বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ফিলিস্তিনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা জর্ডান যাই। সেখান থেকে বাসে করে আমরা সামনে যেতে শুরু করি। সীমান্তের কাছাকাছি গেলেই ইসরাইলের পতাকা দেখতে পাবেন। অনেক উঁচুতে উড়ছে। এটা দেখেই আপনার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাবে। তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি টের পাবেন। কিছুটা ভয়, কিছুটা ক্ষোভ, কিছুটা হতাশা। যেহেতু আমি অস্ট্রেলিয়ান, তাই আমার অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট লাগবে। যখন আপনি প্রথমবারের মতো ইসরাইলিদের দেখবেন, হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাবে। মনে হবে শরীরে যেন বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। তাদের কাছে গেলে তারা হাসিমুখে আপনাকে স্বাগত জানাবে না। নিজেকে একজন নির্বাসিত ব্যক্তি ভাবতে ওরা আপনাকে বাধ্য করবে।
বর্ডারে পৌঁছলে ওরা আপনাকে বাস থেকে নামিয়ে দিবে এবং ভেতরে গিয়ে আপনাকে এক জায়গায় বসে থাকতে হবে। ৩ ঘণ্টা, ৪ ঘণ্টা, ৫, ৬, ৭, ৮ ঘণ্টা। এত সময় পরও আপনাকে প্রশ্ন করা হবে না। আপনি ফিলিস্তিনে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক, কিন্তু আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখবে।
বসে থাকার সময় দেখবেন একজন ফিলিস্তিন নাগরিক যাকে আমরা চাচা বা হাজী বলে সম্বোধন করি, ৭০-৭৫ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ মানুষ। আর ১৭-১৮ বছর হবে এমন বয়সী ইসরাইলি নারী সেনা সেই বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলছে। এমনভাবে অর্ডার দিচ্ছে মনে হচ্ছে বৃদ্ধ লোকটি কোনো জন্তু জানোয়ার। মনে হয় লোকটি কোনো মানুষই নয়, যেন কোনো পশু। সেই ইসরাইলি নারীটি কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে বৃদ্ধ লোকটিকে অর্ডার দিচ্ছে।
আর আপনি কষ্টটা অনুভব করতে পারবেন। আর সেখানে দাঁতে দাঁত চেপে আপনাকে এটা সহ্য করতে হবে। এই লোকটি ফিলিস্তিনের অধিবাসী। এই ফিলিস্তিনি লোকটি যেখানে সম্মান পাওয়ার কথা সেখানে ১৮ বছরের একটি মেয়ে অর্ডার দিচ্ছে।
যাহোক, সেখানে বসে থাকার পর আপনাকে ডাকা হবে। সেখানে নারীর উপস্থিতি কাকতালীয় নয়, সে আপনাকে ডাকলে আপনি তার সাথে ভেতরে গিয়ে অন্য রুমে বসতে হবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কে? কেন ইসরাইলে এসেছ? তোমার এখানে কাজ কি? হজ শেষে বাড়ি না গিয়ে কেন এখানে এসেছ? এভাবে প্রশ্ন করতেই থাকবে আধা ঘণ্টা ধরে। আবার চলে যাবে। দুই তিন ঘণ্টা পর আবার এসে আবার প্রশ্ন করবে। এরপর আপনাকে আরেক জায়গায় পাঠাবে। সেখানে ১-২ ঘণ্টা বসে থাকার পর আবার আপনাকে একই প্রশ্ন করবে। এভাবে চলতে থাকবে। এরপর আপনার ফিলিস্তিনে যাওয়ার ইচ্ছে মরে যাবে। এবার তারা যেতে দিবে।
আপনি ইসরাইলে প্রবেশ করলেই তাদের শোষণ টের পাবেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে মাইলের পর মাইল কংক্রিটের উঁচু দেয়াল দেখতে পাবেন। মাইলের পর মাইল কংক্রিটের দেয়ালগুলো ফিলিস্তিনিদের আলাদা করে রেখেছে। শহরের ভেতরের দেয়ালগুলোতে এমনভাবে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে যেন সব নরমাল মনে হয়।
এরপর যখন আপনি মাসজিদুল আকসায় প্রবেশ করতে যাবেন, দেখবেন ইসরাইলি সেনারা চার দিক ঘিরে আছে। তাদের কাছে আপনার পাসপোর্ট আইডি সব দেখাতে হবে। এক ইসরাইলি সেনা যার কাছে অটোমেটিক অস্ত্র রয়েছে তাকে বলতে হবে আমি কেন আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করতে চাই।
যাহোক এগুলোর পর মসজিদে প্রবেশ করবেন। ভেতরে গিয়ে মনে হবে মসজিদের দেয়ালগুলো যেন কাঁদছে। সেখানে কোনো যুবক নেই। কারণ সেখানে তাদের প্রবেশাধিকার নেই। ভেতরে আপনি গ্লাসের তৈরি স্ট্রান্ড দেখতে পাবেন। যেখানে বোমা, গোলাবারুদ ইত্যাদি রাখা আছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে এই মসজিদে নিক্ষেপ করা হয়েছে। বোমার গায়ে লেখা ‘মেড ইন ইউএসএ’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।