বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফ চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ত্ব-হা তার দুই সঙ্গী ও গাড়িচালককে নিয়ে এই বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে আট দিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
এ ঘটনারই জের ধরে সিয়ামকে চাকরিচ্যুত করেছে মোবাইল ফোন কোম্পানি অপো। সিয়াম রংপুরে অপো’র মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
রোববার (২০ জুন) দুপুরে নিজের চাকরি হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিয়াম ইবনে শরীফ। ত্ব-হা নিখোঁজ এবং আত্মগোপনে থাকার ঘটনায় ১৯ জুন শনিবার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সিয়াম বলেন, আমার বন্ধু আবু ত্ব-হাসহ চারজন গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, এটা আমাকে জানানো হয়নি। এ কারণে ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন ছিলাম। অন্য বন্ধু-বান্ধবদের মতো ত্ব-হার সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধারের পর জানলাম, সে আমাদের গ্রামের বাড়িতেই আত্মগোপনে ছিল। আমার মা তাদের সেখানে লুকিয়ে থাকার ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানায়নি। অথচ এখন অভিযোগ করা হচ্ছে, আমি নাকি তাদেরকে লুকিয়ে রেখে মানববন্ধন করেছি। এটা মিথ্যা অভিযোগ, আমি কিছুই জানতাম না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সিয়াম বলেন, আমার কোনো অপরাধ নেই। ত্ব-হা আমাদের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা এবং আমি তার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলাম বলেই চাকরিটা হারালাম।
সিয়াম আরও জানান, ত্ব-হা প্রায়ই আমাদের বাড়িতে যেত। সে আমার স্কুল এবং কলেজ ফ্রেন্ড। আমাদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠার অনেক স্মৃতি রয়েছে। খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের মধ্যে। প্রায়ই আমাদের বাড়ি যেত। এবার সে নাকি আমার মাকে অনুরোধ করেছিল, তাদের থাকার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য। পুলিশ ত্ব-হাকে উদ্ধারের পর এটা জানতে পেরেছি।
সিয়ামের মা নিশাদ নাহার সাংবাদিকদের বলেছেন, ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা সাত দিন এই বাড়িতে থাকলেও আশপাশের কেউ জানত না। এমনকি তার ছেলে সিয়ামও বিষয়টি জানত না। ত্ব-হা এখানে এসে বলল, আমাকে দুজন লোক ফলো করছে, আমরা এখানে কিছুদিন থাকব। সে আমার ছেলের সঙ্গে রংপুরে এসএসসি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছে। তারপর দুজন দুই কলেজে পড়ত। কিন্তু একসঙ্গে চলাফেরা করত। তারপর ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন দুজন একসঙ্গে চলত। আর ত্ব-হা আমার বাসায় এর আগে অনেকবার এসেছে। ও এখানে ছিল-এটা আমার ছেলেকেও বলতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু পরে আমি ত্ব-হাকে বলেছি, যেহেতু মিডিয়ায় তোমাদের নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, তোমরা এবার যাও। তারপর তারা চলে গেছে।
একই দাবি করেছেন রংপুর মহানগর পুলিশের ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকার পথে রওনা হন আবু ত্ব-হাসহ আব্দুল মুহিত আনসারী, ফিরোজ আলম ও গাড়ি চালক আমির উদ্দিন ফয়েজ। ঢাকার গাবতলী পৌঁছালে ত্ব-হার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সেখান থেকে আবার গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে চলে যান তারা। সেখানে বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করেন। এ সময় বন্ধু সিয়াম বাসায় ছিলেন না।
পুলিশের দাবি, আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা নিখোঁজ হননি, তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। এর নেপথ্যে আবু ত্ব-হার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কিছু কারণ রয়েছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করতে চাইছে না পুলিশ।
উল্লেখ্য, ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে আবু ত্ব-হাসহ চারজন নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ উঠে। আবু ত্ব-হার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকার গাবতলী থেকে তারা নিখোঁজ হন। এ সময় ত্ব-হার সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। পরে তার সন্ধানের দাবীতে রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মানব বন্ধন হয়।
পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কোতয়ালী থানায় নিয়ে আসেন। সেখান থেকে শুক্রবার দুপুরে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত সোয়া ৯টার দিকে মহানগর আমলি আদালতে নেয়া হয়। এরপর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক কেএম হাফিজুর রহমানের কাছে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গী আব্দুল মুহিত ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন।
বিজ্ঞ আদালত ‘স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে’ যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের কাছে নিজ নিজ জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।