দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
একমাত্র ইসলামই নারী-পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। কারণ ইসলাম মানবরচিত কোনো জীবন-ব্যবস্থা নয়; বরং আল্লাহ রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত দ্বীন ও শরীয়ত। আল্লাহ তাআলা সকল দুর্বলতা থেকে মুক্ত এবং অতীত ও ভবিষ্যতের সকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মীরাছের বিধান, যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার দেয়া বিধান ও নীতি।
মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে জীবিত আত্মীয়দের কার হিস্যা কতটুকু তা কুরআন মজীদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং তা অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন। এতে পুরুষের হিস্যা যেমন আছে তেমনি আছে নারীর হিস্যা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-“পিতা-মাতা এবং নিকটতর আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতামাতা ও নিকটতর আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে। তা অল্পই হোক বা বেশি, এক নির্ধারিত অংশ”।-সূরা নিসা : ৭
সাধারণত কুরআন মজীদে আহকাম ও বিধানের বিস্তারিত বিবরণ থাকে না, উসূল ও মূলনীতি থাকে, বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বিবরণ থাকে হাদীস শরীফে। যেমন কুরআন মজীদে নামাযের আদেশ করে বলা হয়েছে-‘নামায আদায় কর’। কিন্তু নামায আদায়ের পদ্ধতি, রাকাত-সংখ্যা ও বিস্তারিত মাসায়েল এসেছে হাদীস শরীফে। পক্ষান্তরে উত্তরাধিকারের বিষয়টি একেবারে ভিন্ন। প্রত্যেক ওয়ারিসের অংশ এক এক করে কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এর কারণ উল্লেখ করে পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতার অংশ উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা বলেছেন- “তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী তোমরা তা জান না। নিশ্চয় এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। -সূরা নিসা (৪) : ১১১
এ কারণেই মীরাছের নির্ধারিত হিস্যার উপর আপত্তি করা, জুলুম বা বৈষম্যের অভিযোগ তোলার অর্থ সরাসরি আল্লাহ তাআলার উপর অভিযোগ তোলা। আল্লাহ তাআলা মীরাছের বিধান সম্পর্কে বলেছেন-“এইসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করবে আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটা মহাসাফল্য। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমাকে লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।”-সূরা নিসা : ১৩-১৪
এ নিবন্ধে নারীর হিস্যা সংক্রান্ত যে বিষয়গুলোর উপর সামান্য আলোকপাত করতে চাই তা এই : ১. ইসলামের মীরাছ-ব্যবস্থায় নারীর হিস্যা সুসংরক্ষিত। অন্যকোনো ধর্ম, মতবাদ বা জীবনব্যবস্থায় এর দৃষ্টান্ত দেখানো যাবে না।
২. পুরুষকে নারীর দ্বিগুণ হিস্যা দেয়া হয়েছে বলে যারা ইসলামের এই বিধানের সমালোচনা করেন তারা এই বিধানটিকে খ-িতভাবে উপস্থাপন করেন। ৩. যেসব ক্ষেত্রে একজন পুরুষকে দু’জন নারীর সমান হিস্যা দেয়া হয়েছে তা যৌক্তিক ও স্বাভাবিক নীতিমালার কারণেই দেয়া হয়েছে।
১. ইসলামের মীরাছ-ব্যবস্থায় নারীর হিস্যা সুসংরক্ষিত
১. নারী মা হিসেবে কখনো পুরো সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ পায়, কখনো ছয় ভাগের এক ভাগ।
২. নারী দাদী ও নানী হিসেবে পুরো সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ পায়।
৩. নারী কন্যা হিসেবে কখনো পুরো সম্পত্তির অর্ধেক পায়, দুই বা ততোধিক কন্যা হলে সকলে মিলে তিন ভাগের দুই ভাগ পায়। আর ভাইয়ের সাথে থাকলে ভাইয়ের অর্ধেক পায়।
৪. নারী পৌত্রী হিসেবে দাদার সম্পদ থেকে কখনো অর্ধেক পায়, কখনো ছয় ভাগের এক ভাগ এবং পৌত্রের সাথে হলে পৌত্রের অর্ধেক পায়।
৫. নারী সহোদরা বোন হিসেবে কখনো অর্ধেক পায়। দুই বা ততোধিক হলে তিন ভাগের দুই ভাগ পায় এবং সহোদর ভাই সাথে থাকলে ভাইয়ের অর্ধেক পায়।
৬. নারী বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে কখনো অর্ধেক পায়, কখনো ছয় ভাগের এক ভাগ এবং একাধিক থাকলে তিন ভাগের দুই ভাগ পায়। ভাই সাথে থাকলে ভাইয়ের অর্ধেক পায়।
৭. নারী বৈপিত্রেয় বোন হিসেবে কখনো ছয় ভাগের এক ভাগ পায়, একাধিক থাকলে তিন ভাগের এক ভাগ পায়।
৮. নারী স্ত্রী হিসেবে কখনো চার ভাগের এক ভাগ, কখনো আট ভাগের এক ভাগ পায়। শরীয়তে নারীর নির্ধারিত অংশ অন্যভাবেও দেখানো যেতে পারে। যথাঃ ক. স্থায়ী ওয়ারিসদের মাঝে নারী ও পুরুষের সংখ্যা সমান ওয়ারিসদের মধ্যে নিকটবর্তীদের কারণে দূরবর্তীগণ কখনো অংশ কম পায়, কখনো সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়। কিন্তু ছয় প্রকারের ওয়ারিস এমন আছে, যারা কখনো বঞ্চিত হয় না। তাদের তিন প্রকার পুরুষ : পিতা, পুত্র ও স্বামী। আর তিন প্রকার নারী : মাতা, কন্যা ও স্ত্রী। এরা সকলেই স্থায়ী ওয়ারিস। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।