Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফতুল্লায় কিশোরগ্যাং ইভন বাহিনী বেপরোয়া, এলাকাবাসীর মাঝে আতংক

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২১, ১১:২৮ এএম

ফতুল্লার ইসদাইর এলাকার আতংকের এক নাম কিশোর গ্যাং লিডার ইভন। ইসদাইর এলাকার আজম বাবু ওরফে জামাই বাবুর ছেলে সন্ত্রাসী ইভন গড়ে তুলেছে বিশাল কিশোরগ্যাং। ইভনের রয়েছে বিভিন্ন মহল্লায় অর্ধশতাধিক কিশোরগ্যাং। এসব কিশোরগ্যাং বিভিন্ন নামে বেনামে, একেক পাড়া মহল্লা শাসন করে। এমন কোনো অপরাধ কর্মকান্ড নেই নেই যা ইভন ও তার বাহিনী পারেনা।

মাদক, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, অস্ত্র ব্যবসা, খুনসহ নিরহ মানুষদের ব্লাকমেইলিং করে টাকা আদায় যেনো তার নিত্যদিনের রুপ নিয়েছে। তুচ্ছ কারণে কথা কাটাকাটি থেকে ঝগড়া এরপর বাহিনী দ্বারা ডেকে এনে মারধর করা নিত্য ব্যাপার। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে পিটিয়ে কিংবা কুপিয়ে হত্যা মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে এরা। ইভন ও তার বাহিনীর কাছে অস্ত্র থাকায় ভয়ে মুখ খুলে না কেউ।

জানা গেছে, কিশোর বয়স থেকেই নেশার সাথে জড়িয়ে পড়ে ইভন। তখন থেকেই নেশার টাকা জোগাতে নিরহ মানুষদের মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয় ইভন ও তার বাহিনী। ইতিমধ্যেই হত্যা, মাদকসহ একাধিক মামলার জেল খাটা আসামী সে।

নাম না প্রকাশের শর্তে ভুক্তভোগীরা জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর ইয়াবাসহ কিশোর গ্যাং লিডার ইভন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। পরে সে মামলা থেকে জামিনে বেড়িয়ে এসে আবার শুরু করে তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। এর আগে ২০১৩ সালে পূর্ব ইসদাইর জনতা টেক্সটাইল মিলের সামনে প্রকাশ্যে জনগণের সামনে কিশোর ফুটবলার রাসেলকে হত্যা করে ইভন ও তার বাহিনীর সদস্যরা।

হত্যার নেপথ্যে কারণ ছিলো আধিপত্যবিস্তার ও বড় ভাই ছোট ভাই নিয়ে। এই হত্যার পর থেকেই তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি একে একে ঘটিয়ে যাচ্ছে তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড।

অপর এক সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারী মাসে ফতুল্লার ইসদাইর লেপ তোষক বিক্রেতা কামালের দোকানে হামলা চালিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকাসহ ক্যাশ বাক্স লুটে নেয় ইভন ও তার সহযোগীরা। এ ব্যপারে ভুক্তভোগী কামাল ফতুল্লা থানায় অভিযোগ করলে উল্টো তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায় ইভন বাহিনী।

এছাড়াও স্থানীয় স্কুল ছাত্র ফারদিনকে অমানুষিক নির্যাতন ও ছুরিকাঘাতে আহত করে দুই ঘন্টা তার টর্চার সেলে ফেলে রাখে ইভন বাহিনী, কোন মতে প্রাণে বেঁচে যায় ফারদিন।

এছাড়াও, বছর খানেক আগে ইভন এক মেয়েকে বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে পরে পুলিশ মেয়েকে উদ্ধার করে ইভনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ইভনের বাবা আজম বাবু ওরফে জামাই বাবু থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে তাকে (ইভন) ছাড়িয়ে নিয়ে আসে এবং পুনরায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে।

মাদকের টাকা জোগাতে ব্লাকমেইলিং করতে ও ছাড়েনা তারা। সন্ত্রাসী ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইউরোপ প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে সন্ত্রাসী ইভন বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে তার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের।

সর্বশেষ গত ২৫ মে চাঁদা না দেওয়ায় ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার এখলাছ মন্ডলের ছেলে রুবেলকে কুপিয়ে আহত করে ইভন ও তার বাহিনী। পরে রুবেল ওইদিনই ফতুল্লায় থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি ভয়ংকর এই কিশোর গ্যাং ইভন বাহিনীকে। অভিযোগ তুলে নিতে রুবেলকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে কিশোর গ্যাং লিডার ইভন নারায়নগঞ্জের এক প্রভাবশালী নেতার পুত্রের ছবি দিয়ে ফেস্টুন বানিয়ে শহরের বিভিন্ন অল্লিগল্লিতে লাগিয়ে ওই সদস্যর নাম ভাঙ্গিয়ে বীরদর্পে কিশোরগ্যাংয়ের রাজত্ব কায়েম করছে, দিন দিন লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে সন্ত্রাসী ইভন ও তার বাহিনীর অপরাধ কর্মকান্ড।

এদিকে ভয়ংকর ইভন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে ইসদাইর বাসী প্রতি মুহূর্তে আতংকে দিন কাটাচ্ছে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

এসব বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জান জানান, কিশোরগ্যাং প্রতিরোধ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারাই এসব অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধী যেই হোক যে দলের হোক কেউই ছাড় পাবেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ