বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এক অনন্য, অসাধারণ, বিস্ময়কর ও ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিরল ধর্মীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুসলিম দুনিয়ার ইতিহাসে মডেল মসজিদ নির্মাণের এটি হচ্ছে পহেলা অপূর্ব দৃষ্টান্ত। চলতি বছরের ১০ জুন (২৮ শাওয়াল) তারিখটি বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণের ইতিহাসে সোনালী হরফে লিখিত থাকার মতো বৈপ্লবিক ঘটনা। এ ঘটনার জন্ম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে নির্মাণাধীন ৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হওয়া ৫০টি মসজিদের উদ্বোধন করেন তিনি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজস্ব অর্থায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে। এটাই হচ্ছে প্রথম কোনো সরকারের একই সময়ে এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণ, যা বিশে^ বিরল।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে অহরহ মুসলমানদের মসজিদ অবমাননা ও ধ্বসের ঘটনা ছাড়াও বিশে^র নানা দেশে একই ঘটনাবলি ঘটেছে। আবার নানা দেশে মসজিদ নির্মাণের সুসংবাদও কম নয়। শতকরা ৯২ জন মুসলিম জনসংখ্যার এই দেশে তিন লক্ষাধিক মসজিদ রয়েছে বলে জানা যায়। এ দিক থেকে বাংলাদেশ মসজিদের দেশ হিসেবে বহু আগেই পরিচিতি লাভ করেছে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার সরকার আরো ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে যে চমক সৃষ্টি করেছেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর এবং অনেকের জন্য ঈর্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য এবং আমরাও জানাই অভিনন্দন-মোবারকবাদ।
৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এগুলোর যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত করেছেন সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে মসজিদের এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা হবে। এ দেশেও মসজিদ সম্পর্কে যাদের মন পরিষ্কার নয় এবং আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, আশা করা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ নির্মাণের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং ইসলাম সম্পর্কে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বক্তব্য তারাও অনুধাবন করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে মসজিদের গুরুত্বের ওপর যে অসাধারণ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা প্রত্যেকটি মুসলিম হৃদয়কে নাড়া দেবে। তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের সাথে সকলেই একমত হবেন যে, তিনি ‘লেবাস নয়, ইনসাফের ইসলামে বিশ^াসী’ হওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মডেল মসজিদ নির্মাণের যে সব উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তা তাঁর সুস্থ চিন্তা চেতনা সমৃদ্ধ, গভীর ইসলামী চিন্তা ধারারই বহিপ্রকাশ।
তাঁর সুউচ্চ চিন্তা ধারার এরূপ মডেল মসজিদ সমাজে অপরাধ প্রবণতা দমন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং তাতে একটি আদর্শ সমাজ গড়ে উঠতে পারে। এসব মসজিদের মাধ্যমে প্রচলিত বহু সামাজিক অন্যায়, বঞ্চনা এবং নানা কুসংস্কারেরও অবসান ঘটা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী এসব মডেল মসজিদ কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়া প্রত্যাশিত ও পরিকল্পিতভাবে কার্যকারিতা প্রদর্শণ করতে পারলে তা অনুকরণীয়-অনুপম আদর্শ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
মডেল মসজিদ উদ্বোধনের বিষয়টি খুবই আনন্দের এবং ধন্যবাদার্হ। তবে এসব মসজিদ নির্মাণে বিভিন্ন স্থানে কিছু অনিয়ম, দুর্নীতিরও অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টির আড়ালে থাকার কথা নয়। মসজিদগুলোকে যেমন রাজনীতির প্রভাব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে তেমনি দুর্নীতিমুক্তভাবে এসব আল্লাহর ঘর পরিচালনার জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মসজিদের আয় ব্যয় ও যাবতীয় পরিচালনা কার্যে অপচয় ও দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং মসজিদকে যেন কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত বহু মসজিদ কমিটি সম্পর্কে নানা অভিযোগের কথা শুনা যায়। মসজিদগুলোতে মতবাদি ঝগড়া বিবাদেরও অন্ত নেই। আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, মডেল মসজিদগুলো সাবেক বিদ্যমান মসজিদগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উম্মতকে আরো বহুধাবিভক্ত না করে। এ জন্য বিশেষ প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যোগ্য, নিরপেক্ষ ইমাম-খতিব নিয়োগ করা এবং ভালো, সৎ মোওয়াজ্জেন রাখা। মসজিদ কমিটিকে রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে।
মডেল মসজিদ নির্মাণের যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা যেন কেবল মসজিদের উন্নয়ন কল্যাণেই ব্যবহৃত হয়, তাতে কোনোরূপ তসরুফ অনিয়ম যেন না হতে পারে, সে দিকটির প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা মসজিদের অর্থ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হলে অথবা তার অপচয় করলে খোদায়ী গজবের আশংকা রয়েছে। অর্থাৎ- মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখতে হবে এবং অন্যায় দুর্নীতি কে কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। কেননা তাতে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যও মাটি হয়ে যেতে পারে।
বিনা দ্বিধায় একথা বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুসলমানদের সৌভাগ্য, দেশের ইসলাম দরদি প্রধানমন্ত্রী মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে এমন একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যা বিশে^ প্রথম ও একক। এ জন্য তিনি সকলের অভিনন্দন ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। স্বীকার করতে হবে যে, বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন করে ইসলামী প্রকাশনার ক্ষেত্রে যে বিপ্লব সৃষ্টি করে গিয়েছেন, তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন, তিনি তার ইসলামী কীর্তিমালার মধ্যে মডেল মসজিদ স্থাপন করে ইসলামী ইতিহাসে নব দিগন্তের সূচনা করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।