বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দেশে প্রায় সাড়ে চার লাখের মতো মসজিদ ও নামাজখানা আল্লাহর রহমতে যথারীতি চলছে। এতে যেমন ৬৯ হিজরি মোতাবেক ৬৯০ খৃষ্টাব্দে প্রথম নির্মিত লালমনিরহাটের হারানো মসজিদ রয়েছে তেমনি তিন থেকে সাতশ’ বছর আগের সুলতানী ও মুঘল আমলের শাহী মসজিদও রয়েছে। বাকি সব মসজিদ এ দেশের জনগণের জমি সম্পদ ও টাকায় নির্মিত। জনগণের অর্থ সাহায্যেই পরিচালিত। সামান্য যে ক’টি মসজিদ রাষ্ট্রীয় ও সরকারী স্থাপনায় রয়েছে এসবও পরোক্ষভাবে জনসাধারণের টাকায়ই নির্মিত। মসজিদ নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগ-কোরবানী আন্তরিকতা ও কৃতিত্ব বিশ্বে নজিরবিহীন। বিশ্বের এত অল্প আয়তনের আর কোনো ভূখণ্ডে এত সংখ্যক মসজিদ নেই।
বাংলাদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ করছেন। রাজধানী ঢাকাতে সাড়ে সাতশ’ বছর আগের সুলতানী মসজিদ বাহাদুর শাহ পার্কের দক্ষিণে। একই সময়কাল বা কিছু ব্যবধানে হাইকোর্টের মাজার মসজিদ, এরপর বিনাত বিবি মসজিদ নারিন্দা। মুঘল আমলের বহু মসজিদ। ষাটের দশকের বায়তুল মোকাররম মসজিদ উল্লেখযোগ্য। আল্লাহর ঘর নির্মাণের জন্য মানুষ নিজের মহামূল্যবান সম্পত্তি ও অর্থ খুশি মনে দান করেছেন।
কেবল মসজিদ নয়, পারিপার্শ্বিক জরুরি স্থাপনা, মকতব, হিফজখানা বিশ্রামাগার, মুসাফিরখানা ইত্যাদি নিয়ে একেকটি কমপ্লেক্স গঠিত হয়। এমন মসজিদের সংখ্যাও লক্ষাধিক। এমন জায়গায়ও প্রাচীন মসজিদ আছে যেখানে বর্তমানে প্রতি শতাংশ জায়গার দাম কয়েক কোটি, প্রতি কাঠার দাম কোটি কোটি টাকা। অভিজাত আবাসিক এলাকায় যেখানে একটি প্লটের দাম শত কোটি টাকারও বেশি। যেখানে অধিক মূল্যের জন্য ইউটিলিটি বিভাগ যেমন বিদ্যুৎ সাব স্টেশন কিংবা ওয়াসা পানির পাম্প বসানোর মতো একটি খালি মাটির টুকরো কেনার সাহস পায় না, সেখানে ত্যাগী দানবীর মানুষের দানকৃত জায়গায় বিশাল সব মসজিদ ও নামাজখানা রয়েছে।
দামী এ জায়গাগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর বান্দারাই দান করে গিয়েছেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত ঘোষণায় তারা জানতে পেরেছেন মহানবী (সা.)-এর এ অমূল্য বাণী, মান বানা লিল্লাহি মাসজিদা বানাল্লাহু লাহু বাইতান ফিল জান্নাত। যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশি করার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহতাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি অট্টালিকা নির্মাণ করবেন। (সহীহ বুখারী : ৪৫০)। বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরে বহু দামি জায়গা এমন রয়েছে যেখানে সুপার মার্কেট, আবাসিক ভবন বা কৃষি খামার করার জন্য মানুষ জমি পায়না অথচ আল্লাহর বান্দারা সেখানে আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদ কায়েম করেছেন। পাশে আরো অনেক কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান করেছেন।
এ দেশের গ্রামেগঞ্জে মসজিদ মাদরাসার স্থায়ী আয়ের জন্য বহু জমি ওয়াকফ করা আছে। রাজধানীর অনেক জায়গা, মার্কেট ও স্থাপনা মসজিদ মাদরাসা ও এতিমখানার নামে ওয়াকফ করা থাকলেও বর্তমানে তা বেদখল হয়ে গেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে এগুলো স্বার্থান্বেষী মহল জবরদখল করে খাচ্ছে। নামমাত্র টাকা বা অংশ মসজিদ মাদরাসায় দিয়ে সিংহভাগ বারো ভুতে খেয়ে ফেলছে। এসবই দুনিয়া লোভী ও নৈতিকতাহীন কথিত সমাজপতি নেতাদের ডার্টি পলিটিক্স বা নোংরা রাজনীতির ফসল। তাই মসজিদকে রাজনীতির ঊর্দ্ধে রাখার বিকল্প নেই।
মসজিদকে রাজনীতির কলুষ থেকে মুক্ত রাখতেই হবে। সমাজের সবাইকে এ কথাটি জোর দিয়ে বলতে হবে, মসজিদ নিয়ে রাজনীতি নয়। মসজিদ নির্মাণ ও আবাদ করা লোকেদের কোয়ালিটি আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেই মহান আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : তাওবা : ১৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।