Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

১০ মাস পর দ্বিতীয় ডোজে সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি : অক্সফোর্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১১:৪৫ পিএম

যত দেরি তত ভালো! নাকি, সবটাই সঙ্কট মোচনের সমীকরণ? ভ্যাকসিনের ডোজ-ব্যবধান নিয়ে কার্যত দু’রকম জল্পনাই উস্কে দিয়ে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ দাবি করল, তাদের তৈরি চ্যাডক্স-১ টিকার (ভারতে যা কোভিশিল্ড) দ্বিতীয় ডোজ ১০ মাস পরে নিলেই সবচেয়ে ভালো। এতে চার গুণ বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে, যা এক বছরেরও বেশি টিকছে বলে দাবি তাদের। তবে গবেষণা রিপোর্টে তারা এ-ও বলেছে যে, প্রাথমিক টিকাণ্ডসঙ্কট সামাল দিতে এই ডোজ-ফারাককে ফলপ্রসূ কৌশল হিসেবে দেখা যেতেই পারে! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এখনও পর্যন্ত কোনও ভ্যাকসিনকেই তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ প্রয়োগের অনুমতি দেয়নি। আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি না, সম্প্রতি তা নিয়ে দ্বিধা প্রকাশও করেন হু-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। সোমবার প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্য অক্সফোর্ড দাবি করেছে, ট্রায়ালে কামাল দেখিয়েছে তাদের বুস্টার ডোজও!

দ্বিতীয় ডোজের দ্বিগুণ সুরক্ষার পাশাপাশি আরও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে অ্যান্টিবডি। এই রিপোর্ট অবশ্য নেহাতই প্রি-প্রিন্ট পাবলিকেশন। অর্থাৎ পিয়ার-রিভিউ হয়নি। তবে ভ্যাকসিনের পেটেন্ট সংস্থাই যখন ডোজ-ব্যবধান বাড়িয়ে অন্তত ১০ মাসের পক্ষে সওয়াল করছে, স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে দেশ-বিদেশে। একই সঙ্গে এই রিপোর্টের জেরে সিঙ্গল-ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

একেবারে গোড়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ৪-৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরে সম্প্রতি আবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সরকারি ভাবে জানায়, চ্যাডক্স ১-এর দ্বিতীয় ডোজ ৮-১২ সপ্তাহ পরে নিলেই বেশি কার্যকরী হচ্ছে। কার্যত এর পর-পরই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার ফর্মুলায় তৈরি সিরাম ইনস্টিউটের কোভিশিল্ড টিকার ডোজ-ব্যবধান ১২-১৬ সপ্তাহ করে দেয় কেন্দ্র। সেই সময়ে দেশে যেহেতু তীব্র টিকার আকাল, তাই এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বিরোধীরা বলতে থাকেন, টিকার জোগান নেই বলেই এই ডোজ পিছোনোর সিদ্ধান্ত। পাল্টা বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। সঙ্গে আশ্বাসও দেওয়া হয় যে, পরবর্তী গবেষণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। অক্সফোর্ডের সাম্প্রতিক রিপোর্ট নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও মন্তব্য করেনি কেন্দ্র।

টিকার দু’টি ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ালে কি বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়? উত্তর পেতে তিন ভাগে পরীক্ষা চালান গবেষকরা। প্রথম গ্রুপকে ৮-১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টি ডোজ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় গ্রুপকে ১২-২৫ সপ্তাহের ব্যবধানে এবং তৃতীয়গ্রুপকে ৪৪-৪৬ সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টি ডোজ দেওয়া হয়। সেই পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, দ্বিতীয় ডোজের ২৮ দিন পরে গড় অ্যান্টিবডির মাত্রা থাকছে যথাক্রমে ৯২৩, ১৮৬০ এবং ৩৭৩৮ ইউনিট। সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে অক্সফোর্ড জানিয়েছে, প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পরেই অ্যান্টিবডির মাত্রা শিখর ছুঁচ্ছে। ১৮০ দিন পরে তা অর্ধেক কমছে। ৩২০ দিন পরে সর্বোচ্চ মাত্রার ৩০ শতাংশ অ্যান্টিবডিই থাকছে শরীরে। অবশ্য করোনাকে কাবু করতে ঠিক কী মাত্রার অ্যান্টিবডি প্রয়োজন, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। করোনার আলফা, বিটা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে যুদ্ধে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড। আর তা সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়িচ্ছে ১০ মাসের ব্যবধানে সেই ডোজ নেওয়ার পরেই।

কোভিশিল্ডের ডোজ-ব্যবধান বাড়ানো নিয়ে আগেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্ট এবং এই ট্রায়ালের লিড ইনভেস্টিগেটর অ্যান্ড্রু পোলার্ড। এদিনও তিনি বলেন, ‘দু’টি ডোজের ব্যবধান বাড়িয়ে ইমিউনিটি বাড়ানো সম্ভব হলে অবশ্যই তা নিয়ে সবার ভাবনাচিন্তা করা উচিত।
বিশেষত, কিছু দেশে যখন টিকার জোগান যথেষ্ট নয়।’ অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা আগে দাবি করেছিলেন, তাদের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে ৭৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজের পরেই সবোর্চ্চ ৮১ শতাংশ ইমিউনিটি গড়ে উঠছে। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এই মুহূর্তে অনেকটাই স্তিমিত। তবে অগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ায় করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত দেশে সাড়ে ৩ কোটির কাছাকাছি টিকাপ্রাপকের ৮৮ শতাংশই কোভিশিল্ড পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তাই অক্সফোর্ডের এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্র যদি ফের ডোজ-ব্যবধান বাড়ায়, তা হলে কী হবে- সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করছে। সবেধন একটা ডোজেই ঝড় সামাল দেওয়া যাবে তো! সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ