বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মানুষ ইসলামের আলো লাভ করেও কেন যেন উদাস। অবহেলা করছে কোরআন সুন্নাহকে। ইসলামী জীবনবোধকে তারা অবলীলায় উপেক্ষা করে চলেছে। অল্প কিছু মানুষই দীনকে ভালোবেসে জীবনে বাস্তবায়িত করে। অধিকাংশই দীনকে মুখে স্বীকার করলেও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে না। সমাজের কর্তা ও দায়িত্বশীলেরা তো অনেকাংশেই দীন বিমুখ। মনোচেতনায়, কথা ও কাজে তাদের অনেকে ইসলামবিদ্বেষী। ধ্বংস ও জাহান্নামকে মেনে নেবে কিন্তু ইসলামকে ভালোবেসে মেনে নেবে না।
সুযোগে ইসলাম প্রচারক, কোরআন-সুন্নাহর ধারক বাহক শ্রেণিটিকে আঘাত, বদনাম এমনকি নির্মূল করার চিন্তাও তারা পেটে পেটে করে। সময় সময় তাদের কথা কাজ ও ভূমিকায় এসব প্রকাশও পেয়ে যায়। অথচ হাজার বছরে পীর মাশায়েখ ওলী আউলিয়া আলেম ইমাম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সংগ্রাম ও সাধনায় তৈরি সমাজকে তারা দিনে দিনে ধ্বংসের অতলে ঠেলে দিচ্ছে।
একজন নারীর পক্ষে পরিবারের প্রতি এমন নৃশংসতা কি চিন্তা করা যায়। তার বাবা ২৫ বছর প্রবাস কাটালেন কেন। তার মা কেন এমন অভ্যাস পেশা ও জীবন বেছে নিলেন। কেন তিনি নিজ গর্ভের দু’টি ফুলের মতো নিষ্পাপ কন্যাকে প্রথম এ পথে নামালেন। কেন চরিত্র ও নৈতিকতার কথা তার মনে পড়ল না। পর্দার কথা কি সে কোনোদিন শুনেননি।
মা মেয়ের একই ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক বা তথাকথিত বন্ধুত্ব কী করে হয়। ছোট বোন কী করে বড় বোনের স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। এসব কিছু জেনে শুনে তাদের বাবা কেন এ সংসারে নীরবে অবস্থান করেন। তাদের মা কি শরীয়ত, আইন, সমাজ, সভ্যতা, রুচি ও মনুষ্যত্বের কিছুই জানতেন না? এমন শত প্রশ্ন এখন উঠবে।
তবে এসবের সত্যাসত্য যাচাই বা উদ্ভূত প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর জানার জন্য তার পূর্বের স্বামী বাবা মা ও ছোট বোনটি বেঁচে নেই। জানা নেই, আদালত আত্মস্বীকৃত খুনী মেয়েটির ব্যাপারে কী রায় দেয়। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এ অবক্ষয় আর মর্মান্তিক বিপর্যয় অনেক জটিল একটি কেসহিস্ট্রি। এই মেয়ের বিচিত্র মনোদৈহিক কেমিস্ট্রির বিশ্লেষণ মহাজ্ঞানী শরীয়া বিশেষজ্ঞ ইসলামী বিচারক ও জুরি বোর্ড ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। একমুখী শিক্ষিত আধুনিক বিচারকরা তো এসব জানারই কথা নয়।
মজা হতো যদি কোনো শরীয়তি আদালতে এ মামলাটি উঠত। ঘটনার শুরু থেকে ইসলামী ও সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষা, ঈমান, নামাজ, হালাল উপার্জন, স্ত্রী থেকে স্বামীর দীর্ঘসময় দূরে থাকা, মেয়েদের শিক্ষা সম্মান নিরাপত্তা, স্ত্রীকে শাসনের সীমানায় রাখা, ধর্মীয় জীবনাচার, সামাজিক বন্ধন ও শাসন, অল্পেতুষ্টি, ধৈর্য, সহজ সরল আর্থিক জীবন, মর্যাদাপূর্ণ নাগরিকজীবনবোধ, পরপুরুষের সাথে খোলামেলা আচরণ, অবাধ মেলামেশা, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, নাগরিক অসামাজিতা, আত্মীয় স্বজন ও বংশীয় বলয় থেকে দূরত্ব ইত্যাদি পয়েন্ট থেকে কেসস্টাডি হলে এটি একটি মাইলফলক বিশ্লেষণ ও বিচার হতে পারত।
কিন্তু কোরআন সুন্নাহ শরীয়ত ও দীনধর্ম তো এখন এদেশে কিছু দরদী লোকের ঈমানী দায়বদ্ধতার ফলে নামমাত্র ও চরম উপেক্ষিত অবস্থায় টিকে আছে মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। ইসলামের সমাজ শাসন আইন ও বিচারব্যবস্থা এখানে ব্যাপকভাবে জননন্দিত নয়। শরীয়ত যদিও অনেকের আচরিত, বহু কাক্সিক্ষত। তবে কিছু লোকের চোখের বালিও বটে। পারলে ধর্মহীনতার দোহাই দিয়ে তারা ইসলামের নাম নিশানাটুকুও মুছে দিতে চায়।
এমন ধর্ম সমাজ এ সুশাসনবিরোধী সামাজিক জীবনযাত্রা একটি দুটি নয়, দেশ ও প্রবাসের হাজারো পরিবারকে নরকের আগুনে নিক্ষেপ করেছে। লোকচক্ষু লজ্জায় মানুষ সব প্রকাশ না করলেও হাজারো ব্যক্তি পরিবার এবং প্রায় গোটা সমাজ আভ্যন্তরীণ অশান্তির তুষের অনলে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অথচ ইসলামী জীবনবোধ, ঈমানী চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও কোরআনী আমল আখলাকের সুশীতল ছায়ায় তারা আসতে নারাজ।
দীনি জীবনের বরফশীতল সুখচ্ছায়ায় তারা প্রবেশ করতে কেন জানি ভয় পায়। শয়তান এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা রহমত ও চিরস্থায়ী জান্নাতের ডাকে মানুষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সাথে সাড়া দেয় না। সব কিছু জেনে বুঝেও মানুষ শয়তানের বৃত্তেই বন্দি থাকে। দীনি জীবনের ঐশী আনন্দলোকে মানুষ প্রবেশ করে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।