Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পথ নির্দেশ মীরাছ বণ্টনে কন্যার অধিকার

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যেসব রহস্য ও তাৎপর্য মীরাছের আসমানী বিধানের পেছনে সক্রিয় তা সম্যকরূপে অবগত আছেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তবে শরীয়তের নীতিমালা ও সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধির দ্বারা ইসলামের মনীষীগণ যতটুকু উপলব্ধি করেছেন তা-ও সত্যান্বেষীদের প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট।
এক পুরুষ দুই নারীর সমান অংশ পাওয়ার কারণ- একথা সুস্পষ্ট যে, কম-বেশি শুধু নারী বা পুরুষ হওয়ার কারণে নয়; বরং দায়িত্ব, খরচ ও মৃতের সাথে সম্পর্কের মতো গভীর ও মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। যারা দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রাপ্তি ও অধিকারের অভিন্নতার দাবি করেন তাদের বক্তব্যের অসারতা বোঝার জন্য অনেক বেশি জ্ঞান-বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না। তাদের দর্শন মেনে নিলে তো গোটা পৃথিবীই অচল হয়ে যাবে।
ধরুন একটি কোম্পানিতে কিছু পুরুষ এবং মহিলা কর্মরত আছেন। সেখানে প্রত্যেকের যোগ্যতা ও দায়িত্ব অনুসারে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা আবদুল করিম। তার বেতন ২০ হাজার টাকা। খালেদা ঐ প্রতিষ্ঠানের একজন সাধারণ কর্মচারী। তার বেতন ১০ হাজার টাকা। এখন কোনো নারীবাদী যদি এখানে নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্য দেখতে পান এবং এই বৈষম্য দূর করার দাবি তোলেন তাহলে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে? একই কথা উত্তরাধিকার বণ্টনের ক্ষেত্রেও চিন্তা করা দরকার। এখানেও পুত্র ও ভাইকে কন্যা ও বোনের চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে তাদের দায়িত্ব ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে ভিন্নতার কারণে। এই ভিন্নতাকে বিবেচনা না করে ‘নারী-পুরুষের সমান অধিকার’ নীতিতে সম্পদ বণ্টন করাটাই হবে বৈষম্য। একটি সর্বস্বীকৃত নীতি হল, “দায় অনুযায়ী প্রাপ্তি” এটাকে শরীয়তের ভাষায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ যার দায় বেশি তার প্রাপ্তি বেশি, যার দায় কম তার প্রাপ্তি কম। পরিবার, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব পুরুষের উপর। শত্রুর মোকাবেলা করার দায়িত্বও পুরুষেরই। পরিবার ও সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণ, তাদের চিকিৎসা ও বাসস্থানের দায়িত্বও পুরুষের উপর। নারীর উপর এমন কোনো দায়িত্ব অর্পণ করা হয়নি। বরং নারীর সকল খরচ পুরুষকে বহন করতে হয়। এমনকি যদি কোন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তাহলেও ইদ্দত চলাকালীন স্ত্রীর ভরণ- পোষণ ও থাকার ব্যবস্থা পুরুষের দয়িত্বে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর তাদেরকেও (তালাকপ্রাপ্তাদেরকে) বসবাসের জন্য সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয় তবে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান করে তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিবে। ... সামর্থ্যবান তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর যার সামর্থ্য কম সে সেই অনুযায়ী ব্যয় করবে।-সূরা তালাক : ৬-৭
সন্তান এবং সন্তানের মাতার খরচের দায়িত্ব পিতার উপর। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) সন্তানের পিতার উপর দায়িত্ব নিয়ম অনুযায়ী মাতার খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করা।-সূরা বাকারা : ২৩৩। মোহর আদায়ের দায়িত্ব পুরুষের উপর। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) আর তোমরা স্ত্রীদেরকে খুশিমনে তাদের মোহর দিয়ে দাও।-সূরা নিসা : ৪
বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে গেলে প্রদেয় মোহর ও অন্যান্য সম্পদ স্ত্রী থেকে ফেরত নেয়া নিষেধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও (সঙ্গত কারণে শরীয়তসম্মত পন্থায় তালাক ও নিকাহর মাধ্যমে) এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধনসম্পদ প্রদান করে থাক তবে তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না।-সূরা নিসা (৪) : ২০ স্ত্রীকে অঢেল সম্পদ দিলেও তা কিছুই নেয়া যাবে না। এই স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে আবারও মোহর পাবে। কিন্তু পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করলে সেখানেও তাকে দিতে হবে। মোটকথা পুরুষের উপর খরচের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। নারীর উপর তা করা হয়নি। তাছাড়া আরেকটি দিকও এখানে আছে। অনেকেরই হয়ত শুনতে ভালো লাগবে না, কিন্তু কথাটা বাস্তব। তা এই যে, পুরুষ দ্বারা বংশ প্রতিষ্ঠিত থাকে। পুত্র দ্বারা পিতার বংশ সংরক্ষিত হয়। কিন্তু কন্যা দ্বারা সংরক্ষিত হয় অন্যের বংশ। তদ্রূপ ভাই দ্বারা পিতার বংশ সংরক্ষিত হয়, আর বোন অন্যের বংশ বিস্তার করে। যার সম্পদ বণ্টন হচ্ছে তার বংশ যার দ্বারা সংরক্ষিত হবে সেই অধিক সম্পদের অধিকারী হবে-এটাই তো যুক্তিযুক্ত। নারীর ভরণ-পোষণ সবসময় পুরুষের জিম্মায়
* নারী যখন কন্যা তখন তার ভরণপোষণ পিতার জিম্মায়। * কন্যার বিয়ে দেয়া পর্যন্ত তার সকল খরচ পিতাকে বহন করতে হবে।
* বিয়ের সূত্রে নারী স্বামী থেকে মোহরের হকদার।
* তখন তার সকল খরচ স্বামীর উপর। তার ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা ও বাসস্থান যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করা স্বামীর কর্তব্য।
* নারী বিধবা হলে তার দায়িত্ব, পিতা, পুত্র ও ভাইয়ের উপর।
* নারী যখন মা, দাদী ও নানী তখন তার ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামী, পুত্র, পৌত্র ও পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নাতিদের উপর। মোটকথা, নারী যে কোনো স্তরেরই হোক না কেন সর্বাবস্থায় তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কোনো না কোনো পুরুষের উপর অর্পিত হয়েছে। নারী সর্বাবস্থায় পুরুষের সহায়তা ও দায়িত্ব দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাহলে পুরুষের দায়িত্ব, ঝুঁকি ও খরচের বোঝা অনেক বেশি। সুতরাং দায় অনুযায়ী তার প্রাপ্তিও বেশি হওয়াটাই সাম্যের দাবি। নারীর দায় নেই, তবুও অন্যান্য বিবেচনায় তাকে অর্ধেক দেয়া হয়েছে। এটা তার স্বতন্ত্র মালিকানা। যা সে জমা রাখতে পারে। আর পুরুষ পাচ্ছে দ্বিগুণ। কিন্তু এতে রয়েছে নিজের সংসারের ও তার সংশ্লিষ্ট নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব। এ দিক থেকে বিচার করলে পুরুষের প্রাপ্তি বেশি নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পথ নির্দেশ মীরাছ বণ্টনে কন্যার অধিকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ