রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
কামাল হোসেন, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে
‘শত কষ্টে থাকলেও ভিক্ষা করবো না। অভাবের তাড়নায় বলদ কিনতে না পারায় কষ্ট করে নিজে ঘানি টেনে সরিষা থেকে তেল তৈরী করে কোন রকমে দিনাদিপাত করছি। এটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক জীবন। এখন এটাই আমাদের কাছে যেন স্বাভাবিক নিয়ম। এভাবেই বেঁচে থাকতে হবে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘী গ্রামের প্রায় ৬২ বছরের বৃদ্ধা মিনতী রানী সাহা নিজে ঘানি টানতে টানতে এমন অনুভূতি ব্যক্ত করলেন এ প্রতিবেদকের কাছে। শুধু মিনতী রানী সাহা ও তার স্বামী হরিপদ সাহার পবিবারই নয়। হরিপদ সাহার আরো দুই ভাই শম্ভু পদ সাহা ও তারাপদ সাহা একইভাবে অভাবের তাড়নায় বলদ কিনতে না পেরে নিজে ঘানি টেনে সরিষা থেকে তেল তৈরী করে সংসার চালাচ্ছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাজারবিঘী বাজারের মধ্যে ছোট দু’খানি ঘর। একখানি ঘরে মিনতী রানী সাহা ও তার স্বামী হরিপদ সাহা (৬৫) একটি ঘানিতে ৫ কেজি সরিষা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী পালাক্রমে ঘানি টানছেন। আলাপকালে তারা বলেন- ‘ঘানি টানতে খুব কষ্ট হলেও তেল পিড়িয়ে গ্রামে যেতে হবে। তেল বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে চাল কিনতে হবে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। মধ্যখানে একবার একটা বলদ কিনেছিলাম। দুটো মেয়ের বিয়েতে সে বলদ বিক্রি করে দেয়ার পর আর বলদ কিনতে পারিনি’। তারা বলেন- ‘মাত্র ২ হাজার টাকা পুঁজি। এ টাকা দিয়ে সরিষা কিনি এবং প্রতিদিন ৩-৪ কেজি তেল বিক্রি করি। আর তাতেই লাভ হয় ৬৫ টাকা এবং খেল থেকে পাওয়া যায় ১শ’ টাকা। প্রতিদিন সবমিলিয়ে আমাদের আয় ১৬৫ টাকা। এই দিয়ে কোন মতে চলে তিন সদস্যের সংসার’। মিনতী ও হরিপদের তিন কন্যার মধ্যে ছোট কন্যাটি স্কুলে পড়ে। দিনে ২ বার একসঙ্গে ঘানি টেনে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করা এই পরিবারকে এখন পর্যন্ত কেউ কোন সহযোগিতা করেনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন কার্ডও তারা পায়নি। হরিপদ সাহার ছোট ভাই শম্ভুপদ সাহা (৬০) ও তার স্ত্রী গাজলী রানী সাহা (৫৫) একই ভাবে ঘানি টেনে সংসার চালান। তারা বলেন- ‘আমাদের কোন পুঁজি নেই। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাকিতে সরিষা কিনে এনে নিজে ঘানি টেনে তেল ও খৈল উৎপাদনের পর তা বিক্রি করে পাওনাদারকে টাকা শোধ করার পর যা থাকে তাই দিয়ে কোন রকমে ৬ সদস্যের সংসার চালায়’। টাকা অভাবে বলদ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এইভাবে ঘানি টেনে চলছে শম্ভু ও গাজলী। হরিপদ সাহার আরেক ভাই তারাপদ সাহা (৫৮) তারও কোন বলদ নেই। আছে শুধু একটি ঘানি ও ৪ হাজার টাকা পুঁজি। তাই দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে সরিষা কিনে নিজে ও পরিবারের সদস্যরা ঘানি টেনে সরিষা পিড়িয়ে দিনযাপন করছেন। তারাপদ সাহা বলেন, ‘আমরা তিনভাই এভাবেই দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে সংসার চালিয়ে আসছি’। তারাপদে জানান, সামান্য পুঁজি দিয়ে দৈনিক ১৭৫ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে ৮ সদস্যের পরিবারে কোন দিন খাবার হয় তো আবার কোন দিন হয় কোনমতে। হরিপদ, শম্ভু ও তারাপদ তিন ভাই পরিবার নিয়ে কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবনযাপনই করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।