বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আদমসন্তানকে পদে পদে বিভ্রান্ত করার যে প্রতিজ্ঞা শয়তান করেছিল, এর বাস্তবায়ন হিসেবেই নানান সময় নানানভাবে সে মানুষকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে। আল্লাহর পথ থেকে তাকে সরিয়ে দিতে শয়তানের চক্রান্তের কোনো অন্ত নেই। সুন্দরকে অসুন্দর আর অসুন্দরকে সুন্দর হিসেবে তুলে ধরতে সে সদা সচেষ্ট। এমন একটি চক্রান্তের বিষয়েই পবিত্র কোরআনে এভাবে সতর্ক করা হয়েছে : শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং তোমাদেরকে কার্পণ্যের আদেশ করে। অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা : ২৬৮)।
মহান প্রভুর এ বাণীর মর্ম তো খুবই সরল। আল্লাহ মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেনÑ সম্পদ ব্যয় করলে তিনি অনুগ্রহ করে সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেবেন। এর বিপরীতে শয়তানের সতর্কবার্তাÑ সম্পদ যদি ব্যয় করে ফেল তাহলে তো গরিব হয়ে পড়বে, তাই নিজ সম্পদকে আঁকড়ে ধর, কৃপণতা অবলম্বন কর! কথাটি এভাবেও বলা যায়Ñ কৃপণতা হচ্ছে শয়তানের একটি হাতিয়ার, যা দিয়ে সে মানুষকে সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
নানা প্রয়োজনেই আমাদের সম্পদ ব্যয় করতে হয়। কখনো নিরেট ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন মেটাতে আমরা সম্পদ ব্যয় করি। কখনোবা সামাজিক প্রয়োজন মেটাই। সমাজবদ্ধভাবে চলতে গিয়ে সমাজের নানা চাহিদা আর প্রয়োজনও পূরণ করতে হয়। সম্পদ ব্যয় করতে হয় কোনো কোনো ধর্মীয় বিধানের ক্ষেত্রেও। এক্ষেত্রে কখনো তো সম্পদ ব্যয় করাটাই হয় মুখ্য। যেমন, যাকাত, সদাকাতুল ফিতর ইত্যাদি।
আবার কখনো কোনো একটি ধর্মীয় বিধান পালন করতে গিয়ে আমাদের সম্পদ ব্যয় করতে হয়। টাকাপয়সা খরচ করে মক্কা মুকাররমায় গিয়ে হজ্ব পালন করতে হয়, কুরবানীর পশু কিনে কুরবানী আদায় করতে হয়। এভাবে সম্পদ ব্যয় কখনো হয় প্রয়োজনে, কখনো ইবাদত হিসেবে। আবার ব্যক্তিগত কিংবা দুনিয়াবি প্রয়োজনের তাগিদে যখন আমরা সম্পদ ব্যয় করি, নিয়তের বিশুদ্ধতায় তাও পুণ্য বয়ে আনতে পারে। মুমিনের সম্পদ ব্যয় কেমন হবে তার একটা সারগর্ভ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পাক কোরআনে।
ইরশাদ হয়েছে : তোমরা তো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই (সম্পদ) ব্যয় করে থাক। আর যে সম্পদই তোমরা ব্যয় কর তোমাদেরকে তার প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা : ২৭২)। এ তো হলো সম্পদ ব্যয়ের নির্দেশনা। কিন্তু সম্পদ ব্যয় করতে গেলে যে কার্পণ্য নামক একটা অদৃশ্য বাধা সামনে এসে দাঁড়ায়, পবিত্র কোরআনে তাও বলা হয়েছে : এবং মানুষ লোভহেতু স্বভাবত কৃপণ। (সূরা নিসা : ১২৮)।
এ কার্পণ্য মানুষের স্বভাবজাত। সম্পদ ব্যয়ের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে ক্ষমা ও দয়ার ঘোষণা করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে স্বভাবজাত এ কৃপণতাকে জয় করতে হবে। নিজের প্রয়োজনে, অন্যের প্রয়োজনে এবং ইবাদতের জন্যে, সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে মুমিনকে নিজ উপার্জিত সম্পদ ব্যয় করে যেতে হবে।
পরম করুণাময়ের এ সন্তুষ্টি ছাড়া আর মুমিনের চাওয়া-পাওয়ার কী আছে? পবিত্র কোরআনে তিনি কতটা সরলভাবে সম্পদ ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন লক্ষ করুন : হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা ব্যয় কর সেই দিন আসার পূর্বে, যেদিন কোনো ক্রয়বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না। আর কাফেররাই জালেম। (সূরা বাকারা : ২৫৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।