বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলিম মিল্লাতের সর্বত্রই ধনী এবং গরিবরা পাশাপাশি বসবাস করে থাকে। ধনী লোকদের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা সাধারণত : মনে করে যে, তাদের অর্থ সম্পদ, ধন ঐশ্বর্য কেবল তাদেরই ভোগ-বিলাস এবং ইচ্ছামত ব্যয় ও বিনিয়োগের জন্য। তাতে গরিবদের কোনো হক বা অধিকার নেই। তাদের এই মনোবৃতি ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টান্তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও ভুল ইহা সর্বাত্মকভাবে পূজীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। এ জন্য ইসলাম একে সর্বাত্মক ঘৃণ্য ও অভিশপ্ত মনে করেন।
এতদপ্রসঙ্গে শেরে খোদা হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা মুসলমান ধনী লোকদের ধন-সম্পদ হতে এমন পরিমাণ ব্যয় করা ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের গরিব ও ফকিরদের প্রয়োজন পুরণে যথেষ্ট হতে পারে। তাই, গরিব-দুঃখীরা যে ক্ষুধাকাতর কিংবা বস্ত্রহীন থেকে কষ্ট পায়, তার মূলে রয়েছে ধনী লোকদের পুজিবাদী আচরণ। এ বিষয়ে সকল সুসলমানের উচিত সাবধান হওয়া। নিশ্চয়ই জেনে রেখ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই শ্রেণির লোকদের খুব কঠিনভাবে হিসাব গ্রহণ করবেন এবং তাদেরকে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন।’ (আত্তাবরানী)।
এই হাদীসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে-উপলব্ধি করা যায় যে, গরিব-দুঃখী লোকদের অভুক্ত ও বস্ত্রহীন হয়ে থাকার জন্য ধনী লোকেরাই বহুলাংশে দায়ী। কারণ, ধনী লোকেরা যদি তাদের ধন সম্পদ হতে গরিব-দুঃখীদের নির্দিষ্ট প্রাপ্য অংশ দিয়ে দিত, তাহলে গরিব দুঃখীদের খাওয়া-পরার, অভাবের যাতনা এবং কোনরূপ কষ্টের ও বেদনার সম্মুখীনহতে হতো না। মুসলিম মিল্লাতের ধনী শ্রেণির লোকেরা এই বিশেষত্বটি যতবেশী উপলব্ধি করবে, ততই মঙ্গল।
মহান আল্লাহ পাক আল কোরআনে যারা যাকাত-আদায় করে না তাদের পরিণাম সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে : যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য (ধন-সম্পদ) সঞ্চয় করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (যাকাত দেয় না) তাদেরকে এক কঠিন পীড়াদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে, তার পর তা দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। (তাদেরকে সম্বোধন করে) বলা হবে, ইহাই যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমাদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৩৫)।
এতদ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে লোক তার ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করবে না, তার মালসম্পদ কিয়ামতের দিন বিষধর সর্পের রূপ ধারণ করবে। শেষ পর্যন্ত সে সর্পটিও তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত এবং হাদীসের বাণী হতে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, যাকাত আদায় না করার পরিণাম, নামাজ আদায় না করার পরিণতি হতেও অধিক ভয়াবহ ও সাংঘাতিক। কেননা, যাকাত আদায় না করার যে নির্মম, কঠোর ও কঠিন পরিণতির কথা ঘোষিত হয়েছে, তা’ খুবই ভয়াবহ।
অপর এক হাদীসে রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তায়ালা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন, সে যদি এর যাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তার ধন-সম্পদ তার জন্য অধিক বিষধর সাপের আকার ধারণ করবে। এর কপালের উপর দুইটি কালো দাগ বা দুইটি দাঁত অথবা দুইটি শিং থাকবে। কিয়ামতের দিন তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তা তার মুখের দুই পাশ, দুই গাল কিংবা দুই কর্ণলগ্ন মাংসপিণ্ড খেতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, আমিই তোমার মাল সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চিত বিত্ত-বৈভব। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন : ‘যারা কৃপণতা করে, তাদের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করো না।’ আল্লাহপাক আমাদেরকে যথাযথভাবে গরিবের হক তাদের কাছে পৌঁছানোর তাওফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।