Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদকের নীল ছোবলে নিঃস্ব লোহাগাড়ার নূরজাহান

প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : নূরজাহান বেগমের (৫৫) প্রায় ৪০ বছর আগে লোহাগাড়ার রশিদার পাড়ার খায়ের আহমদের সাথে বিয়ে হয়েছিল। স্বামী ছিল মাদকাসক্ত। ট্রাক চালাতেন। বিয়ের ৭ বছরের মাথায় স্বামী মদ খেয়ে রাতে বাড়ি আসার পথে মাতাল অবস্থায় বাড়ির পাশেই পুকুরে পড়ে মারা যায়। সেই থেকে ছোট ছোট ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সন্তানদের মানুষ করতে থাকে। বড় ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর কিশোর বয়সেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বছরের ৬ মাস জেলে থাকত ৬ মাস জেলের বাইরে মাদকে বুদ হয়ে পড়ে থাকত। বিয়ে করেনি। বাড়ীর কোন খবর রাখত না। তার ছোট ভাই খোরশেদ আলম বয়স যখন ১৫ পেরিয়ে ১৬ তে পা দেয় সেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ছেলেকে মাদক থেকে ফেরানোর জন্য তার মা নূরজাহান বেগম খোরশেদ আলমকে বিয়ে করিয়ে দেয়। খোরশেদ একে একে ৩ সন্তানের বাবা হলেও মাদক ছাড়তে পারেনি। সে কখনও রিক্সা চালাত ও কখনও দিনমজুরি করত। যা আয় করত তাই মাদকের পিছনে ব্যয় করে ফেলত। স্ত্রী-সন্তানদের জন্য কোন খরচ দিত না। এদিকে ঘরে সন্তানের বউ নাতিদের খরচ যোগাতে গিয়ে নূরজাহানের কষ্টের সীমা ছিল না। ৯ বছর আগে খোরশেদ মাদকের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে বিদ্যুতের তার চুরি করতে যায়। এতে তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে মারা যায়। খোরশেদ মারা যাওয়ার বছর না যেতেই তার স্ত্রী ৭ মাসের শিশুসন্তানসহ অন্যান্য সন্তানদের ফেলে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। এদিকে খোরশেদ মারা যাবার ৩ বছর পর তার বড় ভাই মোহাম্মদ আলমগীরও অসুস্থ হয়ে মারা যায়। সে ছিল অতিরিক্ত মাদকাসক্ত। ২ সন্তানকে হারিয়ে ৩ নাতিকে বুকে আগলে রেখে নূরজাহান বেগম মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে নিজে না খেয়ে নাতিদের বড় করে তোলেন। তার সবচেয়ে প্রিয় নাতি ছিল ছোটটি। নাম জিহান। তাকে মানুষ করার জন্য স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। ৯ বছর বয়সী জিহান ছিল তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। নাতিদের নিয়ে কষ্টের দিনগুলি ঠিকই পার করে যাচ্ছিল নূরজাহান। কিন্ত গত নভেম্বর ২০১৫ সালে হঠাৎ একদিন জিহানের মা স্কুলে এসে একপ্রকার গোপনে জিহানকে শহরে নিয়ে যায়। তার পনেরো দিন পরেই ছিল জিহানের বার্ষিক পরীক্ষা। ছেলেকে নিয়ে গিয়ে জিহানের মা তাকে চট্টগ্রাম শহরের নতুন ব্রিজ এলাকায় গাড়িতে গাড়িতে পেয়ারা, আমড়া বিক্রির কাজে লাগিয়ে দেয়। নূরজাহান বেগম নাতির জন্য মায়ের কাছে আর আবদার নিয়ে যাননি। শুধু মোবাইলে যোগাযোগ করত ও মাঝে মাঝে গিয়ে প্রিয় নাতিকে দেখে আসত। কিন্তু গত ১ মাস আগে হঠাৎ জিহান নিখোঁজ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। জিহানের নিখোঁজ হবার খবর পেয়ে তার দাদি নূরজাহান বেগম একপ্রকার পাগল হয়ে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়া নেই সারা দিনরাত রাস্তায় রাস্তায় আদরের নাতিকে খুঁজে ফিরছেন। এদিকে জিহানের বড় ভাই প্রতিবন্ধী, অন্যটা গ্যারেজে কাজ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকের নীল ছোবলে নিঃস্ব লোহাগাড়ার নূরজাহান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ