বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মসজিদ মাদরাসার টাকা যায় কই? এ প্রশ্নটি সাধারণত তারাই বেশি করেন, যারা নিজেরা টাকা পয়সা দেন না। যাদের টাকা পয়সা মসজিদ মাদরাসায় খুব একটা আসে না। যারা মসজিদ মাদরাসায় টাকা পয়সা দেন তারা এসব টাকা কোথায় যায় তা জেনেই দেন। তাছাড়া, মসজিদ মাদরাসা যাদের দানে চলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই এসব চালান। কাছ থেকে সব দেখেন জানেন এবং নিজেরা চাঁদা তুলে এসবের বাড়তি প্রয়োজনও পূরণ করেন। এভাবেই লাখো মসজিদ নির্মিত হয়েছে। দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছ্বতা রয়েছে মসজিদ মাদরাসার হিসাবে নিকাশেই।
যুগ যুগ ধরে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজের কষ্টার্জিত অর্থ সম্পদ ও মূল্যবান সম্পত্তি দিয়ে মুসলিম সমাজের জন্য জামাতে নামাজ, কোরআন শিক্ষা ও দীনি তালিমের ব্যবস্থা করে আসছেন। এসবের প্রতিষ্ঠা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সাথেও সমাজের সর্বাপেক্ষা আস্থাভাজন আমানতদার ব্যক্তিরা জড়িত। যে জন্য ক্রমান্বয়ে আজ বাংলাদেশের ছোট বড় মসজিদ ও নামাজখানার সংখ্যা চার লাখের ওপরে গিয়ে পৌঁছেছে। এসবই সাধারণ জনগণের দান সহায়তায় নির্মিত হয় এবং সারাজীবন সচল থাকে।
স্থাপিত মসজিদের নিয়মিত ব্যয়ের মধ্যে পানি, বিদ্যুৎ, মাইক, পরিচ্ছন্নতা, মেনটেইনেন্স, ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, খাদেম ও কর্মীদের বেতন ভাতা শামিল। এসব ব্যয় দানবাক্স, নামাজ পরবর্তী বাক্স চালনা, নামাজিদের মাসিক চাঁদা, এককালীন দান ইত্যাদি থেকে আসে। প্রায় মসজিদেই যখন তখন কমিটির দায়িত্বশীলেরা আয় ব্যয়ের হিসাব মুসল্লিদের জানিয়ে দিতে সক্ষম। অনেক মসজিদে সাপ্তাহিক আয় ব্যয়ের হিসাব প্রতি সপ্তাহে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
জনগণের দান মসজিদের দায়িত্বশীলদের কাছে আমানত। দান যথাযথ জায়গায় খরচ না করলে বা তার সঠিক ব্যবহার না হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমানতদারিতাকে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সূরা আল মুমিনুন : ৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে যথাযথভাবে প্রত্যর্পণ কর।’ (সূরা নিসা : ৫৮)।
শহরের বিখ্যাত ও বড় বড় মসজিদ ছাড়া সাধারণ লাখো মসজিদ ধর্মপ্রাণ মানুষের ত্যাগ সাধনা ও কষ্টের বিনিময়ে চলে। বিশেষ করে মসজিদ সংশ্লিষ্ট লোকজন মসজিদের কাজ ও খেদমতকে পেশা হিসাবে না দেখে, দেখেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যম হিসাবে। নিজেকে এ কর্মক্ষেত্রে আবদ্ধ রাখার বিনিময়ে, তারা জীবিকার জন্য খুবই নগণ্য সম্মানী পান ঠিকই কিন্তু বর্তমান বাজারে এর আর্থিক মূল্য মোটেও উল্লেখযোগ্য না।
হাজারো মসজিদ এমন আছে যেখানে একবছরেও ইমাম মুয়াজ্জিন খাদেমগণ নির্ধারিত সম্মানীটুকু পান না। বাকি বকেয়া ও ভেঙে ভেঙে সামান্য কিছু নেয়ার ওপরই সন্তুষ্ট থেকে দীনি কাজ চালু রাখেন। নিজের পার্থিব চাওয়া পাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে মসজিদ আবাদ রাখার দায়িত্বটুকু নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।
একই কথা মাদরাসার ব্যাপারেও বলতে হয়। সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে হাজারো আলেম হাফেজ ও কারী সাহেবগণ সমাজের মানুষকে ইসলামী জীবন যাপনের উপযোগী জ্ঞান ও শিক্ষা দান করে থাকেন। প্র্যাকটিসিং মুসলিম হওয়ার জন্য এই শিক্ষার বিকল্প নেই। লাখো শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করে আবারো আলেম হাফেজ ইমাম হয়। দেশের ইসলামী অঙ্গনের লাখো কর্মশক্তি মাদরাসা থেকেই তৈরি হয়ে আসে।
অতীত কাল থেকে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেদের অর্থ সম্পত্তি দিয়ে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি সুরক্ষা ও চর্চার এ ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। সমাজের সুবধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বিরাট এক অংশ মাদরাসায় বিনা পয়সায় থাকা খাওয়া বইপত্র পোষাক ও চিকিৎসাও পেয়ে থাকে। দেশে বহু কওমী মাদরাসা আছে যেখানে যথারীতি লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা রয়েছে। কোনো কোনো মাদরাসায় ৫/৭ হাজার শিক্ষার্থীও আবাসিক হলে থেকে ফ্রি খানার সুবিধা পাচ্ছে।
মধ্যমানের মাদরাসায়ও ৩/৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রতিদিন তিনবেলা রান্নাবান্না করতে হয়। মাসে শত শত মন চাল ডাল লাগে। এসবই মানুষের সাধারণ চাঁদা, দান খয়রাত, জাকাত সদকা থেকে আসে। বহু বিত্তবান ব্যবসায়ী আছেন যারা সবসময় মাদরাসার খোঁজ খবর রাখেন। এতিম ও অসহায়রা না খেয়ে থাকবে তা তারা মেনে নিতে পারেন না। যত চাল ডাল প্রয়োজন দিয়ে থাকেন। অনেকে টাকা পয়সা দেন। কারণ এতিম মিসকিন ও অভাবি মানুষকে সাহায্য করা ইসলামের বিধান। বিশেষ করে দীনি ইলম অন্বেষী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা মানে ইসলামী সমাজ ও সংস্কৃতি বিকাশে ভূমিকা রাখা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।