গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
হেলপারের হুঙ্কার ওস্তার নাম্বার নাম্বার। আর দেরি না করে চালক সেই নাম্বারকে ঠেকানোর জন্য জীবনবাজী রেখে এমনভাবে গাড়ীকে বামে চাপালেন অন্য গাড়ীর সঙ্গে লেপ্সে গেলো। এর মধ্যে যাত্রীদের চিৎকার এই তোদের কি জীবনের মায়া নাই। এভাবে কি কেউ গাড়ী চালায়। চালক সিট থেকে হুঙ্কার দেয় আমার দোষ কি? ওই তো বাড়াবাড়ি করছে।
আরেক যাত্রী বলেন, তোদের তো বউ-বাচ্চা নাই, জীবনের মায়াও নাই। তাই গাড়ী নিয়ে খেলা করিস। এ সময় কয়েকজন যাত্রী নামতে চাইলেও পারলেন না। কারণ দুটি গাড়ী এমনভাবে লেগে গেছে নামারও উপায় নেই।
এমন ঘটনা রাজধানীতে ঘটছে অহরহ। রাজধানীতে চলাচলরত গণপরিণহনগুলো দেখলেই তা সহজে অনুমান করা যায়। এসব ঘটনায় যাত্রীরা হচ্ছেন আহত আর ড্রাইভার হেলপারদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নাম্বারে একই কোম্পানীর শিকার পরিবহণের দুটি বাসের ড্রাইভারদের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। এমন ঘটনা দেখে এক যাত্রীর প্রশ্ন। রাজধানীতে গণ-পরিবহণের নৈরাজ্য কি কখনো থামবে না? নাকি দিন দিন আরও বাড়ছে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য কি কখনো থামবে বা সরকার কি এ বিষয়ে আন্তরিক? করোনার দোহাই দিয়ে মুড়ির টিন মার্কা বাসগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে ভাড়া। ১০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে বিশ টাকা। আবার ২০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৪০ টাকা। মিডিয়াগুলো তো প্রতিদিন রিপোর্ট করছে কিন্তু কোনো প্রতিকার তো চোখে পড়ছে না।
করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহনে যাতায়াতের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের জন্য এতে নানা ধরনের নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে এবং বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সব নির্দেশনাকে ছাপিয়ে এই নির্দেশনা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজাধানীতে প্রচুর মানুষ কর্মক্ষেত্র কিংবা অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামেন প্রতিদিন, কিন্তু তারা সময়মতো বাসে উঠতে পারেন না; যদিও–বা উঠতে পারছেন, ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ, যা সাধারণ জনগণের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক একটি ব্যাপার। অন্যদিকে যাত্রীরা যখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন, তখন কিন্তু ঠিকই প্রচুর জনসমাগম তৈরি হচ্ছে এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। আর বাসে গাদাগাদি করেও অনেকে কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। যাত্রী নেওয়া হচ্ছে বেশি আর ভাড়াও দ্বিগুন। এতে শুধু জনগনের দুর্ভোগ বাড়ছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অনেক যাত্রী লাঞ্চনার শিকারও হচ্ছেন। কিন্তু দেখার যেনো কেউ নেই। আর বাসের স্টাফরা কথায় কথায় যাত্রীদের নামিতে দেওয়ার হুমকিও দেন। আবার গাড়ী থেকে ফেলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে।
রাজধানীর কাজলা এলাকায় শ্রাবন পরিবনের এক স্টাফ জানান, অর্ধেক সিটে যাত্রী তোলার পর তারা গেট লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও অনেক যাত্রী জোর করে বাসে উঠে যান। সিট খালি নেই বললেও মানতে চান না।
শ্যামলি থেকে বাসে যাচ্ছিলেন যাত্রী মামুন। সিট খালি না পেয়ে পাশাপাশি বসেছিলেন শাকিল ও তার বন্ধু। তিনি জানান সিট খালি না থাকায় পাশাপাশি বসেছি। পাশাপাশি সিটে বসলেও দুই বন্ধুর কাছ থেকে চার সিটের ভাড়া নিয়েছে। বাসে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। দেখা গেছে ওই বাসে কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে চালকের সহকারী জানান, সামনে অনেকে নেমে যাবে। তখন সিট খালি হবে। তবে যাত্রীরা নিয়ম মানতে চায় না বলে জানান এই পরিবহন শ্রমিক।
অন্যদিকে রাজধানীর শনির আখড়ায় হিমালয় পরিবহনের এক চালক জানান, অনেক যাত্রী আছে একসঙ্গে পাশাপাশি বসতে চায়। একই পরিবারের লোক বা বন্ধু-বান্ধব তারা। আমরা আলাদা বসতে বললে কথা কাটাকাটি করে। তাদের বললেও শুনতে চায় না। অনেকের মুখে মাস্কও থাকে না।
এদিকে মিরপুরের খাজা পরিবহনের এক স্টাফ জানান, স্যানিটাইজার বাসের মধ্যে রাখা থাকলেও যাত্রীরা এখন আর ব্যবহার করতে চায় না। যাত্রীদের অনেকের মুখে মাস্কও থাকে না। যাত্রী থেকে শুরু করে বাসের চালক, সহযোগী অনেকের মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে পকেট থেকে আধ-ময়লা একটি মাস্ক বের করে পরেন চালকের সহযোগী রায়হান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।