বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষ হত্যা মহাপাপ। ইসলাম হত্যা, খুন, গুম ও নৃশংসতাকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে কবিরা গুনাহর অন্যতম হচ্ছে ‘কাতলুন নাফস’। নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা ইসলামে মহাপাপ। কোরআন শরীফে মহান আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করবে তার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা নিসা : ৯৩)। ইসলামে খুনীর সাজা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। আল্লাহ বলেন, আন্নান্নাফসা বিন নাফসি। খুনের বদলা খুন।
অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, কেউ নিরপরাধ কোনো মানুষকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে রক্ষা করল।’ (সূরা মায়িদা : ৩২)। সমাজে হত্যা, খুন, নৃশংসতা নানা কারণে দেখা দেয়। শয়তান এ ক্ষেত্রে মানুষকে প্ররোচিত করে। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসিন : ৬০-৬২)।
নিজের রাগ ও ক্রোধকে সংবরণ করা এ জন্যই জরুরি। মানুষের মধ্যকার ঝগড়া, ক্রোধ, জিঘাংসা, প্রতিশোধ থেকেই খুন ও নৃশংসতা সংঘটিত হয়ে থাকে। সমাজ ও রাষ্ট্রে অন্যায়ের প্রতিকার এবং ন্যায়বিচার প্রচলিত থাকলে বহু খুন, গুম, নৃশংসতা ও অপরাধ থেকে মানবজাতি রক্ষা পায়। যদি অপরাধের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি হয় তাহলে অসংখ্য অপরাধের শিকড় উপড়ে যায়। মানুষ যখন জানে যে, কাউকে খুন করলে নিজেকেও মরতে হবে, তাহলে সে খুন করবে না।
দ্রুততম সময়ে জনসমক্ষে খুনীর মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হলে মানুষের মন থেকে খুন করার প্রবণতা ও সাহস দূর হয়ে যেতো। ইসলামী বিচার ও শাসনব্যবস্থায় রয়েছে সব সমস্যার সমাধান। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে (আল্লাহর দেয়া বিচারে সমান সমান বদলা লওয়ার নীতিতে) রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে। (সুরা বাকারাহ : ১৭৯)।
সম্প্রতি খুনের ঘটনা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক নৃশংসতাও দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাজধানীর কদমতলিতে এক মেয়ে তার মা বাবা ও ছোট বোনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে, হাত বা বেধে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই মেয়ে তার প্রথম স্বামীকেও হত্যা করেছিল বলে মিডিয়া জানায়। খুনী তার বর্তমান স্বামী, শিশু কন্যা ও কনিষ্ঠ বোনকেও ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে রাখে। পুলিশ এসে মৃতদের লাশ দেখতে পায়। তারা অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং খুনীকে গ্রেফতার করে।
ইদানীং দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন পারিবারিক নৃশংসতার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা। সন্তানদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মায়ের নিজেরও গলায় দড়ি দিতে দেখা গেছে। স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেছে পুরুষ। পরকীয়া করে নিজের স্বামীকে খুন করানো। এ ধরনের কিছু ঘটনা অহরহ সমাজে ঘটতে দেখা যায়।
এ সবের পেছনে মূলত ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব এবং সুশিক্ষা না থাকা দায়ী। পাশাপাশি সামাজিক ন্যায় বিচার ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার চরম সঙ্কটও দায়ী। দায়ী মানবিকতার চর্চা কমে যাওয়া। মুসলিম সমাজে ইসলামী অনুশাসন না মানার ফলে হাজারো সমস্যা তৈরি হয়। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় ও আদর্শিক শূন্যতা থেকেও এমন ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। অন্যায় দুর্নীতি অবিচার নাগরিকদের সকল ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে। মানুষ দায়িত্বহীন হয়ে গেলে তখন অপর মানুষেরা অধিকার বঞ্চিত হয়।
অমানবিক সমাজে বহু মানুষ তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনে চলে যায় আর কিছু লোক হয়ে যায় বিপথগামী। সমাজ তার দায়িত্বে অবহেলা করলে মানুষের অন্যায় ও পাপাচার সমাজের ওপরই গজব হয়ে ফিরে আসে। সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ প্রতিরোধের কাজ রাষ্ট্র সমাজ এবং সম্প্রদায় যখন ছেড়ে দেয় তখন মানুষের জীবনে আজাব নেমে আসে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন না থাকলে আর মনুষ্য বসবাসের উপযোগী থাকে না। এ জন্যই ধর্ম মানুষকে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পাহারা দেয়। পথনির্দেশ দেয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও স্রষ্টাকে ভয় করে চলার মনমানসিকতা না থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। পরকালে জবাবদিহিতার চেতনা জাগ্রত না থাকলে মানুষ পশুর চেয়েও অধম হয়ে দাঁড়ায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।