হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মেহেদী হাসান পলাশ
কোরবানির ঈদ আমি সাধারণত ঢাকায় উদযাপন করে থাকি। এবারেও তার অন্যথা ছিল না। এবারের ঈদের জামাতে ঘর থেকে বেরুনোর আগ মুহূর্তে প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন বুঝলাম আরো দেরি হলে জামাতে অংশ নিতে পারবো না তখন দুটি ছাতা নিয়ে ছেলেসহ মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম। বাইরে তখন বৃষ্টি এতটা প্রবল যে, ছাতা দিয়ে কুলোবে না জেনেও বের হতে হলো। বাসা থেকে নিচে নেমে দেখি গলিতে আধ হাঁটু পানি। আমাদের গলিতে ছোটখাটো বৃষ্টিতে পানি জমে না। তাই এর প্রস্তুতি ছিল না। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল, সমস্ত পানি লাল হয়ে গেছে। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি, ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে আসার পর কোরবানি করা হয়। কিন্তু ঢাকায় আসার পর ব্যতিক্রম দেখছি। কিছু মানুষ, বিশেষ করে যারা একাধিক কোরবানি করেন তারা নামাজের আগেই কোরবানি শুরু করেন। জিজ্ঞাসাও করেছি, তাদের উত্তর- সৌদি আরবে কোরবানি শুরু হওয়ার পর থেকেই কোরবানি করা যায়। অথচ হাদিসে আছে, যারা নামাজের আগে কোরবানি করে, তারা যেন আবার কোরবানি করে নেয়। আমি যেহেতু ইসলাম বেত্ত্বা নই, তাই এ নিয়ে তর্ক করিনি।
যাই হোক, কোরবানি একটি উৎসব। বাড়ির বড়রা কোরবানি করেন, অন্যরা সে কাজে সাহায্য করেন, উৎসাহ নিয়ে দেখে। তারপর গোশত কাটা, বণ্টন, বিলির কাজে পরিবারের সকলে অংশ নেয়। কোরবানির ঈদ আনন্দের অনেকটা অংশজুড়ে থাকে এ সংক্রান্ত কাজ। তাই বাংলাদেশের মুসলমানরা বাড়ির আশপাশেই কোরবানি দিয়ে থাকে যাতে পরিবারের সকলে তাতে অংশ নিতে পারে, উপভোগ করতে পারে। সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর ঈদের আগে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করার জন্য জনগণকে উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে সে পরামর্শ খুব একটা পালিত হয় না। এবারেও সিটি কর্পোরেশন ঈদের আগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানকে কোরবানির স্পট ঘোষণা করে সে সকল স্থানে কোরবানি করতে পরামর্শ দিয়েছিল কিন্তু শতখানেক স্পটে ৫০ লক্ষাধিক পশু কোরবানি কিভাবে সম্ভব সেটা তারা বিবেচনা করে দেখেনি। তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে এ বছর সিটি কর্পোরেশনের পরামর্শ বিবেচনার সুযোগও রাজধানীবাসীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঢাকায় সাধারণত বাড়ির পাশের গলি রাস্তায়, নিচতলায় পশু কোরবানি করা হয় এবং কোরবানির পশুর রক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নর্দমায় পাঠানো হয়। এরপর উপগলি হলে রাস্তায় চট বিছিয়ে বা বাসায় নিচতলায় গোশত তৈরির কাজ চলে। আমাদের মতো যেসব এলাকার রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গিয়েছিল সেসব এলাকার রাস্তায় এবার কোরবানি করারও সুযোগ ছিল না। ফলে বাসার নিচতলায় বা গ্রাউন্ড ফ্লোরে অথবা বাসা সংলগ্ন একটু উঁচু জায়গায় পশু কোরবানি করে তার রক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া হয়। এই রক্তই গড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে মিশে লাল রং ধারণ করে। উপায়ান্তর না দেখে কোরবানির পশুর রক্ত মেশানো আধ হাঁটু লাল পানি মাড়িয়ে ছেলেকে নিয়ে মসজিদে গিয়ে দেখি মাত্র মিনিটখানেক আগেই জামাত শেষ হয়েছে। অগত্যা রিকশা না পেয়ে অন্য অনেকের মতো একই রকম পানি মাড়িয়ে কিছুটা দূরের মসজিদে গিয়ে ৮টার জামাতে নামাজ শেষ করে মসজিদের নিচে নামতেই চোখ কপালে। প্রথম জামাত শেষে বাড়িতে ফিরে অনেকেই এর মধ্যে তাদের কোরবানির পশু জবাই করে ফেলেছে। বিপুলসংখ্যক কোরবানির পশুর রক্ত বৃষ্টির পানিতে মিশে এমন গাঢ় রং ধারণ করেছে যে তা পানি না রক্ত বোঝা ভার। কোরবানির পশুর রক্ত মেশানো এমন টকটকে লাল পানিতে পা ডোবাতে কিছুটা ইতস্তত হয়েছে, তবু উপায়ান্তর না দেখে তা উপেক্ষা করেই বাসায় ফিরতে হয়েছে। আমাদের এদিকে দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি হয়। যেহেতু সকালেই রাজধানীর ড্রেনেজ সিস্টেম ফেল করে সেহেতু যত বৃষ্টি হয়েছে, রাস্তায় পানির উচ্চতা তত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সাথে যত কোরবানি হয়েছে ততই বেশি রক্ত পানিতে মিশেছে। ফলে উপর থেকে দেখলে রাস্তা বা গলিগুলো লাল পানির নালা ও খাল বলে মনে হয়েছে। রাজধানীর পুরাতন ঢাকায়, বিশেষ করে শান্তিনগরে যেখানে সবসময় বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয় সেখানে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । কোরবানির আগে সিটি কর্পোরেশন যদি ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কার ও পরিচর্যা ঠিক মতো করতো তাহলে এই দুর্ভোগ নগরবাসীকে পোহাতে হতো না।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রিন্ট মিডিয়ায় ৩ দিনের সাধারণ ছুটি থাকলেও সে সবের অনলাইন ভার্সন, টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু থাকে। সেই সুবাধে ঢাকা ট্রিবিউন নামের একটি অনলাইন পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদের শিরোনাম করা হয় ‘Rivers of blood in Dhaka’. অর্থাৎ ঢাকায় রক্তের নদী। এরপর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর সংবাদ আসতে থাকে। দি হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার এ সংক্রান্ত সংবাদ শিরোনাম ছিল- ‘Civic mess on Eid: A 'river of blood' ran through Dhaka after heavy rainfall.’ ইন্ডিয়া টুডের শিরোনাম- ‘How Dhaka streets transformed into blood streams after Eid sacrifices and rain.’ তাদের সাব হেডিংটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়- ‘ÔHorrific streams of blood were seen on Dhaka streets after Eid-al-Adha celebrations on Tuesday.’ এনডিটিভির শিরোনাম- ‘Rivers of Blood On The Streets of Dhaka After Eid Animal Sacrifice.’ ইত্যাদি। এরপর দিনের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনামেও একই প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। গার্ডিয়ান পত্রিকার শিরোনাম- ‘Rivers of blood flow on streets of Dhaka after Eid animal sacrifices.’ ইন্ডিপেন্ডেটের শিরোনাম- ‘Blood runs through streets of Dhaka after mixing with monsoon rains during Eid al-Adha celebrations.’ বিবিসির শিরোনাম- ‘Dhaka flooding: Why are there ‘rivers of blood’ at Eid?’ ওয়াশিংটন পোস্টের শিরোনাম- ‘Rivers of blood flow through the Bangladeshi capital.’ মেইল অনলাইনের শিরোনাম- ‘Dhaka’s streets turn to rivers of blood as Muslims use car parks and garages to slaughter animals for Eid al-Adha.’ আরটি নিউজের শিরোনাম- ‘Rivers of blood: Streets of Dhaka turn red after Eid animal sacrifices..’ মিডডে ডট কমের শিরোনাম-‘Sickening! Streets of Dhaka turn into ‘rivers of blood’ during Bakri Eid.’ একইভাবে সিএনএন, এবিসি নিউজ, দ্য মিররসহ বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাছাকাছি শিরোনামে সংবাদ পরিবেশিত হয়।
খবরের ভেতরে যাই থাকুক শিরোনামগুলো যথেষ্ট আপত্তিকর এবং ভুল বার্তা বহন করেছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা এ সকল পত্রিকায় শিরোনামে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বা ঢাকার রাস্তার বর্ণনা দিতে গিয়ে ‘rivers of blood’’ বা ‘রক্তের নদী’ বাগধারা ব্যবহার করেছে। ‘rivers of blood’’- ‘রক্তের নদী’ যে কোনো মানুষের জন্য একটি উদ্বেগজনক ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী বাগধারা। তবে ঢাকার দি ডেইলি স্টার শিরোনাম করেছে- ‘Rainwater, animal blood submerge Dhaka streets.’-এ শিরোনামে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। কিন্তু অন্য গণমাধ্যমগুলো সচেতনভাবে অনলাইনের হিট বাড়াতে শিরোনামে ‘rivers of blood’ বা ‘রক্তের নদী’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছে। দেশে বা বিদেশে যারা প্রকৃত ঘটনা জানেন না, তারা যাতে শিরোনাম দেখে সংবাদ ক্লিক করে, সে উদ্দেশ্যে শিরোনামে ক্যামেফ্লেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের মর্যাদা কতখানি হানি হলো ভেবে দেখা হয়নি। আর এই কাজটি করেছে খোদ একটি বাংলাদেশী মিডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর রুমী আহমেদ এই ঘটনার জন্য বাংলাদেশী এই গণমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ও ছবিকে দায়ী করেছেন। ঢাকা ট্রিবিউন নামের ইংরেজি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ফেসবুক থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করে শিরোনাম দেয়া হয়- ‘Rivers of blood in Dhaka.’ রুমী আহমেদ দাবী করেছেন, শিরোনামের কারণে এই সংবাদটি দ্রুত বিশ্ব ছড়িয়ে পড়ে এবং একের পর এক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম শিরোনামে একই ফ্রেজ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করে। গত ১৬ তারিখে বিখ্যাত হাফিংটন পোস্টে এ বিষয়ে একটি ব্লগ লেখেন রুমী আহমেদ। ‘How Dhaka’s Reputation Was Sacrificed at The Altar Of Clickbait Journalism.’ শিরোনামের এই ব্লগে রুমী আহমেদ ঈদের দিনের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন একই সাথে সাংবাদিকতার এথিকস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শুধু বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা হানি নয়, কোরবানিকে ভয়াবহ হিসাবে তুলে ধরার একটি পরোক্ষ ইঙ্গিতও ছিল এ সকল শিরোনামে। এমনিতেই কোরবানির কিছুদিন আগে থেকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি অনলাইনের ব্লগে কোরবানির উদ্দেশ্য, নৈতিকতা ও যৌক্তিকতা নিয়েও পরোক্ষে প্রশ্ন তোলা হয়। কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও কটূক্তিমূলক রচনা প্রকাশের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার কথা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা এ ধরনের রচনাকে উস্কানি ও অপরাধমূলক আখ্যা দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সেসব হুমকি বাস্তবায়িত হয়েছে খুব কমই। আলোচিত রিপোর্টগুলোতে শুধু বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে হেয় করার চেষ্টা নয় বরং কোরবানিকে বিতর্কিত করার চেষ্টাও লক্ষ্যণীয়। কোরবানির ‘প্রয়োজনীয়তা’, ‘নিষ্ঠুরতা’, ‘আর্থিক ব্যয়’ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কোরবানির মূল শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশে নিজেকে সর্বোচ্চ বা যে কোনো ত্যাগের জন্য প্রস্তুত রাখা। হযরত ইব্রাহীমের (আ.) ক্ষেত্রে তা ছিল প্রাণপ্রিয় সন্তানকে কোরবানি দেয়ার সংকল্প গ্রহণ এবং হযরত ইসমাইলের (আ.) ক্ষেত্রে তা ছিল নিজের জীবনকে কোরবানির জন্য সঁপে দেয়া। কিন্তু আলোচিত ছবিগুলো সে বার্তা বহন করেনি।
এর জবাবে ডা. রুমী আহমেদ তার লেখায় ওই ছবির ব্যাখ্যা হিসাবে ঢাকার ঘনবসতি ও অপ্রতুল ড্রেনেজ সিস্টেমের কথা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি কোরবানি উদযাপনের সংস্কৃতি তুলে ধরে তাদের অপপ্রচারের জবাব দিয়েছেন। রুমী আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বার্ষিক প্রোটিনের চাহিদার সবচেয়ে বড় অংশ পূরণ হয় এই কোরবানির পশুর গোশত থেকে। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশের ১ বিলিয়ন ডলারের চামড়া শিল্পের কাঁচামালের প্রধান যোগানও আসে এই কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। রুমী আহমেদ যেটা বলেননি তা হলো, শুধু বাংলাদেশ নয়, যে ভারত বাংলাদেশে কোরবানির পশু রফতানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেই ভারতের বিভিন্ন কোম্পানীও তাদের বার্ষিক চামড়া চাহিদার একটা বড় অংশ বাংলাদেশের কোরবানির পশুর চামড়া থেকে পূরণ করে থাকে। ভারত নিজ দেশে মুসলমানদের গরু কোরবানি দেয়া নিষিদ্ধ করেছে। গরু জবাইও নিষিদ্ধ করেছে। তবে গো হত্যা নিষিদ্ধ করেনি। যেমন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের শহর উন্নয়ন, সংখ্যালঘু কল্যাণ এবং হজ মন্ত্রী মুহাম্মদ আজম খান বলেছেন, ভারতে বিজেপি শাসনামলে গরুর গোশত রফতানি আড়াইগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজম খান বলেন, ‘গরু জবাইয়ের বিরোধিতাকারী বিজেপি সরকারের আড়াই বছরের কার্যকালে গরুর গোশত রফতানি আড়াইগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।’ আজম খান গত বছর ডিসেম্বরে অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘বিজেপি গরুর গোশত রফতানীকারকদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া এড়াতে পারেনি। বিজেপি গরুর গোশত রফতানী সংস্থার কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছে। শুধু তাই নয়, গরুর গোশত রফতানীর সাথে বিজেপির বড় বড় নেতাদের নামও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। একদিকে ভারতীয় মিডিয়া জিনিউজে প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যাচ্ছে, চরম হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের মুসলিম শাখা এবারের কোরবানি ‘No Bakra Goat 2016 ২০১৬’ লিখিত কেক কেটে উদযাপন করছে। অন্যদিকে ২০১৫ সালে গরুর গোশত রফতানী করে ভারত ব্রাজিলকে টপকে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় গরুর গোশত রফতানীকারক দেশের খাতায় নাম লিখিয়েছে। অর্থাৎ গো হত্যা বন্ধ নয়, সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার ভারতে মুসলিমদের গরুর গোশত খাওয়া বন্ধ করতে চেষ্টা করছে।
ডা. রুমী আহমেদ তার লেখায় সাংবাদিক বেন ফ্রামটনের (Ben Frampton) একটি লেখা উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিবিসিতে প্রকাশিত এ লেখার শিরোনাম ছিল ‘Clickbait: The changing face of online journalism..’ রুমী আহমেদ তার লেখার শিরোনামে যে ‘ক্লিকবাইট জার্নালিজম’ টার্মটি ব্যবহার করেছেন তা বেন ফ্রামটনের লেখা থেকে নেয়া। রুমী আহমেদ বেন ফ্রামটনের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে লিখেছেন, “...in the digital age, a new word has become synonymous with online journalism -- clickbait. Put simply, it is a headline which tempts the reader to click on the link to the story. But the name is used pejoratively to describe headlines which are sensationalized, turn out to be adverts or are simply misleading.” বেন ফ্রামটন তার লেখায় অনলাইন জার্নালিজমের সিনোনিম করেছেন, ক্লিক বাইট জার্নালিজম। বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতার দিকে তাকালেও আমরা এই সিনোনিমের যর্থাথতা দেখতে পাই।
এ কথা সত্য যে, একজন বিজ্ঞাপনদাতা চাইবেন, তার প্রদত্ত বিজ্ঞাপন থেকে সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিত করতে। অনলাইন বিজ্ঞাপনে মাল্টি টাস্কিয়ের মাধ্যমে একটি বিজ্ঞাপনকে বিজ্ঞাপনদাতার চাহিদা অনুযায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, স্থান ও সময়কে নির্দিষ্ট করা সম্ভব। তাই বিজ্ঞাপনদাতার সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক লাভ নিশ্চিত করতে প্রিন্ট বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চেয়ে অনলাইন মিডিয়া অনেক বেশি কার্যকর। তাছাড়া অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে এই মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের রেটও অনেক কম। সে কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা ক্রমশ: বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন বা ইন্টারনেটকে মাধ্যম হিসাবে বেছে নিচ্ছে। তাই পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল থেকে বিজ্ঞাপন দ্রুত কমে যাচ্ছে এবং গুগল, ফেসবুক, বিং, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পাবলিশারদের পক্ষেও অনলাইন থেকে বিজ্ঞাপন গ্রহণ করা ও পেমেন্ট নেয়া অনেক সহজ। এই সুযোগটি গ্রহণ করছে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল। তারা গুগলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপন গ্রহণ করে তাদের সাইটে দিচ্ছে। যেহেতু অনলাইন বিজ্ঞাপনের পেমেন্ট নির্ভর করে ইম্প্রেশন ও ক্লিকের উপর। তাই অনলাইন পোর্টালগুলো তাদের সাইটে ক্লিক ও ইম্প্রেশন বাড়াতে অনেক সময় মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও অশ্লীল সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। আবার কখনো কখনো সংবাদ বা বাস্তবতার সাথে অসংগতিপূর্ণ শিরোনাম করে থাকে যাতে শিরোনাম দেখে রিডার আগ্রহী হয়ে সাইটে ক্লিক করে। এই ব্যবস্থাকেই বেন ফ্রামটন ক্লিকবাইট জার্নালিজম আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশের ঢাকা ট্রিবিউন নামের পত্রিকাটির অনলাইন শিরোনামের মূল উদ্দেশ্য এটাই হতে পারে। তাতে যে সে সফল হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই, এতে পত্রিকাটি ও তাদের বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও মুসলমানদের ভাবমর্যাদার যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। সে ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে? অনলাইন সাংবাদিকতার এই ঝুঁকির দিকটি সম্পর্কে বাংলাদেশের মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সকল মহল আরো সচেতন, দায়িত্বশীল, হবেন এটা সকলের প্রত্যাশা।
email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।