঝার চেষ্টা না-করা কাম্য বা অর্থ বোঝার চেয়ে অর্থ না-বোঝাই শ্রেষ্ঠ! কোরআন মাজীদের বহু আয়াতে এই মোবারক কালামের অর্থ-মর্ম বোঝার এবং গভীর অভিনিবেশ সহকারে তা পাঠ করার নির্দেশ আছে। তাই কোরআন মাজীদের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষার মতো কোরআনে কারীমের অর্থ-মর্ম বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা এবং চিন্তা-ভাবনার সাথে তা তিলাওয়াত করা কাম্য।
এতে যেমন মুমিনের জ্ঞান ও ঈমান বৃদ্ধি পায় তেমনি তার মন-মস্তিষ্ক, আত্মা ও হৃদয় কোরআনের নূরে নূরানী হয়ে ওঠে। কোরআনে কারীমের একটি আয়াত- আয়াতুল কুরসীর অর্থ-মর্ম সম্পর্কেও আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব, কী স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, কী অসাধারণ প্রতাপান্বিত উপস্থাপনায় এ আয়াতে মহান আল্লাহর পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার মা‘রিফাত ও পরিচয় লাভের চেয়ে বড় জিনিস মানুষের জন্য আর কী হতে পারে? এই জ্ঞানই তো সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান, আর এ বিষয়ে অজ্ঞতাই সবচেয়ে ভয়াবহ অজ্ঞতা।
যে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে তার কাছে তার নিজ সত্তার, তার চারপাশের সৃষ্টিজগতের এবং এখানে ঘটে চলা সকল ঘটনার সূত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। জীবন-মৃত্যুর তাৎপর্য বোঝা সহজ হয়ে যায়। জীবনের লক্ষ্য নিখুঁতভাবে জানার এবং সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার সকল পথ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা জেগে ওঠে। এভাবে আল্লাহর স্মরণ ও পরিচয় মানুষকে দান করে তার আত্মপরিচয়। তাকে সচেতন করে তার নিজের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে।
আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ.-এর বক্তব্য অনুসারে এই মহিমান্বিত আয়াতে দশটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্য রয়েছে। এই দশ বাক্যের মূল বিষয়বস্তু, তাওহীদ। আল্লাহ তাআলার মহান গুণাবলি এ আয়াতে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তা উপলব্ধি করার পর মুমিনের সর্বসত্তা থেকে ঐ পরম সত্যের ঘোষণাই উৎসারিত হয়, যার মাধ্যমে এই মহিমান্বিত আয়াতের সূচনা- ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হু’ আল্লাহ- তিনি ছাড়া কোনো মা‘বুদ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।