Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

করোনায় সংকটে পর্যটন খাত

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২১, ২:৫০ পিএম

মহামারি কোভিড-১৯ দেশের সার্বিক পর্যটন খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। গোটা পর্যটন খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। এই শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লক্ষ মানুষ পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যাক্তিরা পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা। করোনা প্রণোদনা হিসেবে সরকার বিভিন্ন শিল্পে সরাসরি আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করলেও দেশের বিকাশমান পর্যটন খাতকে সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। গত বছরের ৮মার্চ দেশে প্রথমবারের মত করোনা রুগি চিহ্নিত হবার পর পরই দেশের সকল পর্যটন স্পটে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় অভ্যন্তরিন ও আন্তর্জাতিক রোডে চলাচলকারি সকল বিমান। বাতিল হয়ে যায় হোটেল-মোটেল এর বুকিং। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে বিমানসহ দেশ বিদেশের হোটেল মোটেল ও টুরিজম ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষ। অথচ দেশে অর্থনীতে সরাসরি অবদান রাখা পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে সরকার তেমন কোন পদক্ষেপ নিয়েছে বলা যাবে না। মাঝে দেশের কোভিড পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলে দেশের অভ্যন্তরিন পর্যটন স্পটগুলোতে আবার লোকসমাগম বাড়তে থাকে। দেশের বাইরে নেপালের পর্যটনের দুয়ার খুলে দেয়া হয়। স্বাভাবিক হতে থাকে দেশের পর্যটন শিল্প। কিন্ত হঠাৎ করেই করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশের সীমান্তবর্তী ১৭ জেলায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত সংক্রোমিত করতে পারে। মৃত্যু হারও বেশী। সরকারি আদেশে আবারও বন্ধ করে দেয়া হয় পর্যটন স্পট গুলো। দীর্ঘ প্রায় ১৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। সরকারের উল্লেখযোগ্য কোন সহযোগিতা ছাড়াই টিকে থাকার লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে দেশের পর্যটন খাত। ২০২০-২০২১ আর্থিক বছর শেষ হতে চলেছে। সংসদে নতুন বছরের বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। অথচ এ খাতের সাথে জড়িতদের জন্য বাজেটে তেমন কোন সু-খবর নেই।
কোভিড-১৯ এর কবলে সারা পৃথিবী নিশ্চল ও স্থবির হয়ে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্ব থেকে চিরবিদায় নিয়েছে। এখনো অনেক মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ক্ষেত্র বিশেষে লক ডাউন চলছে।
জীবন- জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় বাণিজ্যের চাকা সচল করা সম্ভব হলেও পর্যটন শিল্প যেমন বিমান,জাহাজ, হোটেল,মোটেলসহ পর্যটনের সাথে জড়িতদের আয় রোজগার একেবারেই বন্ধ। সচল করা যায়নি স্থবির এই শিল্পকে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির। দেশের এই শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অথচ এই খাত থেকে বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকার আয় করে থাকে। অফিস ভাড়ার ভ্যাট-ট্যাক্স,জাহাজ থেকে আয়, হোটেলের কর এবং পর্যটন কেন্দ্র থেকে টিকিট, রেস্টুরেন্টের ভ্যাট, বিমান টিকিটের ওপর প্রাপ্ত ট্যাক্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকার অর্জন করে থাকে। এ খাতের আয় জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সরকারের সহযোগিতা অপ্রতুল। পৃথিবীর অনেক দেশ যেমন পার্শ্ববর্তী ভারত থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান,মালদ্বীপ,শ্রিলংকা পর্যটন শিল্প থেকে জাতীয় আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংগ্রহ করে থাকে। পর্যটন বিশ্বে সকল দেশ ও জাতিকে পরিচিত করে এবং দেশের সম্মান বৃদ্ধি করে। এই মুহূর্তে সরকারের আর্থিক সাহায্য ও প্রণোদনা না পেলে শিল্পটি চিরতরে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। থাইল্যান্ডের মতো দেশ গত ১৫ বছরে সরকার যত টাকা এই খাত থেকে আয় করেছে তারা তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পর্যটন প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার জন্য প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। বাংলাদেশ সরকারও পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে এই শিল্পের সাথে জড়িতদের আর্থিক প্রণোদনার আওতায় আনবে বলেই বিশ্বাস।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশে শিক্ষা ও পর্যটন ছাড়া যেহেতু সব কিছুই সচল, তাই সরকার দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেশের অভ্যন্তরিন পর্যটন এলাকাগুলো খুলে দেবে বলেই ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ও অভিভাবকরা প্রত্যাশা করে। স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক করে দেশের ভেতরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের চাহিদা। তা না হলে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিপন্ন হবে।
বাংলাদেশে পরিচিত অপরিচিত অনেক পর্যটক-আকর্ষনীয় স্থান আছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভ্রমণকারীরা যুগে যুগে মুগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য ইত্যাদি অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত । বাংলাদেশ বিশ্বের এমন একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় দেশে যেখানে একই সাথে পাহাড়, সমুদ্র ও সুন্দরবনের মত মায়াবী অরন্য রয়েছে। যা পৃথিবীর আর কোন দেশে একই সাথে দেখতে পাওয়া যায় না।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যাগের মাধ্যমে কর্মকৌশল ঠিক করে সম্ভাবনার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটনে মডেল হতে পারে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটক আকর্ষণে যে বৈচিত্র্যময়তা বিদ্যমান তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্প আজ বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটা নির্ভর করে। দেশের অপ্রতুল অবকাঠামো, নিরাপত্তার অভাব, অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা আমাদের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতকে খুব বেশী বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করতে পারেনি। অথচ কক্সবাজারের অপার সৌন্দর্য ভ্রমনপিপাষু মানুষকে টানে। সুন্দবনের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়না এমন মানুষ খুজে পাওয়া ভার। সাগরকন্যা কুয়াকাটার সূর্যাদয় ও সূর্যাস্তের অপরুপ সৌন্দর্য যে কোন মানুষকে কাছে টানে। বান্দরবন ও রাঙ্গামাটির দৃষ্টিনন্দন রুপ বিমোহিত করে যে কোনপর্যটকদের কে। কি নেই বাংলাদেশে। পাহাড়, সাগড়,বন জঙ্গর সব আছে। মহান সৃষ্টিকর্তা দু'হাত উজার করে আমাদের প্রকৃতিকে অপরুপ করে সাজিয়েছেন। সঠিক পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত এখনও খুড়ে খুড়ে চলছে। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি সে দেশের পর্যটনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেকটায় পিছিয়ে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে একদিকে যেমন নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে অন্যদিকে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সহজতর হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটন

৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ