বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী হাদিস কুরআন মাজীদের ব্যাখ্যা। এই হাকীকতটি স্বয়ং আল্লাহপাক আল কুরআনে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) আমি তোমার নিকট (হে নবী!) কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষের নিকট প্রেরীত বিষয়সমূহ তুমি স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করে দাও। (সূরা নাহল : ৪৪)। (খ) আল্লাহপাকের কিতাব যে বিষয় অস্পষ্ট রেখেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। (জামেউ বয়ানিল ইলম : ২/৬৬)। (গ) কিতাবুল্লাহর কোনো বাণী দুই বা ততধিক অর্থের সম্ভাবনাময় হলে সুন্নাত তথা হাদিস তার একটি অর্থ নির্ধারিত করে দেয়। এ জন্যই এজাতীয় স্থানে হাদিসের অর্থাৎ সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হয়। (আল মুয়াফাকাত : ৪/৮)।
শুধু তাই নয়, আল কুরআনের বহু আয়াতে কারীমায় আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ তায়ালার ও রাসূল (সা.)-এর। যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নাও (তবে জেনে রেখ) আল্লাহপাক খোদাদ্রোহীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আলে ইমরান : ৩২)। (খ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যাদের নির্দেশদানের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। (সূরা নিসা : ৫৯)।
(গ) তোমরা আল্লাহপাক ও তাঁর রাসূলের কথা মান্য করো, পরস্পর দ্বন্দ্ব করো না, দ্বন্দ্ব করলে দুর্বল ও সাহসহীন হয়ে পড়বে। (সূরা আনফাল : ৪৬)। (ঘ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের, আর তোমাদের আমল বিনষ্ট করো না। (সূরা মোহাম্মাদ : ৩৩)। (ঙ) যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মান্য করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে। (সূরা আল আহযাব : ৭১)।
সুতরাং হাদিসকে বাদ দিয়ে কুরআন মাজীদের ওপর আমল করা আদৌ সম্ভব নয়। হাদিস অস্বীকারকারীগণ শুধুমাত্র হাদিসকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত থাকে না বরং কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য ওয়াজিব হওয়াকেও অস্বীকার করে বলে বসে, রাসূল হিসেবে নবী করীম (সা.)-এর আনুগত্য সাহাবাদের ওপরও ওয়াজিব ছিল না, আমাদের ওপরও ওয়াজিব নয়। তারা কখনো এ কথাও বলে যে, নবী করীম (সা.)-এর বাণী সাহাবীদের জন্য হুজ্জত হলেও আমাদের জন্য হুজ্জত ও দলিল নয়।
আবার কখনো বলে, হাদিস সকল মানুষের জন্যই হুজ্জত, কিন্তু হাদিস সংরক্ষিত নেই। নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে আমাদের নিকট হাদিস পৌঁছেনি। তাদের এ সকল কথার শেষ পরিণতি ও লক্ষ্যস্থল হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাতকে অস্বীকার করা, তার হাদিসকে অস্বীকার করা এবং একই সাথে সংরক্ষিত ও উপস্থিত হাদিসের কিতাবগুলোকে গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য মনে না করা। (ইনকারে হাদিসকে নাজায়েজ : ৩২)। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে তাদের ইসলামের গণ্ডির বহির্ভূত বলে গণ্য করা ছাড়া কোনোই গত্যন্তর নেই।
কিছু কিছু হাদিস রেওয়ায়েত বিলমা’না তথা আনুবাদিক বর্ণনারূপে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর জন্য এমন কিছু শর্ত নির্ধারিত হয়েছে যাতে তার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ না থাকে। তাছাড়া আকল ও নকল এ কথার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, কোনো বর্ণনা শুধু এ কারণে প্রত্যাখ্যান করা যায় না যে, তা অনুবাদরূপে জ্ঞাত হয়েছে। কেননা, রেওয়ায়েত বিলমা’না তথা আনুবাদিক বর্ণনা এমন ব্যক্তিদের থেকেই বর্ণিত হয়েছে, যারা হাদিসের ভাষ্য, শব্দ ও তার মর্ম সম্পর্কে পূর্ণ অবগত, তার ভাব উদ্ধারে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল, শব্দ ও তার অর্থের ব্যবধান নির্ধারণে সূক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী। তবে তার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে অনুবাদমূলক বর্ণনা বৈধ। (মুকাদ্দামা ইবনুস সালাহ : ১০৫)।
আবার কতিপয় হাদিসে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিরোধ পরিলক্ষিত হয়। এই বিরোধ বিদূরীত করা হয়েছে কতিপয় নীতির মাধ্যমে। যেমন- (ক) অগ্রাধিকার প্রদান, (খ) সামঞ্জস্য বিধান, (গ) রহিতকরণ, (ঘ) বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি। সুতরাং এ বিরোধ হাদিস হুজ্জত হওয়ার প্রতিবন্ধক নয়। কুরআনুল কারীমের কতিপয় আয়াতেও বাহ্যিক বিরোধ পাওয়া যায়। এই বিরোধ ও সুস্পষ্টই নীতির দ্বারা বিদূরীত হয়েছে। তাই বলে কি এর দ্বারা কুরআনুল কারীমের হুজ্জত হওয়া অস্বীকার করা যাবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।