Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইয়াহুদী সম্প্রদায় উদ্ভব ও পরিণাম-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

স্মরণ রাখা দরকার যে ‘ইসরাঈল’ শব্দটি হিব্রু ভাষার শব্দ। এর অর্থ আরবি ভাষায় ‘আবদুল্লাহ’। এর অর্থ আল্লাহর বান্দাহ। হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর অপর নাম ছিল ইসরাঈল। তিনি দু’টি নামে পরিচিত ছিলেন। ইয়াকুব ও ইসরাঈল। আল কোরআনে হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধরকে বনি ইসরাঈল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহপাক বনি ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মাঝে বারজনকে ‘নাকীব’ অর্থাৎ দলপতি করে প্রেরণ করেছিলেন। তাদের অঙ্গীকারের বিষয় ছিলÑ সকল নবী ও রাসূলগণের ওপর ঈমান আনয়ন করা।

কিন্তু বনি ইসরাঈলরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বনি ইসরাঈল ও ইয়াহুদী। এই দলের কেউই সকল নবী রাসূলদের ওপর ঈমান আনয়ন করেনি। বিশেষ করে উভয় দলই বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর নাবুওয়াত ও রিসালাতকে অবিশ্বাস করেছে এবং তাঁর ওপর অবতীর্ণ-সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ফলে, আল কোরআনে তাদেরকে চির অভিশপ্ত ও চির পথহারা বলে সীলমোহর করে দেয়া হয়েছে।

ইয়াহুদীরা চির অভিশপ্ত এবং বনি ইসরাঈলরা চির পথ হারা, পথভ্রষ্ট যারা বর্তমানে নাসারা বা খৃস্টান নামে অভিহিত। কারণ চির অভিশপ্ত বলতে ওই সকল লোককে বুঝায় যারা ধর্মের হুকুম আহকামকে বুঝে-শুনে, সজ্ঞানে এবং স্বীয় অহঙ্কার ও অহমিকা বলে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেছে ও আল্লাহ পাকের আদেশের প্রতি গাফিলতী করেছে। ইয়াহুদীদের সামগ্রিক নিয়ম এই যে, সামান্য হীন স্বার্থের জন্য তারা ধর্মের নিয়ম নীতি বিসর্জন দিতে এবং অবলীলাক্রমে নবীও রাসূলগণকে অবমাননা করতে পটু। যার রেশ বর্তমান কালের ইহুদীদের মধ্যেও বিদ্যমান।

আর চিরপথহারা বলতে ওই সকল লোককে বুঝায়, যারা না বুঝে, না শুনে, অজ্ঞতার দরুন ধর্মীয় ব্যাপারে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে এবং ধর্মের সীমালঙ্ঘন করে অতিরঞ্জনের পথে অগ্রসর হয়েছে, যেমন নাসারাগণ। তারা নবী ও রাসূলের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদানের নামে এতখানি বাড়াবাড়ি করেছে যে, নবীগণকে আল্লাহর স্থানে বসিয়ে দিয়েছে। তাই, ইয়াহুদীদের বেলায় দেখা যায় যে, তারা নবীগণের কথা মানেনি। শুধু তাই নয়, তারা পাঁচ শতাধিক নবীকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। অপরদিকে নাসারাদের অতিরঞ্জন হচ্ছে এই যে, তারা নবীগণকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়েছে। যার নমুনা বর্তমান নাসারাদের মধ্যেও বিদ্যমান আছে।

ইয়াহুদীদের ধ্বংস ও চিরবিলুপ্তি পরিসাধিত হবে খলীফাতুল্লাহ ইমাম মাহদী (আ.)-এর হাতে। হাদীসগ্রন্থসমূহে বিস্তারিতভাবে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আলোচনা স্থান লাভ করেছে। ইমাম মাহদী (আ.) বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) তনয়া বিবি ফাতিমা (রা.)-এর অধঃস্তন পুরুষ হবেন। তাঁর নাম হবে মোহাম্মাদ, পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে আকৃতিগত যথেষ্ট মিল থাকবে। ললাট দেশ প্রশস্ত, নাক সুউচ্চ হবে।
তিনি ভূপৃষ্ঠকে ইনসাফ ও ন্যায় পরায়নতায় ভরে দেবেন। প্রথমত : তাঁর হুকুমত আরবদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে। অতঃপর সারা পৃথিবীতে তাঁর হুকুমত বিস্তৃত হবে। সাত বছর পর্যন্ত তাঁর হুকুমত চলতে থাকবে। এতদ প্রসঙ্গে হযরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : ইমাম মাহদী (আ.) আমার বংশের ফাতিমা (রা.)-এর উত্তর পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুনানূ আবু দাউদ : ২/২৩৯)।

ইমাম মাহদী (আ.)-এর বয়স ৪৫, ৪৮, বা ৪৯ বছর হওয়ার পর তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যাবে। হযরত ঈসা (আ.) তাঁর জানাযার নামাজ পড়াবেন। ইমাম মাহদী (আ.) বাইতুল মুকাদ্দাসের পাশে ইন্তিকাল করবেন এবং সেখানেই তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু উমামাতুল বাহিনী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে দাজ্জালের আলোচনা বিদ্যমান। সে হাদীসে এক পর্যায়ে উম্মে শোরাইক বিনতে উবাই বলেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে সময় আরবগণ কোথায় থাকবে? তিনি উত্তরে বললেন, আরবগণ তখন সংখ্যায় খুব কম হবে। তাদের আশ্রয় হবে বাইতুল মুকাদ্দাস। তাদের ইমাম (খলীফা) হবেন একজন সত্যনিষ্ঠ লোক।

একদা তাদেরকে নামাজ পড়ানোর জন্য ইমাম মাহদী (আ.) অগ্রসর হবেন। এমন সময় হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) তাদের মাঝে অবতরণ করবেন। ইমাম কয়েক কদম পিছে হটে আসবেন। ঈসা (আ.) তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললেন : আপনি আগে বেড়ে নামাজ পড়ান। কেননা এ পদ এখন আপনার জন্যই। ইকামাত হবে। তাদের ইমাম নামাজ পড়াবেন ।

নামায শেষ হলে ঈসা (আ.) বলবেন : তোমরা দরজা খোল। দরজা খোলা হবে। তার পেছনেই দেখা যাবে দাজ্জালকে। দাজ্জাল প্রাণপণে পালানোর চেষ্টা করবে। ঈসা (আ.) বলবেন : তোমার ওপর আমার একটি আঘাত নির্ধারিত হয়ে আছে। তুমি আমার সেই আঘাত হতে বাঁচতে পারবে না। অনন্তর তিনি। ‘বাবুল লুদ’ এ তাকে হত্যা করবেন। আল্লাহতায়ালা ইয়াহুদীদেরকে পরাজিত ও পর্যূদস্ত করে দেবেন। (সুনানু আবু দাউদ : ২/১৩৫) [তথ্য সূত্র : ১, আহকামুল কোরআন। লিল কুরতুবী : ১/৪৩০। ২. আল ফাসুন ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নুহাল : ১/৪৯। ৩. আল আদইয়ান ওয়াল ফিরাক বহাওয়ালায়ে আকীদাতুল হানাফিয়্যাহ- ১৪০)।



 

Show all comments
  • মিরাজ আলী ২৩ মে, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে ইহুদিদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। কোরআনে কারিমে তাদের অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তৌহিদুজ জামান ২৩ মে, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    এ জাতি যুগ যুগ ধরে খোদাদ্রোহিতা, কুফরি ও তাদের খারাপ কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের কাছে অত্যন্ত ঘৃণাভরে পরিচিতি পেয়ে এসেছে
    Total Reply(0) Reply
  • ক্ষণিকের মুসাফির ২৩ মে, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    জন্মগতভাবেই এই জাতি খুবই চতুর ও ধুরন্ধর হওয়ায় বিভিন্ন ছলচাতুরী দিয়ে মানুষকে বশীভূত রাখার কৌশল অবলম্বন করে।
    Total Reply(0) Reply
  • বদরুল সজিব ২৩ মে, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    হজরত ইসহাক (আ.)-এর পুত্র হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধররা বনি ইসরাইল নামে পরিচিত। বনি ইসরাইল হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধরদের একটি শাখা। এ শাখারই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর এক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামের অংশবিশেষ থেকে ‘ইহুদি’ নামকরণ করা হয়েছিল। (তাফসিরে মাওয়ারদি : ১/১৩১)
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুল ইসলাম ২৩ মে, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
    ইহুদি জাতিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভুগেছেন হজরত মুসা (আ.)। কোরআন শরিফের বহু জায়গায় এর বিশদ বর্ণনা এসেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • হাফেজ মাওলানা নূরুল হক ২৩ মে, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
    ইহুদি জাতি হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ওফাতের পর পারস্পরিক বিভক্তি এবং ধর্মদ্রোহিতা ও কুকর্মের পথ অবলম্বন করে। কোনো কোনো নবী এসে আল্লাহর নির্দেশে ইহুদিদের এ ধরনের কার্যকলাপের শোচনীয় পরিণাম সম্পর্কে সতর্কবাণী শোনালেও তারা তাঁর কথা না মেনে উল্টো নবীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে। তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ আলী ২৩ মে, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
    বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে ইহুদিদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। কোরআনে কারিমে তাদের অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • bikash ২৩ মে, ২০২১, ৯:১৯ এএম says : 5
    যিনি এই লেখাটা লিখেছেন তার ধর্মীয় ঞ্জ্যান খুবই সীমিত। তিনি বলেছেন, ইয়াহুদীরা চির অভিশপ্ত এবং বনি ইসরাঈলরা চির পথ হারা, পথভ্রষ্ট যারা বর্তমানে নাসারা বা খৃস্টান নামে অভিহিত। তার এই কথা ১০০% মিথ্যা। খৃষ্টানগন কখনও পথহারা নন। ঈসা নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি তার উম্মতদের বেহেস্তে নিয়ে যাবেন।
    Total Reply(1) Reply
    • আরিফ ২৩ মে, ২০২১, ২:১৭ পিএম says : 0
      ইসা আ. যে খৃষ্টানদের বেহেস্তে নিয়ে যাবেন, তারা কি ইসা আ. কে নবী মানেন না আল্লাহর পুত্র মানেন। যদি নবী মেনে থাকে, তাহলে সে আর খৃষ্টান থাকে না। মুসলমান হয়ে যায়। লেখকের জ্ঞান নিয়ে কথা বলছেন, আপনার জ্ঞানের বহরটা মেপেছেন কখনো?

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন