বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত ২ জুন ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ‘রেডিও শুনে পবিত্র কোরআন এর হাফেজ হলেন মরু রাখাল’ (ইনকিলাব, পৃষ্ঠা: ৬)। দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে কোরআনের অবমাননা, বিকৃতির যে সব আপত্তিকর ও ধৃষ্টতাপূর্ণ ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিকার প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে তুরস্ক ও সউদী সরকার বিপুল সংখ্যক কোরআনের কপি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে বিতরণ করে সকলের প্রশংসা লাভ করেছে এবং সাধুবাদের অধিকারী হয়েছে। লাখ লাখ তবলীগী মুসলমান দুনিয়ার আনাচে কানাচে কোরআনের তথা ইসলামের আদর্শ শিক্ষা প্রচারে তাদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন, তাদের এ অমূল্য অসীম খেদমত আল্লাহ কবুল করুন।
বিজ্ঞানের এ অবিশ^াস্য বিস্ময়কর উন্নতি, অগ্রগতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম উৎকর্ষতার যুগে বিশে^র মরু বিয়াবানগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে কত মুসলমান যাযাবরের জীবন যাপন করেন, সে পরিসংখ্যান কারো কাছে আছে কি না এবং তাদের কাছে কোরআনের বাণী পৌঁছানোর কী ব্যবস্থা মুসলিম নেতৃবর্গ ও রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ হতে নেয়া হয়েছেÑ এ সব তথ্য অজানা। মরু মুসলমানদের নিকট কোরআনের কপির বিতরণের জন্য প্রচারকদল প্রেরিত হলে হয়তো মরু মুসলমানগণ বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারতেন।
সর্বাধুনিক উন্নত যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমের কুফলেরও যেমন অন্ত নেই, তেমনি তার সুফলও রয়েছে বিপুল, তবে সেগুলোর যথাযথ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজ সুলভ করার ওপর নির্ভর করে সেগুলোর সুফল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তার উল্টোটা। অনেকে আকাশ অপসংস্কৃতিকে আকড়ে ধরে বিভ্রান্ত-বিপথগামীও হচ্ছে, আয়ত্বে থাকা সত্ত্বেও অনেকে স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছে অজানা কুপথে। তবে এর বিপরীতেও বহু অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রয়েছে, সেগুলোর খবরও জানা যায় না। মাঝে মধ্যে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা খবর সংবাদমাধ্যমে এসেও যায়। এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনের একজন ৬০ ঊর্ধ্ব বয়সী রাখালের রেডিও শুনে পবিত্র কোরআন হেফজ করার ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কঠোর পরিশ্রমী ও অদম্য ইচ্ছার অধিকারী ফিলিস্তিনের মরুবাসী আলহাজ¦ সালামাহ আলীর জবানীতে তার কোরআন হেফজ করার কাহিনী শোনা যাক। তাঁর ভাষ্য, ‘ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় পবিত্র কোরআন হেফজ শুরু করার পর তা সমাপ্ত হয়। কারণ, আমাদের এলাকায় কোনো হাফেজ বা হেফজখানা নেই। হেফজের সময় পেছনের পাঠ পুনরায় পড়া খুবই জরুরি। নতুবা পঠিত সব কিছু ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে রেডিওতে কোরআন শোনার ব্যবস্থা আমাকে অনেক বেশি সহায়তা করে। রেডিওতে কোরআন তেলাওয়াতের সময় সম্পর্কে আমি জানতাম। তখন আমিও তাদের সঙ্গে শুনে শুনে কোরআন পাঠ করতাম। এভাবে তা শুনতে শুনতে আমার বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত শেখা হয়ে যায়।’ বর্তমান যুগে রেডিও’র মাধ্যমে কোরআন হিফজ করার এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। আলহাজ সালামা আলী নিজের ছাগল চরানোর সময় রেডিওতে কোরআন তেলাওয়াত শুনে শুনে তাজবিদের সব রীতি নীতি আয়ত্ব করেন এবং বিশুদ্ধ ও সুন্দরভাবে কোরআন পড়া শিখে ফেলেন বলে জানান।
উল্লেখ্য খানা-ই কাবা হতে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা বিখ্যাত ক্বারীদের কোরআন তেলাওয়াত প্রচার করা হয়, যা সারা বিশ^বাসী শুনতে পারেন। আলহাজ¦ সালামাহ আলীর মতো উদ্যমী পরিশ্রমী ব্যক্তিরা তার অনুসরণ করতে পারেন। আমাদের তবলিগী ভ্রাতাগণ দুনিয়াময় কোরআন হাদীসের শিক্ষা প্রচারে নিয়োজিত। এ প্রচারকালে তাদের অনেকের কোরআনের হাফেজ হওয়ার অথবা অনেককে হাফেজ বানানোর যে সময় ও সুযোগ রয়েছে তার কতটুকু সদ্ব্যবহার করেছেন বা করে থাকেন সে তথ্য আমাদের জানা না থাকলেও আশা করি তবলীগ কর্মকর্তাগণ এ দিকটির গুরুত্ব যেমন অনুধাবন করবেন, তেমনি বিশে^র মরু দেশগুলোর মুসলমানদের মধ্যে কোরআনি শিক্ষা প্রচারের গুরুত্বও উপলব্ধি করবেন। অনুরূপভাবে বিভিন্ন ভাষায় কোরআনের অর্থ ব্যাখ্যা সম্বলিত কোরআনের কপি বিনামূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে বিতরণের সুব্যবস্থা বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষ হতে গ্রহণ করা হবে-এ প্রত্যাশা সকলেরই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।