সোমবার (২৪ মে) প্রেসক্লাব যশোরে সামনে সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদ, কর্মচারি পরিষদ ও ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সর্বস্তরের সদস্যরা মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধন থেকে জানানো হয়, দ্বিতীয় মেয়াদে ড. আনোয়ার হোসেন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরাপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে কোনভাবেই প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া যাবে না। গত চার বছরে তিনি সীমাহীন দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মতান্ত্রিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংস হওয়ার পথে নামিয়ে দিয়েছেন। তার মত একজন দুর্নীতিবাজ প্রফেসরকে শুধুমাত্র যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায় নয় কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই দায়িত্ব দেয়া ঠিক হবে না। তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রমাণ মেলে তিনি যেখানে দায়িত্বে থাকবেন সেই প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে ছাড়বেন। যবিপ্রবিতে তার সকল কর্মকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করলে বাস্তব সত্যতা বেরিয়ে আসবে।।
আরো জানানো হয়, ২০১৭ সালের মে মাসে ড. আনোয়ার হোসেন যবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। তিনি চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও লুটপাতের রামরাজত্ব চালান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে তিনি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করেন। সেটা প্রমাণিত হলে উচ্চ আদালত থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তিনি সবাইকে প্রমোশন দেন। চার বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কোয়াটার ব্যবহার করেছেন ১২৫ টাকার বিনিময়ে। অথচ প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িভাড়া বাবদ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। বিনা টেন্ডারে অফিস ডেকোরেশন, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে এসি লাগানোর দায়িত্ব দেন তার আপন বোনকে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েও শুধুমাত্র ১৭ লাখ টাকা দিতে না পারায় মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক যুবককে তিনি চাকরি দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি ৩৫ বছর বয়সে শারীরিক শিক্ষা বিভাগে ফিরোজ কবির ও ফিরোজ কবিরের স্ত্রীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ডা. নুসরাত জাহানকেও তিনি ৩৫ বছর বয়সে নিয়োগ দিয়েছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার ড্রাইভার ও ড্রাইভারের বোনকে অফিস স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেন।
এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। তিনি একক সিদ্ধান্তে এসব করেছেন। সব নিয়োগে তিনি তার পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নিয়োগ কমিটি করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯৮ লাখ টাকা নিয়ে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন। তার বাংলোর কুকারম্যানকে সাসপেন্ড করার পরও উপাচার্য নিয়মিত কুকারম্যানের বেতন নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের গবেষণাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংবর্ধনা নিয়েছেন। এই মিথ্যাচারের ফলে ব্যাপকভাবে যবিপ্রবির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার আমলে সব কাজের তদন্ত করলে দুর্নীতির সব চিত্র বেরিয়ে আসবে।
চার বছরে তিনি মন্ত্রোলয় থেকে কোন উন্নয়ন বাজেটই আনতে পারেননি। যেসব উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে সবই আগের উপাচার্য়ের আমলের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালনা করতে ব্যক্তিভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। নিয়োগ, ছাত্রদের বহিষ্কার ও মামলার বিষয় না থাকলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই আসতেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের তিনি কোন যোক্তিকতা ছাড়াই আজীবন ছাত্রত্ব থেকে বহিষ্কার করেন। বছরের অধিকংশ সময় তিনি ঢাকায় থাকতেন। এ ধরণের দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে যবিপ্রবির পরিবার কোনভাবেই ওই পদে পুনরায় দেখতে চাই না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বান্ধব প্রফেসরকে তারা উপাচার্য হিসেবে পাওয়ার দাবি জানান। সেই সাথে সদ্য বিদয়ী উপাচার্যের সকল কর্মকান্ড তদন্ত করে আইনের মুখোমুখি আনার দাবি তোলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তোফায়েল হোসেন,
সাধারণ সম্পাদক ড. আমজাদ হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. সুব্রত মন্ডল, যুগ্ম-
সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুর রউফ সরকার, সদস্য ড. ফরহাদ বুলবুল, সদস্য ড. হুমায়ুন কবির, সদস্য সুমন রহমান, বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হেলালুল ইসলাম হেলাল,
সাধারণ সম্পাদক তাসরিক হাসান, কর্মচারি পরিষদের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল,
সাধারণ সম্পাদক শওকত ইসলাম সবুজ ও ফিশারীজ বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম-
সাধারণ সম্পাদক একরামুল কবীর দ্বীপ।