Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাইকগাছার শাহাপাড়া এলাকা এখন পানির নিচে

কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি, ত্রাণ পৌঁছায়নি এখনো

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে
খুলনার পাইকগাছা থানার দেবদুয়ার গ্রামের শাহাপাড়া এলাকা এখন পানির নিচে। একফোঁটা ত্রাণ পৌঁছায়নি এখানে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে দুটি ইটভাটা, দুই শতাধিক ছোটবড় মাছের ঘের, কাঁকড়ার হ্যাচারি, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও গবাদিপশু। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ঐ এলাকার শতাধিক পরিবার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহাপাড়া এলাকার রক্ষাবঁাঁধ কেবা কারা রাতের আঁধারে কেটে দিয়েছে। ফলে পূর্ণিমার ভরা গোনে মুহূর্তের মধ্যে জোয়ারের পানি হু হু করে গোটা এলাকা প্লাবিত করে। রাতের আঁধারে ঘেরের টং ঘরে ও বসত বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা নারী- পুরুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এসময় পানির তোড়ে ভেসে যায় এস এ কে ইটভাটা, বি এ কে ব্রিকস, শত শত মৎস্য ঘের, কাঁকড়ার খামার, পুকুর, মাটির দেয়ালের ঘর ও ফসলি জমি। হঠাৎ পানি আসায় গরু- ছাগল, হাঁস-মুরগি ভেসে যায় এবং অনেক হাঁস-মুরগি ছাগল মারা যায়। গত ৩ দিনে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে কয়েক কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ইটভাটার মালিকদের কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রান্তিক ঘের মালিকরা এই ৩ দিনে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে শাহাপাড়ার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী মান্নান গাজী (৫০) বলেন, দুই বিঘা পকেট ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় আমাকে এখন পথে বসতে হবে। সমিতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। আব্দুল করিম গাজী জানান, পোনাওয়ালাদের কাছ থেকে বাকিতে পোনা কিনে ঘেরে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভরা মৌসুমে যে ক্ষতি হয়ে গেল তাতে কোনোভাবেই পোনার টাকা শোধ করতে পারব না। আমাকে এ বছর আবারো ঋণ হতে হবে। ভাটার মালিক মহিউদ্দিন খান বলেন, এ বছরও ৮-৯ লাখ টাকা খরচ করে ক্লিনিং-এর কাজ করিয়েছি। পুরো ভাটা এখন পানির নিচে। এতে আমার প্রায় ১৮-২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটি চক্র নাশকতামূলকভাবে বাঁধ কেটে দেয়ায় এ প্লাবণের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও র‌্যাব এ ঘটনায় সালাম ও রাজ্জাক নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল বুধবার বেড়িবাঁধের ওপরে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিরা জানান, আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি ত্রাণ পাইনি। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো আমাদের হাতে কিছু পৌঁছায়নি। প্রান্তিক মৎস্য চাষিরা বলেন, প্রতিদিন মাছ ধরি বিক্রি করি আর চাল-ডাল-আটা কিনে খেয়ে সংসার চালাই। কিন্তু এখন আমাদের চরম দুরবস্থা। তারা এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এব্যাপারে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, সত্ব¡র এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এলাকার নারী-পুরুষ গত দু’দিন প্রাণান্ত চেষ্টা করে বাঁধ আটকাতে পারেনি। গতকাল যেটুকু বাঁধ আটকানো হয়েছিল জোয়ারের পানিতে তা আবার ভেঙে গেছে। এই এলাকার যেসব পরিবার শুধুমাত্র মাছের ঘেরের ওপর নির্ভরশীল তাদের দৈন্যদশার শেষ নেই। সারা বছরের আয় হয় এই পকেট ঘের থেকে। এই মুহূর্তে তাদের জীবিকার শেষ আশাটুকু এখন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। দিশেহারা মানুষগুলো সংবাদকর্মী দেখলেই ছুটে আসছে তাদের দুর্দশার কথা জানাতে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। ফলে এলাকার শত শত মানুষের আতঙ্ক তাই কাটছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাইকগাছার শাহাপাড়া এলাকা এখন পানির নিচে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ