রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
লামা (বান্দরবান) উপজেলা সংবাদদাতা
তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও অর্থকরী হওয়ায় যুগ যুগ ধরে বান্দরবানের লামা উপজেলায় এ চাষ করে আসছে অধিকাংশ কৃষক। বিকল্প চাষাবাদের কথা কখনো ভাবেননি তারা। তবে সময়ের পরিবর্তনে অনেকে বিষয়টি বুঝেছেন এবং তারা তামাকের বিকল্প চাষ খুঁজতে শুরু করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষককে উদ্বুদ্ধ করেন সম্ভাবনাময় অর্থকরী তুলা চাষে। এতে প্রথমে আগ্রহ প্রকাশ করেন উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের মুসলিম পাড়ার কৃষক মোহাম্মদ হোসাইন। তার দেখাদেখি একই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি ছৌলুমঝিরির আবদুল হালিম, পূর্ব শীলেরতুয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, জমির হোসেন, আহমদ নবীসহ ৩২ জন কৃষক। এদের প্রতিজনকে ৪০ শতক করে ৩২টি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে গত জুন মাসে পরীক্ষামূলক চাষে সার্বিক সহযোগিতা করে বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এসব প্লটের আওতায় পাহাড়ের ঢালে ও সমতল ভূমিতে তুলা চাষে ভালো ফলন দেখা দেয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন চাষিরা। তাই পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এখানের পাহাড়ে তুলা চাষ করা গেলে কৃষকরা তামাকের মতো লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের মোট উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ তুলা এখান থেকে সংগ্রহ করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বান্দরবানের তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে দুই প্রজাতির তুলার চাষ হয়ে থাকে, পাহাড়ি তুলা এবং সমভূমির তুলা। পাহাড়ি তুলা পার্বত্যাঞ্চলে জুম চাষে অন্য ফসলের সাথি ফসল হিসেবে চাষ হয়ে থাকে। জুম চাষিদের মূল অর্থকরী ফসল পাহাড়ি তুলা। সমভূমির তুলা পাহাড়ের ঢালে ও সমতল ভূমিতে চাষ হয়ে থাকে। পাহাড়ি তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য ০.৫ ইঞ্চি। আঁশ খাটো বলে এই তুলা স্পিনিং মিলে সুতা তৈরির উপযোগী নয়। জুমচাষিরা উৎপাদিত তুলার একটি অংশ নিজেদের জন্য কম্বল, মোটা কাপড় তৈরির কাজে ব্যবহার করেন। এছাড়া এই তুলার একটি অংশ লেপের তুলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং কিছু অংশ বিদেশে রফতানি করা হয়। সমভূমির তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য গড়ে ১.১৫ ইঞ্চি। এই তুলা স্পিনিং মিলে সুতা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তুলার বীজ থেকে পশুখাদ্য খৈল, ফ্যাক্ট মুক্ত তৈল ও ফাজ (ব্যান্ডেজ বা গজ) তৈরি করা হয়। গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পার্বত্যাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি তুলা চাষের উপযোগী। ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চল ‘কার্পাস মহল’ হিসাবে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলের পাহাড়ের পাশাপাশি নদী ও প্রচুর ঝিরি রয়েছে। নদী ও ঝিরির পাড়ের অনুর্বর, বেলে দোঁ-আশ মাটিতে সমভূমির তুলা ভালো হয়। এছাড়া সমভূমির তুলা পাতাঝরা উদ্ভিদ বিধায় গাছের মোট আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ জৈবপদার্থ হিসেবে যোগ হয়। ফলে সমভূমির তুলা চাষকৃত জমি উর্বরতা লাভ করে। বছরের জুন মাসের শেষের দিকে ও জুলাই মাসের প্রথম দিকে জমিতে তুলার বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়। পাঁচ মাস পর অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তুলা উত্তোলন করা হয়। বস্ত্র বাংলাদেশের প্রধান শিল্পপণ্য। অর্থনৈতিক মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে বস্ত্র শিল্পের অবদান শিল্প খাতের প্রায় ৪০% এবং জাতীয় আয়ের প্রায় ১৩%। দেশে ৩৬৩টি সুতাকলের জন্য বার্ষিক ৪০ লক্ষ বেল (বেল=৪০০ পাউন্ড) আঁশ তুলার চাহিদা আছে। এ পরিমাণ তুলা আমদানি করতে বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ বিপুল পরিমাণ আঁশ তুলার চাহিদা পূরণের জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড দেশের সমতল অঞ্চলের পাশাপাশি পার্বত্যাঞ্চলেও সমভূমির তুলা চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সম্প্রসারিত তুলা চাষ প্রকল্প (ফেজ-১) এর আওতায় লামা উপজেলার গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নে ৩২টি পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেড়শ’ হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে সিবি-১২ ও ১৪ জাতের তুলা চাষ করা হয়। এর আগে চাষিদের তুলা চাষের উপর প্রশিক্ষণও প্রদানসহ বিনামেূল্য বীজ, সার, কীটনাশক ও উপকরণ প্রদান করে। গত ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু ইলিয়াছ মিয়া সৃজিত তুলা প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন। এসময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন, বান্দরবান তুলা উন্নয়ন জোনের প্রধান কৃষিবিদ আব্দুল ওহাব, কটন ইউনিট কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম, লামা কটন ইউনিট কর্মকর্তা আব্দুল খালেক। মাঠ পরিদর্শনের সময় তুলা চাষি মো. হোসাইন, মো. হালিম, নুরুল ইসলাম, জমির হোসেন, আহমদ নবীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন শেষে তুলা উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু ইলিয়াছ মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে লামা ইউনিটের অধীনে দেড়শ’ হেক্টর জমিতে দেশি ও হাইব্রিড জাতের সমভূমি তুলা চাষের আবাদ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০০ হেক্টর। এ চাষের গুণগত মান ভালো। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে ভালো ফলন হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, চাষিরা তামাক চাষে অভ্যস্থ ছিলেন। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ধরন পাল্টিয়েছে। এখন তামাকের পরিবর্তে কৃষকদের তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, বেশ সাড়াও পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের মুসলিম পাড়ার সমভূমি তুলা চাষি আবু জাফর জানান, আগে তিনি তামাক চাষ করতেন। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্বুদ্ধকরণে চলতি মৌসুমে আড়াই কানি সমতল ভূমিতে তুলা চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে তুলা চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য লামা উপজেলার পতিত জমিতে ব্যাপক তুলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে সরেজমিন পূর্ব শীলেরতুয়া গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়Ñ এখন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে উন্নত জাতের তুলা আর তুলা ক্ষেত। এ সময় তুলা চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি ১১ থেকে ১২ মণ তুলা উৎপাদন করা যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, তুলা উন্নয়ন বোর্ড এ চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও উপকরণ প্রদান করায় অন্য কৃষকরাও সমভূমি জাতের তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।