বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
শালীনতা, লজ্জা ও শরমের মাসআলাসমূহ ও দ্বীন এবং শরীয়াতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল কুরআন ও হাদীসে এ শ্রেণির মাসআলাসমূহের বিবরণ রয়েছে। কিন্তু এরপরও হাদীসের হুজ্জাত হওয়া অস্বীকার করা আর এতদসংক্রান্ত হাদীসকে মনগড়া বলে মন্তব্য করা একান্তই ভুল এবং বিভ্রান্তি। হাদীস তো শরীয়াতের পূর্ণতার প্রমাণ। তাই বলে কি সে সকল বিষয় সম্বলিত আল কুরআনের আয়াতসমূহকেও অস্বীকার করা হবে? এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে লজ্জা, শালীনতা ও শরমবিষয়ক মাসআলাগুলোর সমাধান কিভাবে করা হবে?
এ পর্যায়ে বিশুদ্ধ হাদীসের সংখ্যা সম্পর্কেও অবহিত হওয়া দরকার। হাদীসবিষয়ক গবেষকদের মতে সহীহ হাদীসের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার। একই হাদীস বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়ায় সনদ সংখ্যার বিচারে বিশুদ্ধ হাদীসের সংখ্যা সাত লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। সুতরাং কোনো হাদীস বিশারদ সম্পর্কে যদি বলা হয় যে, তিনি এক লক্ষ হাদীস মুখস্ত করেছিলেন, অথবা এত লক্ষ, অথবা পাঁচ লক্ষ বা সাত লক্ষ হাদীস হতে চয়ন করে এ গ্রন্থটি সংকলন করেছেন, তবে তার অর্থ হবে হাদীসের সনদ এবং একাধিক মাধ্যমে বর্ণিত হওয়া হিসেবে হাদীসের সংখ্যা বলা হয়েছে। হাদীসের ‘মতন’ বা ‘মূল পঠন’ হিসেবে ওই সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
এতদপ্রসঙ্গে হাদীস বিশারদ ইমামগণের পথনির্দেশনা খুবই প্রণিধানযোগ্য। (ক) ইমাম ইরাকী বলেন, এ কথার মধ্যে চিন্তাভাবনার বিষয় আছে। কেননা, ইমাম বুখারী বলেছেন : আমি এক লক্ষ সহীহ হাদীস ও দুই লক্ষ গায়ের সহীহ হাদীস হিফজ করেছি। এ কথার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সাইয়্যেদ মুফতি আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী, বরকতী (রহ:) দরসে বুখারীর প্রাক্কালে বলেছেন : সম্ভবত ইমাম বুখারী বিভিন্ন সনদে বর্ণিত একই হাদীসকে সনদ হিসেবে একাধিক গণনা করে মওকুফ হাদীসসহ বেশি সংখ্যার কথা বলেছেন। যদি হাদীসের জামেয়, মুসনাদ, সুনান, যুজ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থ হতে পুনরাবৃত্তি ছাড়া হাদীস গণনা করা হয়, তাহলে সহীহ হাদীসের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারেও পৌঁছবে না।
(খ) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর কথার অর্থ ও তাই। তিনি বলেছেন : সহীহ হাদীসের সংখ্যা সাত লক্ষের ঊর্ধেŸ। তিনি আরো বলেন : আমি সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার হাদীস থেকে চয়ন করে ‘মুসনাদে’ হাদীস সন্নিবেশ করেছি। (তাদরীবুর রাভী : ১/৪৭) (গ) ইমাম জাওযী বলেন : উল্লেখিত হাদীসের সংখ্যা দ্বারা ‘তুরুকে হাদীস’ তথা হাদীস বর্ণনার সনদ বোঝানো হয়েছে। ‘মতন’ বা হাদীসের ‘মূল পঠন’ হিসেবে হাদীসের সংখ্যা তা নয়। (শাওকে হাদীস-৩৯)।
প্রসঙ্গত স্মরণ রাখা দরকার যে, হিজরী তৃতীয় শতকে ওয়াসিল বিন আতা কর্তৃক মুতাযিলা সম্প্রদায়ের প্রকাশ ঘটে। সর্বপ্রথম এই সম্প্রদায় কতিপয় বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর সন্দেহের কারণে খবরে ওয়াহিদের হুজ্জাত হওয়া অস্বীকার করে। যদিও খবরে ওয়াহিদ হুজ্জাত হওয়া সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য দলিল বর্তমান রয়েছে। মুতাযিলা-ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা-বিশ্বাসের মধ্যে বিরাট মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। মুতাযেলীরা তাদের জ্ঞানে ধরতে না পারায় হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করার দুঃসাহস প্রদর্শন করেছে। (মিযানুল ই’তিদাল-১/২১; ইনকারে হাদীসকে নাতায়েজ-৩৩)।
মুতাযেলীদের পদাঙ্কলেহীদের মধ্যে (১) আবদুল্লাহ চাকরালভী (২) হাফিজ আসলাম জিরাজপুরী, (৩) নিয়াজ ফতেহপুরী (৪) ডা. গোলাম জিলানী বারক, (৫) ডা. আহমদ দীন, (৬) আল্লামা মাশরেকী চৌধুরী, (৭) গোলাম আহমদ পারভেজ প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মোটকথা, এসব ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, ঈমান ও আকিদা ইসলামের সাথে সর্বাত্মক সাংঘর্ষিক। তাদের মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়।
বর্তমান বিশ্বের হাদীস অস্বীকারীগণ তাদেরই চেলা-চামুন্ডা ও আজ্ঞাবহ অনুসারী। তারা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিলিয়ে দিতে সর্বদাই তৎপর থাকে। আসল কথা হলো এই যে, বর্তমান বিশ্বের হাদীস অস্বীকারকারীগণ প্রধানত দু’টি কারণেই হাদীস অস্বীকার করে থাকে। যথা (১) দ্বীন ইসলামের সাথে সম্পর্কহীনতা। কেননা, এই সম্পর্কহীনতার ফলে তারা যা করছে, তা ইসলামী জীবনব্যবস্থা নয়।
(২) প্রবৃত্তির অনুসরণ প্রবণতা। এ জন্য লক্ষ করা যায় যে, হাদীস অস্বীকারকারীরা প্রবৃত্তি বা নাফসের চাহিদা পূরণে সর্বদাই ব্যস্ত থাকে। এটাকে ধর্মীয় জীবনবোধ বলা যায় না। আর যায় না বলেই, সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ করছি- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের হাদীস অস্বীকারকারীদের ফিতনা হতে হেফাজত করুন, আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।