Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলাবদ্ধতার দুঃসহ ভোগান্তিতে নিমজ্জিত ফতুল্লার লালপুর সহ আশপাশের এলাকা

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২১, ৪:৪৪ পিএম

বৃষ্টি না হলেও এসব এলাকার অভ্যান্তরিন সড়ক থাকে পানির নিচে। আর বৃষ্টির মৌসুমে নৌকা দিয়ে চলালের ঘটনা বহু পুরনো। দূর্ভোগ লাঘবে গত প্রায় ৪ বছর পূর্বে ফতুল্লার পূর্ব লালপুর বাংলাদেশ খাদ এলাকায় শক্তিশালী পাম্প স্থাপন করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল ও স্থানীয় বৃত্তবান কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় বর্তমানে ৫০ ঘোড়া ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ও ২৫ ঘোড়া শক্তিমত্তার ২টিসহ মোট ৩টি পাম্প রয়েছে লালপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য। তবে, এরপরও জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না।
এর নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা গেছে, লালপুর ডিএনডি এলাকার অর্ন্তভুক্ত হলেও ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় লালপুরকে যোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফলে এসব এলাকার দখলকৃত খালগুলোও উদ্ধার হচ্ছে না। তাই বৃষ্টি না হলেও গৃহস্থালি ও ডাইংয়ের পানি প্রবাহিত না হয়ে আটকে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহত্তর লালপুর ও বাংলাদেশ খাদ এলাকার জলাবদ্ধতা দূরিকরণের জন্য পূর্ব লালপুরে ৩টি পাম্প স্থাপন করা হলেও কেবল ওই এলাকাই নয়, অপসারণ করতে হচ্ছে বৃহত্তর ইসদাইর, গাবতলী, টাগারপাড়, দক্ষিন দাপা ইদ্রাকপুর ও পশ্চিম কোতালেরবাগসহ আশপাশের এলাকার পানিও। এসব এলাকা অপেক্ষাকৃত নি¤œাঞ্চল হওয়ায় পার্শ্ববর্তী মাসদাইর এলাকাসহ উচু এলাকার বৃষ্টির পানিও চলে আসছে এখানে। তাছাড়া, পূর্ব লালপুরের জনি ডাইং ও ফতুল্লার আজাদ ডাইংসহ ফতুল্লার লালপুর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠা প্রায় অর্ধশত ডাইং ও প্রিন্টিং কারখানার তরল বর্জ্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের পয়ঃনিস্কাশনের পানিও চলে আসছে লালপুরে। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে পানির চাপ। এসব পানি ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে নদীতে যাওয়ার কথা থাকলেও খালের বিভিন্ন অংশই দখলের কবলে পড়েছে। তাছাড়া, রেললাইনের কারণেও তা বাঁধের ভূমিকায় পরিণত হয়েছে। ফলে অনেকত্রেই এই বিস্তীর্ণ এলাকার নানাবিধ পানি প্রবাহ বন্ধ থাকছে। বিস্তীর্ণ এলাকার এসব পানি নিস্কাশন করতে হচ্ছে পূর্ব লালপুর বাংলাদেশ খাদ এলাকায় অবস্থিত ওই ৩টি পাম্প দিয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩টি পাম্প থাকলেও নিয়মিত সচল থাকে ৫০ ও ৫ ঘোরা ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি পাম্প। অপর একটি ২৫ ঘোরা ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাম্প রাখা হয়েছে রিজার্ভে। এর মধ্যে ৫০ ঘোড়া ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পটিতে ৮ ইঞ্চি এবং ২৫ ঘোরা ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পে রয়েছে ৬ ইঞ্চি পাইপ। বৃহত্তর লালপুর, ইসদাইর, টাগারপাড়, গাবতলী, বাংলাদেশ খাদ ও আশপাশের বিস্তীর্ন এলাকার নানাবিধ পানি ওই দুই পাম্প দিয়ে নিরসন করা যাচ্ছে না। ফলে বৃষ্টি হলে পানিতো থাকছেই, অনেক ক্ষেত্রে শুস্ক মৌসুমেও ডাইং কারখানা ও গৃহস্থালির পানি সরছে না। শুস্ক মৌসুমে নিয়মিত পাম্প চালানো হয় না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে ডাইং কারখানা ও গৃহস্থালির পানিতেই সয়লাব হয় লালপুর। শুস্ক মৌসুমে পানি থাকার নেপথ্য কারণও এটি। তাই পাম্প চালক আলী হোসেনের ভাষ্য, ‘বর্তমান পাম্পের সাথে থাকা ৮ ইঞ্চি ও ৬ ইঞ্চির দুটি পাইপই পরিবর্তন করে তা ১২ ও ১০ ইঞ্চি পাইপে বৃদ্ধি করা গেলে আরো দ্রুত সময়ে পানি নিস্কাশন হবে।’
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব লালপুরে অবস্থিত পাম্পের বৈদ্যুতিক বিল ৬২ লাখ টাকা বকেয়া জমেছে। ইতিপূর্বে বকেয়া বিলের জন্য ৪ বার বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিয়েছিলো ডিপিডিসি। মাত্র তিন থেকে চার বছরের মধ্যে এই বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ বিল জমা পড়ায় তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে অনেকে।
জানা গেছে, ৩টি পাম্পের জন্য ২টি বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন করা হয়েছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপনের নামে। মাসে মাসে তার নামেই বিল আসে বিদ্যুতের। এখনো পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার বিল দিয়েছেন তিনি। তাও আবার সড়ক সংস্কারের একটি প্রকল্প থেকে আসা কাজের অর্থ থেকে ওই ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়। এরপরও গত এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া পড়ে আছে ৬২ লাখ টাকা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় অনেক সময়ই বন্ধ রাখা হয় পাম্প। ফলে নিয়মিত পাম্প না চললে আবারও বাধে জলাবদ্ধতা।
এদিকে, সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ পাম্প পরিচালনার জন্য স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে একটি কমিটিও করা হয়েছে। ওই কমিটি লালপুর এলাকার বাড়ি ওয়ালাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ২শ’ টাকা করে নিচ্ছে। মাসে উত্তোলন হওয়া অর্থ থেকে ১৫ হাজার টাকা চলে যাচ্ছে পাম্প চালক ও সহকারির বেতনের খাতায়। বাকি টাকা দিয়ে পাম্পের আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন, কমিটির প্রধান মো. সাইদুল ইসলাম, ক্যাশিয়ার মো. মাইনুদ্দিন ও সদস্য গিয়াস উদ্দিন।
তারা জানান, ইতিপূর্বে বছরে ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হতো। কিন্তু ওই টাকা দিয়ে সম্পূর্ন ব্যায় মেটানো সম্ভব না হওয়ায় গত দু’মাস যাবত মাসে মাসে ২০০ টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে। তাদের দাবি এলাকায় বিপুল সংখ্যক বসতবাড়ি থাকলেও মাত্র দুইশত থেকে আড়াইশত বাড়ির মালিকেরা মাসিক চাঁদা দিচ্ছে।’
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন জানান, ‘৬০-৬২ লাখ টাকা বিদ্যুতের বিল বকেয়া জমেছে। এই টাকা কিভাবে পরিশোধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সাংসদ শামীম ওসমান ভাইকে জানানো হয়েছে। নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা মেডামকেও জানিয়েছি। তারা একটা সমাধান করবেন বলে বিশ্বাস করি। আপাতত নতুন মিটার আনতে চেয়েছিলাম। মাসে উত্তোলন হওয়া টাকা থেকে প্রতিমাসে আসা নতুন মিটারের বিল পরিশোধ করে পূর্বের মিটারের বকেয়া বিল সময় নিয়ে পরিশোধ করার একটা পরিকল্প না করা হয়েছিলো। কিন্তু পূর্বের মোটা অংকের বকেয়া বিল থাকায় এখন ডিপিডিসি থেকে নতুন মিটার দিতে চাইছে না।’
এই বিষয়ে ফতুল্লা ডিপিডিসির প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বকেয়া বিল থাকলেতো আমরা নতুন মিটার দিতে পারি না। বকেয়া পরিশোধের জন্য তাদের বলা হয়েছে। চিঠিও দিয়েছি। বিল পরিশোধ না হলে স্বাভাবিক ভাবেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আর এই বিল মৌকুফ করার মত কোন সুযোগও নেই।’ 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ