বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আবু হেনা মুক্তি : ‘রিকশা চালিয়ে এত কষ্ট করে আয় করে ঠিকমত বাজার ও মাছ না কিনে ওষুধ কিনি। কিন্তু তা ভেজাল শুনে মনের কষ্ট রাখার জায়গা নেই।’ অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে অভিযোগ করলেন চুকনগরের রিকশাচালক মুনসুর আলী (৫৬)। কাঁচা-পাকা দাড়ির শীর্ণ কায়ার এই খেটে খাওয়া রিকশাচালকের মনের প্রশ্ন যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে আয় হয় তা দিয়ে বৃদ্ধ মাতা ও নিজের অসুস্থ স্ত্রীর জন্য কেনা ওষুধগুলো কি ভেজাল না আসল। রোগ নির্মূলের বদলে সে আরো আক্রান্ত হচ্ছে কি না জানে না। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খাচ্ছে কি না বোঝে না। এমনই লোকের সংখ্যা অসংখ্য। সর্বশেষ গত রবিবার খুলনায় ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ আটক করে নষ্ট করার ঘটনা শুনে অসংখ্য মানুষের মনের মাঝে এমনই প্রশ্ন আবার জেগেছে।
সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের কয়েক হাজার ওষুধের দোকান এবং কয়েক শত হাতুড়ে ডাক্তার রয়েছে। বহু গ্রামেগঞ্জে মুদিখানা দোকানে ওষুধ বিক্রি হয়। শহরে ওষুধের দোকানে সেলসম্যান থাকতে থাকতে গ্রামে এসে ডাক্তার সেজে চেম্বার খোলে। চেম্বারে রোগী দেখার পাশাপাশি চলে দেশী-বিদেশী ওষুধ বিক্রি। প্রেসক্রিপশন ছাড়া হরহামেশা চলছে ওষুধের বেচা-কেনা। মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং ভেজাল ওষুধে সয়লাব করেছে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন দোকান। ভারতীয় ফুড সাপিমেন্ট নিষিদ্ধ ওষুধ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। আর এসব দেখভালের জন্য খুলনা ওষুধ প্রশাসনের চারজন কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে যে কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে তাতে জনস্বাস্থ্য রীতিমত হুমকির সম্মুখীন। মাত্র চার-পাঁচজন লোকবল দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক ওষুধের দোকান এবং জীবন রক্ষাকারী এই কর্মকান্ডের মনিটরিং করা আদৌ সম্ভব নয়।
সূত্রমতে, মহানগরী খুলনার প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা পাইকারী ওষুদের বৃহৎ বাজার হেরাজ মার্কেটে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালায়। অভিযানে জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। অননুমোদিত এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অভিযোগে হেরাজ মার্কেটের ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে হেরাজ মার্কেটের ১৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ মেয়াদ উত্তীর্ণ দেশী-বিদেশী ওষুধ ও সিরাপ এবং বিভিন্ন মলম জব্দ করা হয়। এছাড়া ওষুধ কোম্পানী থেকে চিকিৎসকদের দেয়া বিভিন্ন স্যাম্পল এবং যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সকল ওষুধ পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। এ সময় অনেক দোকান তড়িঘড়ি করে বন্ধ করে দেয়া হয়। স্বনামধন্য এই ওষুধ মার্কেটের যদি এ অবস্থা হয় তাহলে শহর বন্দর গ্রামে গঞ্জের ওষুধের দোকানের কি অবস্থা এমন প্রশ্ন শুধু রিকশাচালক মুনসুর আলীর নয়। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যেন তাদের জীবনে ব্যুমেরং না হয় এমন নিবেদন সংশ্লিষ্টদের। নগরীর হেরাজ মার্কেটে এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের অননুমোদিত ওষুধ জব্দ ও জরিমানা আদায়ের পরও কি থেমে থাকবে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক কর্মকাÐ সে প্রশ্নও সচেতন মহলের।
ওষুধ প্রশাসনে জনবল সংকটের কারণে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ, ভেজাল ও নামসর্বস্ব ওষুধ কেনাবেচা। কোন কোন ক্ষেত্রে ফুড সাপিমেন্ট বিক্রি করেও জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।