পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেটের রাস্তায় ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সাগরের ঢেউ খেলেছে। গতকাল হাঁটুপানির উপর দিয়ে যখন এক একটি গাড়ি যাচ্ছিল; তখন এক ফুট থেকে দেড় ফুট ঢেউ রাস্তার ফুটপাথে আছড়ে পড়ছিল। সড়কে পানির ঢেউয়ের এ দৃশ্য দেখে হিমালয় গণপরিবহনের এক যাত্রী মন্তব্য করেন, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের ঢেউয়ের মতোই রাজধানীতে সাগরের ঢেউ দেখছি। অন্যান্য যাত্রীরা তার কথায় সায় দিয়ে বললেন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করার পর এটাই হলো নগর উন্নয়নের প্রকৃত দৃশ্য।
রাজধানীতে তিন ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টিতেই বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতা। কোনো কোনো সড়কে জমেছে হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি, কোথাও কোথাও ফুটপাথ পানিতে ডুবে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। রাজধানীর বৃষ্টিতে বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেটসহ কোনো কোনো সড়কে সাগরের মতো পানির ঢেউয়ের মধ্যে যারা এ পথে অফিসে বা কাজে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হয়েছেন; তাদের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় তিন গুণ-চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অফিসে যেতে হয়।
রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি মানেই নগরবাসীর কাছে পানিবদ্ধতার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। প্রতি বছরই পানিবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। নাগরিকদের সেবার মান বাড়ানোর জন্য ঢাকাকে দু’টি সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকায় পানি নামতে পারে না। ফলে প্রতিবারই এমন পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেট, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুর, শান্তিনগর, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, পুরান ঢাকা, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে রাস্তায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গতকাল সকালে যারা জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হন, তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন দুই সিটির উন্নয়নের চিত্র। পানিবদ্ধতার কারণে অফিসগামী লোকজনকে ছাতা মাথায়, প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেককেই প্যান্ট গুটিয়ে পানি মাড়িয়ে কর্মক্ষেত্রের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় কম গতির কারণে রাজধানীজুড়ে দিনভর ছিল যানজট।
রাজধানীর উত্তরায় বৃষ্টির পানি থেকে রিকশা সরাতে গিয়ে তলিয়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মো. আব্দুর রাজ্জাক ও মতিয়ার রহমান নামের দু’জন রিকশাচালক প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস জানান, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ২১ নম্বর রোডে ওই ঘটনা ঘটে। বৃষ্টির পানির নিচে বিদ্যুতের তার পড়ে ছিল। পানি থেকে রিকশা সরাতে গিয়ে তারের সাথে পেঁচিয়ে তারা দু’জন একসাথেই বিদ্যুতায়িত হন। অতঃপর তারা মারা যান। গতকাল রাজধানী ঢাকায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে রাজধানী ঢাকা মহানগরী প্লাবিত হয়ে যায়। মহানগরীর প্রতিটি রাস্তায় পানি জমে যায়। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমড় পর্যন্ত পানি জমে যায়। নাগরিকদের সেবার মান বাড়াতে মহানগরীকে দুই ভাগ করে দু’টি সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হলেও রাজধানী ঢাকা কার্যত অভিভাবকহীন। দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র প্রতিদিন টিভিতে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেও ৩ ঘণ্টার বৃষ্টি প্রমাণ করেছে তাদের বক্তব্যের অসারতা।
রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বলা হয় বিমানবন্দর রোড। মুষলধারে বৃষ্টিতে রাজধানীর খিলক্ষেতে বিমানবন্দর সড়কে ফ্লাইওভারের নিচে কোমরপানি জমে যাওয়ায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও বিদেশগামী মানুষ। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা টানা বৃষ্টিতে বিশ্বরোড এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচের বিমানবন্দর সড়ক পানিতে ডুবে যায়। ফলে প্রগতি সরণি হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে যেসব যানবাহন এয়ারপোর্টের দিকে যায় সেগুলো চলতে বাধাগ্রস্ত হয়। গাড়িগুলো চলছে ধীরগতিতে। এতে খিলক্ষেত থেকে মালিবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় মহাখালী থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার সড়কেও দীর্ঘ যানজটের দৃশ্য দেখা গেছে। বিশ্বরোড ও তিনশ’ ফুট এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়।
রাজধানীতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। গ্রিন রোড, পান্থপথ, ধানমন্ডি, তেজতুরী বাজার, বনানীর কিছু অংশ, মহাখালীর চেয়ারম্যানবাড়ি, মালিবাগ, বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেট, টিকাটুলী, মতিঝিল, দিলকুশাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। পথ চলতে রিকশা ও গাড়ির চাকা অর্ধেকের বেশি ডুবে যায়। পানির মধ্যে এখানে-সেখানে খানাখন্দ থাকায় রিকশা ও সিএনজি উল্টে যায়।
বৃষ্টিতে রাজধানীতে অফিসগামী যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। অনেকেই বেশি ভাড়া দিয়ে অফিসে আসেন। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় অফিসে যেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অরূপ রায়ের অফিস রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। তিনি জানান, তেজতুরী বাজারে প্রায় কোমর সমান পানি জমেছে। প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে তাঁকে অফিসে আসতে হয়েছে।
লালবাগ থেকে কারওয়ান বাজারে অফিসে আসার পথে বিভিন্ন রাস্তায় জমে থাকা পানিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাইদ আহমেদকে। লালবাগে হাঁটু সমান পানি জমেছে বলে তিনি জানান। রিকশা ভাড়াও তাকে বেশি দিতে হয়েছে।
অফিসে আসার পথে অনেকেই রাস্তায় পানি জমে থাকার ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী অফিসে আসার পথে ঢাকার রাস্তায় জমে থাকা পানির ভিডিও করে লিখেছেন ‘উচ্ছ্বল সাগরের দোলাতে দোদুল...’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।