বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মক্কার তপ্ত মরুতে কাফেরদের নির্যাতনকালে যার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল ‘আহাদ আহাদ একম একম’ তার নাম বেলাল ইবনে রিবাহ। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম মোওয়াজ্জিন এবং তাঁর সর্বশেষ আজান উচ্চারিত হয়েছিল খলিফা হজরত উমর (রা.) কর্তৃক জেরুজালেম (বায়তুল মোকাদ্দাস) বিজয়ের পর ‘মসজিদে আকসায়’। মুসলমানদের এ প্রথম কেবলা আজ ইসরাইলি ইহুদিদের তাÐবলীলার শিকার। সেখানের আজান ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ইসলামের সূচনাকালে মক্কার কাফের মোশরেকদের হাতে যে সব নওমুসলিম কৃতদাস হিসেবে বন্দি অবস্থায় অকথ্য নির্যাতন ভোগ করছিলেন, তাদের মধ্যে বেলাল (রা.) ছিলেন অন্যতম। তাঁর মাতা হাম্মামা (রা.)ও একই সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হজরত বেলাল (রা.)-কে মুক্ত করেছিলেন।
হিজরতের পর আজান প্রথা চালু হলে রসূলুল্লাহ (সা.) হজরত বেলাল (রা.)-কে প্রথম আজান দিতে নির্দেশ প্রদান করেন এবং তিনিই প্রথম আজানের ঘোষণা প্রচার করেন ‘আছ ছালাতু জামে আতুন’ বাক্য উচ্চারণ করে। অর্থাৎ নামাজের জন্য সকলে সমবেত হও। আজানের প্রচলিত বাক্যগুলো ওহীর মাধ্যমে চালু হওয়ার পর হজরত বেলাল (রা.)-কে ইসলামের প্রথম মোওয়াজ্জিন নিযুক্ত করেন রসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ ও সুললীত কণ্ঠের অধিকারী। বিভিন্ন সময় রসূলুল্লাহ (সা.) এর আরো তিন জন মোওয়াজ্জিন নিয়োজিত থাকতেন। বেলাল (রা.) এর মর্যাদা ছিল তাদের সকলের ঊর্ধ্বে। হুজুর (সা.) এর জীবদ্দশায় তিনি মোওয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কথিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) এর ওফাতের পর হজরত বেলাল (রা.) এতই মর্মাহত হয়েছিলেন যে, তিনি আজান দেয়া ছেড়ে দেন এবং মদীনা ত্যাগ করে দামেস্কে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন এবং হিজরি ২০ সালে সেখানে ইন্তেকাল করেন।
হিজরি ১৬ সালের কথা, জেরুজালেম প্রথমবারের মতো মুসলমানদের অধিকারে এসে যায়। খলিফা হজরত উমর (রা.) সেখানে পৌঁছেন। বিজয়ের পর সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করেন। একদিন নামাজের সময় তিনি বেলাল (রা.)-কে আজান দিতে বলেন। বেলাল (রা.) বললেন: ‘আমি সংকল্প করেছিলাম যে, রসূলুল্লাহ (সা.) এর পর আমি আর কারো জন্য আজান দেব না। কিন্তু আজ এবং একমাত্র আজ আপনার নির্দেশ পালন করব’। এই বলে তিনি আজান দিতে শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম সকলের রসূলুল্লাহ (সা.)-এর মোবারক যুগ স্মরণ হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে দারুণ আবেগের সৃষ্টি হয়। আবু ওবায়দা (রা.) এবং মোআজ ইবনে জাবাল (রা.) কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে পড়েন। হজরত উমর (রা.) বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘক্ষণ তার এ অবস্থা বিদ্যমান ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।