Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজিপুরে ভাঙনে তিন গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে

ভেঙেই চলেছে সর্বগ্রাসী যমুনা। কোন কিছুতেই তার ভাঙন তা-ব থামছে না। কবে যে এর সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটবে কেউই তা জানে না। অথচ তার প্রলয় নৃত্যে এর তীরবর্তী মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও এর বাইরের এলাকাগুলো ভাঙনের তা-বে ল-ভ- হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গত ক’দিনের ভাঙনে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাইরে মল্লিকপাড়া, ফুলজোড় ও নতুন মাইজবাড়ী চরের শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ভাঙনের শিকার মল্লিকপাড়া গ্রামের মজনু মিয়া, মহিবার আকন্দ, জামাল, বাদশা মিয়া, ইমান আলী, ছাত্তার হোসেন, তেছের আলী. জহু মিয়া, রমেলা খাতুনসহ অনেকেই তাদের বসত ভিটা থেকে ঘর-দোর সরিয়ে পাশের চরগুলোতে ও বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্থানান্তর করেছে। ভাঙনের শিকার হচ্ছে উঠতি ফসল জমি, সবজিখেত, গাছের বাগান। মাইজবাড়ী ইউপি সদস্য মোকলেছুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী শত্তকত হোসেন ছাকার বলেন, অসময়ের এই ভাঙনের শিকার চরটিতে প্রায় দেড়যুগ আগে থেকে মানুষজন তাদের বসতি গড়ে তোলে। এখনকার ভাঙনের ফলে তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখানেই শেষ নয়, ভাঙন কবলিত কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চল। বাকি ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে মাইজবাড়ি, কাজিপুর সদর ও শুভগাছা, গান্ধাইল ইউনিয়নের অংশ বিশেষ যমুনার ভাঙনের শিকার। সেই ১৯৮০ সালের ভয়াবহ ভাঙনে মূূল কাজিপুর থানা, সিও অফিসসহ নানা স্থাপনা যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে যমুনা প্রতিনিয়তই গ্রাস করছে নতুন-নতুন এলাকা, বিপন্ন হচ্ছে জনপদ, কমে আসছে আবাদি জমি, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ, বদলে যাচ্ছে জীবন-জীবিকার ধরণ। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হওয়া মূল যমুনার ভাঙন চলছে বছরের পর বছর। রাক্ষুসে যমুনা পানির বৃদ্ধিতেও ভাঙে আবার শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙে। একসময় যেখানে ছিল গ্রামীণ জনবসতি, রাত পোহালেই যেখান থেকে কিষাণ বের হতো লাঙল কাঁধে মাঠের উদ্দেশ্যে। আর বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে ঘোমটার ফাঁক গলে কিষাণী বধূ চোরা চোখে দেখতো স্বামীর মাঠে যাওয়া। দুপুরের রান্না সেরে ঘরের দাওয়ায়, কিংবা পাখা হাতে গাছের ছায়ায় বসে স্বামীর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকতো, আজ সেখানে অথৈ জলরাশি। উত্তাল যমুনার করাল গ্রাসে আজ তা কেবলই স্মৃতি। তারাকান্দি, শুভগাছা, টেংলাহাটা, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, কান্তনগর, বাংলাবাজার, খাষশুড়িবেড়, গোয়াল বাথান, হাটগাছা, তারাকান্দি, টেংলাহাটা, জগৎগঞ্জ, ভাঙ্গারছেঁও, আমনমিহার, বিলসুন্দর, শ্রীপুর, বদুয়ারপাড়া, ধুলাউড়ি, মানিকপোটল, পলাশপুর, চরনাটিপাড়া, পানাগাড়ি, যুক্তিগাছা, দাদবোড়া, উজানমেওয়াখোলা, বিলধলী, রাজবাড়ী, পীরগাছা, ডগলাস ভেটুয়া, তেকানী, ডিগ্রী দোরতা, সাউদটোলা, ফুলজোড়, মেঘাই, ঘোড়াগাছাসহ অনেক জনপদ কাজিপুরবাসির কাছে কেবলই অতীত। এখনো ধর্মীয় পালা-পার্বণে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মন কেঁদে ওঠে। বাপ-দাদার কবরের পাশে দোয়া-দরুদ পড়তে না পারার আক্ষেপ তাদের আজীবনের সঙ্গী। তাই কাজিপুরবাসির একটিই দাবি, এখনো যে অংশটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা যেন সর্বনাশী যমুনা কেড়ে না নেয়। কেননা ভাঙন স্থিতাবস্থাই কেবল পারে, পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কাজিপুরবাসিকে শিকড়ের সন্ধানে মিলনের সুযোগ করে দিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাজিপুরে ভাঙনে তিন গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ