বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আয়াতুল কুরসী। এই মোবারক আয়াত দিনে-রাতে বারবার পড়ার নির্দেশনা হাদীস শরীফে আছে। মুমিনের কর্তব্য, এই পবিত্র আয়াতকে প্রতিদিনের অজিফা বানিয়ে নেয়া। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.)বলেছেন : প্রতি ফরয নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী : ১০০)। এই হাদীস শরীফ থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পড়ার নির্দেশনা পাওয়া গেল।
শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়া প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.)আমাকে রমজানে যাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের খেজুর) দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (রাতে) এক আগন্তুক এসে সেই (স্তূপিকৃত) খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে হাজির করব। সে বলল, দেখুন, আমি এক অভাবী, প্রয়োজনগ্রস্ত ও পরিবারের ভারগ্রস্ত লোক! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে নবী (সা.) বললেন, আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দির কী হাল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলায় আমার দয়া জেগেছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি! নবী (সা.) বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে; সে আবারো আসবে।
ফলে আমার জানা হয়ে গেল, রাসূল (সা.) যখন বলেছেন আসবে, অবশ্যই সে আসবে। আমি তার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে সে এসে সেই স্তূপিকৃত খাদ্যবস্তু থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর কাছে হাযির করবই। সে তখন বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো অভাবী লোক, পরিবারের ভারগ্রস্ত, আর আসব না।
তার এ কথায় আমার দয়া হলো। ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার বন্দির কী খবর? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার প্রচণ্ড অভাবগ্রস্ততা ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলছিল, তাই আমার দয়া হয়েছে, তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারো আসবে।
তাঁর এ কথায় তৃতীয় রাতেও আমি অপেক্ষায় রইলাম। একপর্যায়ে সে এসে মুঠি ভরে খাদ্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, এবার তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাযির করেই ছাড়ব। এ নিয়ে তিনবার ঘটল যে, তুমি বল, আসবে না, কিন্তু আবারো আস। সে তখন বলল, আমাকে ছেড়ে দিন।
আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। বললাম, কী সেই কথা? সে বলল, যখন বিছানায় যাবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়বেনÑ ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ভিড়বে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দি কী করল? বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে বলল যে, আমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথাগুলো কী? বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। সে বলল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। সাহাবীগণ তো কল্যাণের ব্যাপারে খুবই লালায়িত ছিলেন। নবী (সা.) বললেন : শোন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে ডাহা মিথ্যুক। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা! তুমি কি জান পরপর তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন : সে ছিল এক শয়তান। (সহীহ বুখারী : ২৩১১)।
এই হাদীস থেকে শয়তানের বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয়েও অনেক কিছু জানা যায়। যেমন যেসকল খাদ্যবস্তু দ্বারা সদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায় (খেজুর, যব, পনির, কিশমিশ, গম) ইত্যাদি ঈদের দিনের আগে সংগ্রহ করা এবং কাউকে তা সংরক্ষণ ও বণ্টনের দায়িত্ব দেয়ার বৈধতা। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, রাতে শোবার সময় আয়াতুল কুরসী পাঠের সুফল ও ফযীলত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।