Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ভয়ংকর প্রতারক হোতা বাবু গ্রেফতার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

সিআইডি কার্যালয়ে টাকা আত্মসাতকারীর ওপর চড়াও ভুক্তভোগীরা
ভয়ংকর প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের হোতা মো. মশিউর রহমান খান ওরফে বাবু (৪২)। তিনি বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ও আদালতে জিআর-সিআর মিলিয়ে মামলা রয়েছে ৯২টি। অবশেষে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন বাবু। তাকে গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। এ সময় সংবাদ সম্মেলনের কক্ষের সামনে ভিড় করেন প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী। আসামিকে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা আসামিকে গালিগালাজ করার পর মারতে তেড়ে যান। পরে বাবুকে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সিআইডি কর্মকর্তারা।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দামি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নামমাত্র টাকায় কিনে বাকি টাকা পরিশোধ করতেন না বাবু। টাকা চাইতে গেলে ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি ও মারধর করতেন। হাজী মো. দেলোয়ারে হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগীর (৫৫) কাছ থেকে অভিযোগের পর সিআইডি ঢাকা মেট্রোর উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসাইন ও টিম-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল হকের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস থেকে মশিউর রহমান খান ওরফে বাবুকে গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, গ্রেফতার বাবু তার সহযোগীদের নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সন্ধান করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এরপর তাদের কাছ থেকে বড় বড় অংকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনতেন। এরপর নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে অধিক পরিমাণ পণ্য নিতেন। পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যাংকের চেক দিলে পাওনাদাররা চেকের টাকা তুলতে না পেরে সর্বস্বান্ত হন।

তিনি আরও বলেন, বাবুর প্রতারণার কৌশল হিসেবে ছিল- বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর করে ডেকোরেটেড অফিস সাজিয়ে নিজেকে আবরার গ্রæপের বায়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেন। চুক্তি অনুযায়ী পণ্যের মূল্য বাবদ ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতেন। বাকি টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন বলে জানালেও ভুয়া চেক দিতেন ব্যবসায়ীদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা ছাড়াই পণ্য নিতেন বাবু। আসামি বাবু অত্যন্ত সুচতুর ও প্রতারক। তিনি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতা। দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন-চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, তৈল, লবণ, মরিচ, হলুদ, বিভিন্ন মসল্লা থেকে শুরু করে প্রসাধনী সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী যেমন- এসি, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ফ্যান, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ অফিসিয়াল যাবতীয় ব্যবহার সামগ্রী নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করেছেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক বাবু বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মালামাল কিনে নগদ টাকার বিনিময়ে সেগুলো বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পণ্যের টাকা পরিশোধ না করে হয়রানি করতেন। এভাবে প্রতারণা করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন। বাবুকে গ্রেফতারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রংয়ের হেরিয়ার টয়োটা জিপ, দুটি মোবাইল ও তিনটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়। অটোমেশন নামে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে কর্মরত ফাতেমা আক্তার মনি নামের এক ভুক্তভোগী জানান, দুই মাস আগে বাবু তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনেন। বিনিময়ে বাবু টাকা না দিয়ে চেক দেয়। তবে চেকটি ব্যাংকে নিয়ে গেলে সেটি ডিজঅনার হয়।

মাহমুদ হাসান নামের একজন ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী জানান, তার কাছ থেকে ২২ লাখ টাকার এসি কিনেছিলেন বাবু। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে পেলেও টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এসিগুলো বাবু কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জামিল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, গ্রেফতার বাবু অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়েছে। মাল কেনার আগে বাবু ওয়ার্ক অর্ডার দিতেন। আমরা কোটেশন সাবমিট করতাম। এরপর কোটেশনের উপর বাবু লিখে দিত তারা ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করবেন, কিন্তু মাল নেয়ার পর একটি টাকাও পরিশোধ করতেন না বাবু।

শেখ ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আসামি মশিউর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জ। গুগলসহ অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে মশিউর রহমানের সহযোগীরা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে ১০০ জনের মতো ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন। দিন দিন এই অভিযোগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সিআইডি কার্যালয়ে প্রতারিত শতাধিক ব্যবসায়ী আজ হাজির ছিলেন। মশিউর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মশিউর রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ