Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উম্মতের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়া ও অশ্রুপাত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবনেতিহাস সতর্ক দৃষ্টিতে পাঠ করলে যে বিষয়টি প্রভাত সূর্যের মতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে তাহলো তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ উম্মতদের জন্য দোয়া করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)ও স্বীয় উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। এতদপ্রসঙ্গে সহীহ মুসলিম শরীফের ঈমান অধ্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে কুদসীতে আছে তিনি বলেন, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) একদিন সমবেত সাহাবীদের সামনে কুরআনুল কারীম থেকে আল্লাহপাকের এই বাণীটি পাঠ করলেন, যাতে নিজ উম্মত সম্পর্কে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর এই বক্তব্য উল্লেখ আছে : ‘হে আমার পরওয়ারদিগার! এই মূর্তিগুলো অসংখ্য মানুষকে বিপথগামী করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে কেবলমাত্র সে-ই আমার দলভুক্ত। আর কেউ আমার কথা অমান্য করলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা ইব্রাহীম : আয়াত ৩৬)।

তারপর নিজ উম্মত সম্পর্কে হযরত ঈসা (আ.)-এর এ বক্তব্য কুরআনুল কারীম থেকে পাঠ করলেন : ‘যদি তুমি তাদের শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই বান্দাহ। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও তবে তাও তোমার অসাধ্য নয়। কারণ, তুমি তো মহাপরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী। (সূরা আল মায়িদাহ : আয়াত ১১৮)।
এ দু’টি আয়াত পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর দরবারে দু’টি হাত উত্তোলন করে বললেন : ‘হে আমার আল্লাহ! আমার উম্মত! আমার উম্মত! এবং অনেক কান্নাকাটি করলেন।’ তখন মহান আল্লাহপাক জিব্রাঈলকে বললেন, হে জিব্রাঈল! মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও। তাঁকে জিজ্ঞেস করো, সে কি কারণে কাঁদছে? অথচ আল্লাহপাকই সর্বাধিক জানেন, তিনি কেন কাঁদছেন।

জিব্রাঈল (আ.) এসে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে সব কিছু জানালেন। অথচ আল্লাহ নিজেই সব কিছু জানেন। তখন আল্লাহতায়ালা বললেন : মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছে ফিরে যাও। গিয়ে তাঁকে বলো : আমি অচিরেই তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করব। তোমার মনে ব্যথা দেবো না।’

এই হাদিসে পাকের শেষাংশে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা- ‘অচিরেই আমি তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করব। তোমার মনে ব্যথা দেবো না।’ এর মাঝে এমন কিছু হাকীকত লুক্কায়িত আছে, যেগুলোর মর্ম উদঘাটন করা আল্লাহপাকের কুরবত ও নৈকট্য লাভকারী বান্দাহগণ ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

সে যাই হোকÑ দুনিয়ার জীবনে ক্ষুদ্র জীবনকালের অধিকারী মানুষও আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। যেখানে আশা নেই, সেখানে জীবনের প্রকৃত রূপ খুঁজে পাওয়া যায় না। এজন্যই তো মরমী কবি গেয়েছেন : ‘আশায় মোরা বাঁধছি বাসা/মর্তবাসী ক্ষুদ্র নর’।

হ্যাঁ, আশা আছে বলেই আমরা বাসা বাঁধি। জীবন চলার পথে এগিয়ে যাই। আল্লাহপাকের ক্ষমা ও করুণা লাভের জন্য তাঁরই সকাশে মিনতি জানাই। কেননা তিনি আমাদের তাঁর রহমত হতে নিরাশ হতে বারণ করেছেন এবং আমাদের গোনাহ ক্ষমা করার শুভ সংবাদ প্রদান করেছেন।

এই শুভ সংবাদের একটু ঝলক হাদিসে কুদসীতে জামে তিরমিজীতে এভাবে বিবৃত হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন : আমি আমার পুণ্যবান বান্দাহদের জন্য এমন সব সামগ্রী তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি। যা কোনো কান কখনো শুনেনি। যে সম্পর্কে কোনো মন কখনো কল্পনা করেনি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : এ প্রসঙ্গে তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করতে পার : কোনো মানুষই জানে না, আমি তাদের জন্য কি সব চোখ জুড়ানো সামগ্রী লুকিয়ে রেখেছি। তাদের কর্মের বিনিময়ে এগুলো তাদের দান করব। (সূরা আস সাজদাহ : আয়াত ১৭)। জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে, একজন আরোহী একশ’ বছরেও তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। তোমরা ইচ্ছা করলে এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি পাঠ করে দেখতে পার : জান্নাতে রয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া আর ছায়া। (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৩০)।
জান্নাতের একটি সুই রাখার পরিমাণ স্থানও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের চাইতে উত্তম। এ প্রসঙ্গে তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ে দেখতে পার : মূলত সে ব্যক্তিই সাফল্য অর্জন করবে, যে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৮৫)।



 

Show all comments
  • Habib ২৭ মে, ২০২১, ৪:০৫ এএম says : 0
    হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের সময়ে শনিবার ছিল আল্লাহর ইবাদাতের জন্য নির্ধারিত দিন। সে দিনের হুকুম অমান্য করায় আল্লাহ সে জাতির আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে বানরের আকৃতি করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ায় আল্লাহ তাআলা তাঁর উম্মতের আকৃতি পরিবর্তনের শাস্তি রহিত করেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Neamat Ullah ২৭ মে, ২০২১, ৪:০৬ এএম says : 0
    বিশ্বনবী উম্মতের জন্য ৩টি দোয়া করেছেন। দোয়ায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-১. হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে অন্যান্য উম্মতের ন্যয় কোনো জন্তুতে (পশু) পরিণত করো না। আল্লাহ তাআলা এ দোয়া কবুল করেছেন।২. হে আল্লাহ! অন্যান্য উম্মতের ন্যয় আমার উম্মতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করো না। আল্লাহ তাআলা এ দোয়াও কবুল করেছেন।৩. হে আল্লাহ! আমার উম্মতের মধ্যে যেন খুন-খারাবি না হয়, আল্লাহ তাআলা এ দোয়া কবুল করেননি।
    Total Reply(0) Reply
  • Kader sheikh ২৭ মে, ২০২১, ৪:০৭ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়ার বরকতে উম্মতে মুহাম্মাদিকে আকৃতি পরিবর্তনসহ দুনিয়ার কঠোর শাস্তি হতে নাজাত দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Yusuf samin ২৭ মে, ২০২১, ৪:০৮ এএম says : 0
    মুসলিম উম্মাহর উচিত, কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার মর্যাদা রক্ষা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Liakat Ali ২৭ মে, ২০২১, ৪:০৯ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিশ্বনবীর দোয়ার মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Karim ullah. ২৭ মে, ২০২১, ৮:৪৩ এএম says : 0
    মহান আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হলে, আল্লাহর কোরআন ও রসুল (স:) সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা সহজ হতো।
    Total Reply(0) Reply
  • riaz ২৭ মে, ২০২১, ৯:০৭ এএম says : 0
    আল্লাহু আকবর
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন