হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর
শুক্র শনি-মিলিয়ে কয়েক বছর ধরেই সরকারি লোকজনদের জন্য ঈদের ছুটি বেশ লম্বা হয়। কেবল ঈদের বেলাতেই এমনটা হয়, সে কথাও হয়তো ঠিক নয়। বছরে প্রায় সময়ই আগে-পরে মিলে তিন-চার দিন সরকারি লোকজনদের ভাগ্যে ছুটির এ মওকা জুটছে। এক সময়ে যে কারণেই দুই দিনের ছুটি শুরু করা হোক না কেন, পরবর্তীতে বিদ্যুতের চাহিদার সংকুলানের বিবেচনাতেই দুই দিন ছুটি বহাল রাখা হয়েছিল। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর কথা বলা হলেও কেন সরকারি ছুটি কমছে না তা বলা কষ্টকর। প্রতি সপ্তাহে একদিন করে কাজ কম করার কারণে তাদের বেতন-ভাতায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ তারা সরকারি নিয়ম পালন করছেন। যথারীতি এর প্রভাব রাজধানীতেও লক্ষ করা যায়। এ ধরনের ছুটি কাটাতে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে এবং অনেকে আবার সময় করে গ্রামের বাড়িতেও যান। এর ফলে রাজধানীতে নিয়মিত কিছু প্রভাব লক্ষ্যণীয়। যেমনÑ ছুটির আগের দিন কোনো কোনো এলাকায় যানজট তীব্র হয়, আবার কোনো কোনো দিন রাস্তাঘাট হয়তো একেবারেই ফাঁকা থাকে। যাদের বাধ্য হয়ে অথবা যাওয়ার কোনো উপায় না থাকায় রাজধানীতেই নিয়মিত থাকতে হয় তারা এসব অনুভব করতে পারেন। অবশ্যই এসব অভিজ্ঞতার সাথে ঈদের ছুটির তুলনা করার কোনো মানে হয় না। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাড়া পড়ে। একেবারে খেটে খাওয়া মানুষসহ প্রায় সবাই এই সময়ে যে যেভাবে পারে ঘরমুখো হওয়ার চেষ্টা করে। এর অবশ্য অন্যদিক রয়েছে। এই সময়টায় সাধারণত কাজ সীমিত হয়ে হয়ে পড়ে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বিশেষ কোনো কাজে কাউকে ডাকে না। সে কারণে একটু বিনোদন, একটু সময় কাটানোÑ সবমিলে ঈদের ছুটি কাটানোর একটা প্রবণতা সবার মধ্যেই সক্রিয় থাকে। এসব বিবেচনার বাইরে এবারের ঈদ-উত্তর আলোচনা একটু ব্যতিক্রমী।
ঈদ যাত্রার আগেই যেভাবে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল বাস্তব অবস্থাও ঠিক তেমনটিই ছিল। সড়ক পথে ভোগান্তির কোনো শেষ ছিল না। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ঈদের আগে যত কথাই বলুন না কেন, বাস্তবে যা ঘটার তা-ই ঘটেছে। বিড়ম্বনার কোনো অবসান হয়নি। যারা একটু নিশ্চিন্তে যাওয়ার জন্য গলদঘর্ম হয়ে রাত জেগে টিকিট কিনেছিল তাদের চেয়ে যারা টিকিট না কিনে ভাঙা যাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নানা কারণে তারাই খানিকটা জিতেছে। প্রচ- শারীরিক ধকল সইলেও তারা খানিকটা আগেই পৌঁছতে পেরেছে। কারণ সোমবারের আগে টিকিট করা যাত্রীদের গাড়ি পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। গাড়ির অপেক্ষায় স্টেশনে নারী-শিশুদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্ভোগের নানা সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর আগেই অবশ্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের আশঙ্কা করা হয়েছিল। প্রকাশিত খবরাদিতে ফেরিঘাটের দুরবস্থার বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। ঈদের আগেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগছিল। তখনই মনে করা হয়েছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাস্তবতাও তাই হয়েছে। তবে এর মাশুল দিতে হয়েছে আরো অনেককে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী জট নিরসনের কোনো উদ্যোগ নিতে অক্ষম হলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন, কেউ নিয়ম ভাঙবেন না। এটি অবশ্যই নিয়মরক্ষা বা শৃঙ্খলার বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এবারের ঈদকে ঘিরে যতগুলো হতাশার দিক ছিল তার মধ্যে এটিও একটি। কারণ এবার প্রথম থেকেই কোরবানির পশুর আলোচনা তুঙ্গে উঠেছিল। ভারতীয়দের গরু রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে দেশীয় পশু দিয়ে চাহিদা মেটানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তার সাথে পরিবহন ব্যবস্থাপনার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গরুর সাথে সম্পর্ক রয়েছে বিনিয়োগের। প্রকাশিত বিবরণীতে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ৫ থেকে ১০ ভাগ কোরবানি এবার কম হয়েছে। এই কম হওয়ার সাথে কী কী বিষয় সম্পর্কিতম, তার পূর্ণ বিবরণ না থাকলেও সাধারণ মানুষ মনে করেন, পরিবহন ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এর সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। দেখা গেছে, প্রথম দিকে কোরবানির পশু বিশেষ করে গরুর গায়ে হাত দেয়াই মধ্যবিত্তে পক্ষে কঠিন হয়ে উঠেছিল। অথচ শেষ রাতে যারা কিনেছে তারা অনেকটাই লাভবান হয়েছে। অনেক গরু ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর কারণ পরিবহনগত অব্যবস্থাপনা। সড়ক ব্যবস্থাপনার অনিয়মের কারণে দীর্ঘ যানজট এবং নিয়মমানায় পশুবাহী পরিবহনের রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পারার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারগুলোতে। শেষ দিনে রাস্তাঘাট এমনিতেই খালি হওয়ার কারণে পশুবাহী এত গাড়ি রাজধানীতে প্রবেশ করেছে যে তখন আর ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এমনটা ইতোপূর্বে কখনো হয়েছে বলে শোনা যায়নি। এর ফলে যারা ব্যাংকের টাকায় পশু লালন-পালন করেছে তারা নতুন বিপাকে পড়তে পারে। সেই সাথে ব্যাংকের নিশ্চিত বিনিয়োগও খানিকটা হলেও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় গরু অমদানি বন্ধ হওয়ায় অন্য যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা হলো এবারই বোধকরি অনেক দিন পর একেবারে সনাতনী পদ্ধতিতে লালন-পালন করা অনেক পশু পাওয়া গেছে। প্রথমদিকে তুলনামূলকভাবে দাম একটু বেশি হলেও শরীর এবং স্বাস্থ্যের বিবেচনায় এসব পশুর গোস্ত নিরাপদ ছিল। এমনকি এসব পশু সুদের টাকায়ও বড় করা হয়নি। কৃষকরা নিজেদের মতো করেই কোরবানির বাজারের জন্য লালন-পালন করেছে।
ঈদকে কেন্দ্র করে যে ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- নিয়মিত হয়ে থাকে এবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে। রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে এবার খুব একটা কেনাকাটা ছিল না। এর কারণ সম্পর্কে মনে করা হয়, ঈদের আগে ভারতীয়দের ফ্রি ভিসা। অনেকেই ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে না কিনে সেখান থেকেই নাকি কিনেছে। ঈদের আগে থেকেই বলা হয়েছে, বিপণিবিতানগুলোতে টুকিটাকি কেনাকাটা ছাড়া তেমন কোনো ভিড় ছিল না। এ অবস্থা শেষ পর্যন্ত বহাল ছিল। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ এখন ভারতীয় পণ্যের অবাধ বাজারে পরিণত হয়েছে। এর যেমনি রয়েছে বৈধ পদ্ধতি তেমনি রয়েছে অবৈধ পথ বা চোরাচালান। ঈদকে কেন্দ্র করে উভয় পথেই ব্যবসা সাধারণত জমজমাট হয়ে ওঠে। কারণ বৈধতার আড়ালে অবৈধটা চালানো সহজ হয়। ভারতীয় ভিসার কারণে অবস্থাটা ছিল ভিন্নতর। এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। সে সময়ে ভারতীয় পত্রিকার বাংলাদেশি এজেন্ট ঠিক করতে যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে এসেছিল তাদের মধ্যে ভারতীয় অনেক নামি-দামি পত্রিকার প্রতিনিধিও ছিল। দেখা গেল এসব কর্তাব্যক্তির এজেন্ট নিয়োগের চেয়ে অর্থ লোপাটেই যেন বেশি আগ্রহ ছিল। এমনিতেই ভারতীয় কাগজ বাংলাদেশে চলবে কি চলবে না এ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। স্বাধীনতার পর প্রাথমিক পর্বে কোনো কোনো মহলে এক ধরনের অতি আগ্রহ যে ছিল সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় ভারতীয় পত্র-পত্রিকার চাহিদা বাংলাদেশে কতটা থাকবে সে নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। তা সত্ত্বেও বিশেষ আগ্রহী মহলের যারা ভারতীয় পত্র-পত্রিকাকে এদেশে গ্রহণযোগ্য করার এক ধরনের অপপ্রয়াস নিয়েছিল তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। কারণ দেখা গেল, একই কাগজের অগণিত এজেন্ট তারা নিয়োগ করেছে। অর্থাৎ বাজার থেকে কৌশলে টাকাটা তারা তুলে নিয়েছে। ভারতীয়দের সাথে ব্যবসা করতে গিয়ে এ ধরনের ঠকবাজির শিকার অনেকেই অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে। গত কয়েক বছরে এ ধরনের এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। দেখা গেছে, যখনই বাংলাদেশের মানুষের হাতে কোনো না কোনোভাবে কিছু টাকা জমা হয়েছে তখনই ভেল্কিবাজি করে ঠিকই তা ভারতীয়রা লোপাট করে নিয়েছে। এখন তো দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই খুব একটা ভালো নয়। আর সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ভারতের হাতে বন্দি। যাই হোক, এটাই সত্যি যে, দেশীয় বাজারে বিপণিবিতানগুলোতে কেনাকাটার সেই পুরনো চেহারা আর ছিল না। তবে এবার জমেছে পর্যটন। ঈদের আগের খবরে বলা হয়েছে, ঈদের ছুটিতে বহু মানুষ দেশে এবং দেশের বাইরে বেড়াতে গেছে। এই প্রবণতা নতুন না হলেও এবার কোরবানির পশুর কম বিক্রি এবং পর্যটন বেড়ে যাওয়ার সমীকরণটি অনেককে চিন্তিত করেছে। এর সাথে সামগ্রিক কোনো চেতনাগত প্রভাব রয়েছে কিনা সে ভাবনাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে মনে করেন, মানুষের মন ভালো নেই। তাই কোরবানিতে আগ্রহ কমে গেছে। ধর্মীয় বিবেচনায় এ ধরনের বক্তব্য টেকে না। যারা কোরবানির চেতনার সাথে সম্পর্কিত তাদের কাছে কোরবানির কোনো অন্যথা হওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্যই সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচ্য। পর্যটন বৃদ্ধির বিষয়টি একদিক থেকে উৎসাহব্যঞ্জক হলেও এটি অর্থনীতিতে কতটা সম্পৃক্ত হলো বা হতে পারল অবশ্যই তা দেখার রয়েছে। এখানে এ কথা বলে রাখা দরকার, গরু এখন আমাদের অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গোস্তের আলোচনা বাদ দিলেও চামড়ার কথা তো আমরা সবাই জানি। প্রকাশিত খবরাদি বলা হয়েছে, গরুর যেসব অংশ আমরা ফেলে দিই, এমনকি হাড়, লেজের লোমের মতো অবহেলিত অংশও এখন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আমদানি করছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আরো একটি বিষয় হচ্ছেÑ বলা হয়েছে, যারা পশু কোরবানিতে অংশ নিয়েছে তাদের অনেকেই নিজ দায়িত্বে এসব হাড়গোড় সংগ্রহ করে নিয়েছে যা পরিচ্ছন্নতার বিবেচনায়ও অত্যন্ত গভীর বিবেচ্য। সে বিবেচনায় গরু কেবলমাত্র কোরবানি উপলক্ষে নয় বরং বছরব্যাপী এর উৎপাদনে সহায়তা করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। যারা অর্থনীতি নিয়ে ভাবেন, তারা এদিকটি নিয়েও ভাববেন। যদি যথাযথ উদ্যোগ নেয়া যায় তাহলে দেখা যাবে, একদিকে দেশে গোস্তের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বেলাতেও কার্যকর অবস্থান থাকবে। এখানে আরো এটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার যে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ঐতিহ্যবাহী পণ্যের কোনোটির অবস্থাই এখন আর আগের জায়গায় নেই। পাটের অবস্থা তো অনেক আগে থেকেই নাজুক। চা এখন আর রফতানি পণ্য নয়। চামড়ার অবস্থা এখনো কিছুটা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে যে পোশাক শিল্প তার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। অনেকেই মনে করছেন, এটি এখন প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হতে বাকী। সে বিবেচনায় গরু দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। ভারতীয়রা যেহেতু গোরক্ষার আন্দোলনে ব্যস্ত, তাই এক্ষেত্রে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সুযোগ কম। অন্যদিকে বর্তমানে ভারতে গোমূত্রের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গোমূত্র রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
ঈদের দিনে বৃষ্টি থাকায় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর কার্যকর উদ্যোগ থাকায় এবার কোরবানির পশুর বর্জ্য অনেকটা দ্রুত অপসারিত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কোরবানিতে খানিকটা সমস্যা হলেও বৃষ্টির পানিতে নগরী ধুয়েমুছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বেশ আগে থেকে মসজিদগুলোতে এ সংক্রান্ত আলোচনা এবং আহ্বানেরও সুফল পাওয়া গেছে। এটি সামগ্রিকভাবে সচেতনতার অংশ বলে মনে করাই সঙ্গত। এবার ঈদের ছুটির আলোচনায়-আড্ডায় বেশ খানিকটা স্থান করে নিয়েছে রাজনীতি। এর অবশ্য একটি বড় কারণ, ঈদের ছুটির আগে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করেছে। ঈদের আগেই প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জিয়া অরফানেজ মামলায় বেগম জিয়ার লিভ টু আপিলের অনুমতি মিলেছে, যেখানে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পুনরায় শুনানি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ সময়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান। যে মামলাতেই তাকে গ্রেফতার করা হোক না কেন মূলত বিএনপির সাথে সম্পর্কই ছিল তার গ্রেফতারের মূল কারণ। মুক্তি না পেলেও বড় ধরনের বাধা অতিক্রম করে মুক্তির পথে আরো একধাপ এগিয়েছেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তার সম্পাদিত পত্রিকাটির অনলাইন প্রকাশনাও সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর জনসাধারণকে রাজনীতি নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। তা হলো, মাহমুদুর রহমান মান্নার জামিন। তিনি এখনো বের হতে পারেননি, পারবেন কিনা তাও সম্প্রতি নিশ্চিত নয়। তবে জামিন হয়েছে এটিও কম কথা নয়। এদিকে সরকারের রাজনৈতিক পার্টনার জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। এসব ঘটনা ঘটেছে জন কেরির বাংলাদেশ সফরের পর। এখানে এ কথাও বলা প্রয়োজন, জন কেরির সফর নিয়ে প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছিল, তার সফরে উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট। এর কারণ অনুসন্ধানের যে চেষ্টা হয়নি, তা নয়। সবমিলে এটা মনে করা হয়েছে যে, তিনি বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে নাকি সন্তোষজনক আলোচনা করেছেন। প্রকৃতই কী হয়েছে তা বুঝতে হয়ত আরো একটু সময় লাগবে। তবে সামগ্রিকভাবে রাজনীতির আলোচনা তুঙ্গে ওঠার আর একটি বড় কারণ হচ্ছে, ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচি চালকরা। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছিল। তবে সে সময়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠাও নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে রাখা হয়েছিল। প্রকৃত অর্থে যদি সাধারণ মানুষ কম দামে চাল পায় সেটি আনন্দের। এর ভিন্ন দিকও রয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টিও বিবেচ্য। সরকার যখন হতদরিদ্রদের জন্য দশ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ করছে তখন বাজারে একেবারে নি¤œমানের চালের দামও ৩২ টাকা কেজি। সে অর্থে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে রমরমা আলোচনা রয়েছে তার সাথে এটি মেলালে ভিন্ন বার্তাই দেয়। পূর্বেই বলেছি, এবার কোরবানি কম হয়েছে। এরকম হওয়ার ব্যাপারটিকে যদি ক্রয়ক্ষমতার সাথে মিলিয়ে দেখা যায়, তাহলে বলতে হবে, যারা কোরবানি দিতে আগ্রহী বা দেয়ার মানসিকতাসম্পন্ন তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আর যারা বিদেশে আমাদ-ফূর্তিতে কাটানোর মানসিকতাসম্পন্ন তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। যাই হোক, ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার অঙ্গীকার পূরণের মধ্যে রাজনৈতিক অর্থাৎ নির্বাচনের এক ধরনের ঘ্রাণ অনেকে পেয়েছেন। যদিও সরকারি কোনো কোনো মহলের মতে, এমনিতেই নির্বাচনের খুব একটা বাকি নেই। তাই আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন আগে হবে কি হবে না, সে নিয়ে অবশ্যই নানা মত রয়েছে। তবে বোধকরি এখনকার সবচেয়ে বড় আলোচনা, নির্বাচনটি কি ২০১৪ সালের মতো হবে, নাকি প্রকৃতই একটি নির্বাচন হবে। প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিদায় নেয়ার পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে সে কমিশনই পরবর্তী নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠবে। এটাই স্বাভাবিক রীতি। মূল ভাবনা বোধকরি অন্যত্র। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনে যে নতুন ভাবনা সঞ্চারিত হয়েছে তাহলো, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয়তা। এটি করতে হলে নির্বাচনের আগেই দেশের বিদ্যমান সকল প্রণিধানযোগ্য রাজনৈতিক দল ও মতের সাথে কার্যকর সমন্বয় করতে হবে। এই সমন্বয় কীভাবে হবে তা নিয়ে এখনো কঠিন বিতর্ক রয়েছে। এটা সরকারি দল এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বলেছেন যে, ২০১৪ সালের পর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সাথে সরকারের কথা হয়েছে। এরপর অনেক পানি গড়িয়েছে। এখন বোধহয় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আলোচনার সময় এসে গেছে।
ঈদের ছুটি শুরুর প্রাক্কালে গাজীপুরের দুর্ঘটনা এবং এ নিয়ে যেসব হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা প্রকৃত বিবেচনায় রাজধানীবাসীর মনে গভীর রেখাপাত করেছে। অনেকের ঈদের আনন্দই ম্লান করে দিয়েছে। একটার পর একটা এ ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনে কেবল অনিশ্চয়তার বার্তাই দিচ্ছে। এর আগের ঘটনা-দুর্ঘটনার মতোই এক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষীয় অবহেলার নানা বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। রানাপ্লাজার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটাও বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কোনো অর্থনৈতিক নিরাপত্তাবলয় নেই। তারা যে যেভাবে পারছে কিছু করে খাচ্ছে। ওদিকে জীবনের নিরাপত্তাও নেই। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, গুম-হত্যা ইত্যাদিতে মানুষ অতীষ্ঠ, সন্ত্রস্ত। তার ওপর এ ধরনের ঘটনা-দুর্ঘটনা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে। কার্যত ঈদ ভাবনায়, ছুটির আড্ডায় এসব আলোচনাই স্থান করে নিয়েছিল। এভাবেই কেটে গেছে মাত্র তিন দিনের ছুটি।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।