বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইউরোপ আমেরিকার গির্জাগুলোর কত আয়, কত সম্পত্তি। তাদের অনুকূলে উইল করা এসেটের মূল্য কত। ভারতের বিশেষভাবে খ্যাত মন্দিরগুলোর আয়, স্বর্ণ ভাণ্ডার ও সম্পদের পরিমাণ কত। এ নিয়ে তো সেদেশের মিডিয়া ও সুশীল সমাজ বিরূপ মন্তব্য এবং প্রচারণা চালায় না। ভারতে ৬ লাখেরও বেশি বড় মন্দির রয়েছে। কিছু মন্দিরের বার্ষিক আয় ৫০০ কোটি রুপিরও বেশি। বিখ্যাত কিছু মন্দিরের স্বর্ণ অর্থ সম্পদের মোট মূল্য টাটা, বিড়লা, আম্বানি তিন ধনকুবেরের সম্মিলিত অর্থ বিত্ত ও সম্পত্তির চেয়েও বেশি বলে ভারতীয় মিডিয়া থেকেই জানা যায়। কিন্তু এ নিয়ে তো হিন্দুসমাজের কোনো বিদ্বেষ বা অপপ্রচার নেই। অথচ বাংলাদেশে এক শ্রেণির মুসলিম নামধারী লোক অবিরাম মসজিদ মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামান্য পরিমাণ জরুরি আয় এবং চাঁদা নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে। যেখানে সামান্য কিছু মসজিদ মাদরাসা স্বচ্ছলভাবে চলে আর ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠানে বারমাস লেগে থাকে টানাপোড়েন ও আর্থিক সমস্যা। হাজারো মাদরাসার ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা।
গত পাঁচ প্রজন্মের কজন লোক এমন আছেন যারা মসজিদের মকতবে যাননি। যারা নামাজ দোয়া কালেমা কালাম জানেন, তারা তা মসজিদ থেকে, মাদরাসায় পড়ে আসা আলেমদের কাছ থেকেই এসব শিখেছেন। বাংলাদেশের নারী পুরুষ মসজিদ মাদরাসা মকতবের হুজুরদের কাছ থেকেই প্রাথমিক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। তারা কোনোদিন মসজিদ মাদরাসা বিরোধী হন না। সাহায্য সহযোগিতা তারাই করে থাকেন।
হাতেগোনা যে যৎসামান্য হতভাগা মসজিদ মকতবে যায় না কিংবা পারিবারিক ভাবেও বিশেষ ব্যবস্থায় দীনি শিক্ষার আলো পায়নি, এরাই মসজিদ মাদরাসা ও আলেম সমাজের প্রতি বিষোদগার করে বেড়ায়। তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির অপচেষ্টা চালায়। মুসলমানদের এখনই সচেতন হতে হবে। এদের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হয়ে এদের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুসলমান হিসাবে গড়ে তোলার স্বার্থেই সবাই মিলে তা করতে হবে।
বিভাগীয় শহর ও সিটি কর্পোরেশনের নামমাত্র ব্যবস্থার কথা বাদ দিলে এমন কোনো জেলা উপজেলা বা শহর এমন নেই যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো পাবলিক টয়লেট আছে। আপনি দূরপাল্লার কোনো ভ্রমণে যাবেন, খুব কম মহাসড়কেই কোনো যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা থাকে। দেশব্যাপী পথিকদের ফ্রেশ হতে হয় লাখো মসজিদের অজুখানায়। টয়লেট, পানি, বিশ্রাম ও ইবাদতের ফ্রি ব্যবস্থা কেবল মসজিদে।
ধর্মীয় প্রেরণা থেকে বাংলার মানুষের এসব খেদমতের জন্যও তো মানুষের দানের টাকা ব্যবহৃত হয়। যেখানে বাজেটে মসজিদ নির্মাণ, পরিচালনা বাবত কোনো অর্থ বরাদ্দ হয় না, সেখানে অর্থ সংক্রান্ত অপপ্রচার নেয়ামতের না-শোকরি ছাড়া আর কী হতে পারে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেদের অর্থব্যয়ে মসজিদ মাদরাসা করেন এবং চালান আর এসব নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করে কিছু ইসলামবিদ্বেষী অপোগণ্ড।
একশ্রেণির মিডিয়া প্রচার করে ধর্মীয় সামাজিক জনকল্যাণ কাজে চাঁদা দাতাদের তালিকা হচ্ছে বলে। নেক কাজ ও সদকায়ে জারিয়া তাদের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ। দান করা এদের দৃষ্টিতে অপরাধ। বিশ্বজুড়ে চ্যারিটেবল ওয়ার্কে কর মওকুফ হলেও, বাংলাদেশের বর্ণচোরা কিছু মিডিয়া দান সদকাকারীদের কর গোয়েন্দাদের ভয় দেখায়।
অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, কাগজে পত্রে ব্যাংক ডাকাতি, অপরিমেয় কালো টাকা, মানি লন্ডারিং, জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। এসব ক্ষেত্রে এরা চোখে ঠুলি আর মুখে কুলুপ এঁটে অন্ধ বোবা সাজে। এরা শয়তানি শক্তির চেলা। এরা চায়, মসজিদ মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাক। ইসলাম এবং কোরআন শিক্ষা থেকে জাতি বঞ্চিত ও বিমুখ হোক।
গত ১৫ মাস যাবত করোনা আতঙ্কে পৃথিবীর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে আছে। মসজিদ মাদরাসার আয়ও কমে গেছে। দু’টি রমজান গিয়েছে লকডাউন ও স্থবিরতায়। মানুষের দান খয়রাত সদকা জাকাত দরিদ্ররা তেমন পায়নি। মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং এতিমখানা রমজানে আশানুরূপ সহায়তা পায়নি।
কোরবানী ঈদে পশুর চামড়া দিয়ে যেসব দরিদ্র অসহায় শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চলত। তারাও সিণ্ডিকেট ও মাস্তানদের হস্তক্ষেপে কোরবানীর পশু এবং এর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। আসন্ন কোরবানীর ঈদেও অবস্থা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এখন জোর প্রচারণা চলছে, মাদরাসায় জাকাত সদকা চাঁদা দান করবেন না।
এমতাবস্থায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিত, অপপ্রচারে কান না দিয়ে, করোনার সময় ধর্মীয় প্রতিটি কাজকে উৎসাহিত করা। সংশ্লিষ্ট লোকগুলোকে বাড়তি সহযোগিতা দিয়ে, সচল এবং সক্ষম রাখা। ধর্মীয় সকল কর্মতৎপরতাকে স্থিতিশীল রাখা। কারণ, মসজিদ মাদরাসা বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত হলে এ দেশে ইসলামী সমাজ সংস্কৃতির বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। ৯০ ভাগ জনগণের স্বকীয় অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
দীর্ঘ মেয়াদে এ দেশের ভূখণ্ড, রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মসজিদ মাদরাসা ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের বিপক্ষে বিরূপ মনমানস তৈরিতে যারা কাজ করছে তারা মূলত এ দেশ ও জাতির অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত শক্তিটিকে আঘাত করছে। সে বিশ্বাস চেতনা ও আধ্যত্মিক শক্তিমত্তা ধরে রাখার জন্যই আমাদের মসজিদ মাদরাসা ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের অস্তিত্ব শক্তি ও ইমেজ ধরে রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।