বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাংলাদেশের সমাজে যা কিছু ভালো আছে, সুন্দর আছে, এ সবই ধর্ম ও নৈতিক মূল্যবোধ চর্চার ফল। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিমের দেশে যদি সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন পালন করা হতো তাহলে এ দেশটি হতে পারত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, হতাশামুক্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। আইন, বিচার ও সুশাসনের জন্যও ইসলামী বিধান মুসলমানদের জন্য অতি আবশ্যিক। যার প্রয়োগে দেশ ও জাতি হতে পারে দুর্নীতি, পাপাচার ও অপরাধমুক্ত। উপনিবেশিক আমলের আইন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে উন্নত ও সভ্য সমাজ গঠন করা সম্ভব হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যে জন্য এখন চারদিকে শুনতে হচ্ছে হতাশার বাণী। হিপোক্রেট সুশীলরা স্বীকার করুক আর নাই করুন, দেশের মানুষ নানামুখি সামাজিক সাংস্কৃতিক সঙ্কটে দিশেহারা।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন গত ৮ জুন ২০২১ সুপ্রিমকোর্টে শিশু ধর্ষণ মামলার এক আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সরকার পক্ষের আবেদনের শুনানিকালে বলেন, সামাজিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। যে কোনো বয়সের নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন বিষয়টি ভাবিয়ে তোলার মতো। সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হলো কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর এর বিচার হওয়া। অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীর বিচার হবে না, এমন পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়। সে জন্য যেকোনো অপরাধের বিচারটাকেই বড় করে দেখা হয়। বিচারহীনতা যেন না থাকে। ১০ জুন দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পাতায় প্রকাশিত রিপোর্টে এ বক্তব্য প্রকাশিত হয়।
সমাজকে সবাই মিলে খারাপ হতে দিলে সমাজ তো বসবাসের অনুপোযোগী হবেই। ধর্ষণ ও নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোরআন সুন্নাহর যে পরীক্ষিত কার্যকর ব্যবস্থা, নাগরিকদের যে মনোদৈহিক মডারেশন, এসবকে উপেক্ষা করে, এমনকি এসবের ধারক বাহক প্রচারকদের দিনের পর দিন অপমান করে, নাটক সিনেমা ও বক্তৃতায় তাদেরকে ঘৃণিত ভিলেন প্রমাণিত করে, সিন্ডিকেট করে সমাজ সংস্কারক আলেম উলামা পীর মাশায়েখ উস্তাদ মুরব্বী প্রবীণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে কি সমাজের কাঠামো বহাল থাকবে? যারা হাজার বছরের সাজানো সমাজব্যবস্থাকে আরো উন্নত সুসংহত ও নিরাপদ করার চেয়ে বরং গঠিত সমাজ কনটেক্সটকে ভেঙে নৈরাজ্য ও পশুতন্ত্র কায়েম করতে চায়, সে অপশক্তিটিকে রুখতে না পারলে তো বর্তমান সমাজও ধ্বংসের গহ্বরে নিমজ্জিত হতে বাধ্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানুষের সমাজের মনুষ্যত্ব ও সুস্থতার বিষয়টি এভাবে বলেছেন, তোমরা সর্বোত্তম সম্প্রদায়, মানবজাতির জন্য তোমাদের উন্মেষ। তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে, অসৎ কাজ প্রতিরোধ করবে আর আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাস রাখবে।
এখনো জাহেলি যুগের মতো ধর্ষণকে আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার বলে মনে করা হয়। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় লালিত গ্রুপ কর্তৃক অসহায় নারীকে অপমান ও গণধর্ষণ করা হয়। বিচারহীনতা ঘুষ দুর্নীতি যে সমাজে স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে। সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আল্লাহর গজবেই দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্য অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর অবশ্যই আযাব নাযিল করবেন। এরপর তোমরা যখন আল্লাহকে ডাকবে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না। (মিশকাত শরীফ : ৪৩৬)।
সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ দল, মানবজাতির জন্য তোমাদের উত্থান হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের জন্য নির্দেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ করো ও আল্লাহয় বিশ্বাস করো।’ একই সুরার ১০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোকজনকে) ভালোর দিকে ডাকবে ও সৎ কর্মের নির্দেশ দেবে এবং অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখবে। আর এসব লোকই হবে সফলকাম।’
ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আলেমসমাজ দুইশ’ বছরের আত্মবিসর্জন ও কঠোর সংগ্রাম করে যে নোংরা সংস্কৃতি থেকে এ দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন। বর্তমানেও দীর্ঘ ৭৫ বছরের সাধনায় যত অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও অনৈতিকতা থেকে আমাদের সমাজের মানুষকে রক্ষা করেছেন। সবই প্রতিটি সেক্টরের অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ অর্থহীন হয়ে পড়ছে। ফ্রি সেক্স, মাদক, অতিলোভ, দ্রুত পয়সাওয়ালা হওয়ার নেশা, ভোগবাদিতা, প্রকৃতিবিরোধী যৌনতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, ডেটিংকালচার পাশ্চাত্য জগতের অসংখ্য স্বাভাবিকত্ব ধ্বংস করে বর্তমানে মুসলিম সমাজেও বাসা বাধতে শুরু করেছে। এসবের সমালোচনা ও এসব কালচারের বিরুদ্ধে ওয়াজ নসিহত এবং আলোচনাতেও এখন ধর্মহীনতা প্রসারের এজেন্সি নেয়া নাপাক চিন্তার লোকেরা নাখোশ হন, বিরূপ কথা বলেন, পারলে বাধা দেন।
সমাজে নবজাত শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত উশৃংখল পুরুষের হাত থেকে নিরাপদ নন। নারীচরিত্র ও নৈতিক পবিত্রতাও নতুন প্রজন্মের অনেক নারীর স্বেচ্ছাচারিতায় হুমকির মুখে। এ অবস্থার জন্য দেশ ও জাতির সামগ্রিক দায়িত্বশীলদের কারো কি মাথা ব্যথা আছে? রাষ্ট্র সরকার সমাজ সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় চরিত্রের কেউ কি সমাজকে সুস্থ ও শুদ্ধ রাখার কৌশল নিয়ে ভাবেন? জাতির অস্তিত্বের জন্য এ ভাবনার যে কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।