বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইহুদিবাদ হচ্ছে হিব্রুদের ধর্ম। হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধরদের পরবর্তীতে ‘বনি ইসরাইল’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ইসরাইল হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর আরেক নাম। বনি ইরসাইল মানে হলো, ইয়াকুবের বংশধর। এ জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ হযরত মুসা (আ.)-কে তাওরাত দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। বনি ইসরাইল পরবর্তীতে ইহুদি জাতি নামে পরিচিত হয়। ‘ইয়াহুদা’ নামক রাষ্ট্রের নামানুসারে বনি ইসরাইল ‘ইহুদি’ নামে পরিচিত হয়। ‘ইয়াহুদ’ শব্দ বলে ইহুদি জাতিকে বোঝানো হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তারা বনি ইসরাইলের বংশধর। পবিত্র কোরআনে ৯ বার এই ইহুদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ইহুদি নাম মুসা (আ.)-এর মৃত্যুর অনেক পরে হয়েছিল। সুতরাং এটি কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, ইহুদি ধর্ম হযরত ইবরাহীম বা মুসা (আ.) প্রবর্তিত। কারণ তারা দু’জনসহ সকল নবীই ইসলামের অনুসারী ছিলেন। ইবরাহীম (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ইবরাহীম ইহুদিও ছিলেন না, নাসারাও ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা আল ইমরান : ৬৭)। তেমনিভাবে হযরত মুসা (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, মুসা বলল, হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক তাহলে তারই ওপর তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাকে। (সূরা ইউনুস : ৮৪)।
ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ ধর্মের অনুসারী ছাড়া অন্য ধর্মের কেউ এ ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে না। আবার এ ধর্ম ত্যাগ করাও সম্ভব নয়। তাই এ ধর্ম চরমপন্থী। ইহুদি ধর্ম অত্যন্ত গোঁড়া। এ ধর্ম থেকে কেউ একবার ধর্মান্তরিত হলে পরবর্তীতে সে আর এ ধর্মে ফিরে আসতে পারে না। একজন ইহুদি সব সময়ই ইহুদি।
ইহুদিরা মূলত তাওহীদপন্থী ও এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। কিন্তু তাওরাত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর উজাইর তা লোকদের কাছে শুনে শুনে পুনরায় লিপিবদ্ধ করায় তারা তাকে ‘আল্লাহর সন্তান’ বলে অভিহিত করে শিরকে লিপ্ত হয়। তাদের মতে ইবরাহীম (আ.) ইসমাইল (আ.)-কে নয় ইসহাক (আ.) কেই জবেহ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন। কারণ, যার নামে বনি ইসরাইল নামকরণ সেই ইয়াকুব (আ.)-এর পিতা হযরত ইসহাক (আ.)। আর ইহুদিদের সবচেয়ে বড় শত্রু আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হযরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ রয়েছে। অন্যান্য সকল আসমানী কিতাবগুলোতেও সেই একই সুসংবাদ আছে। আগের সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের অনুসারীদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন, শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন নবুওয়াত লাভ করবেন তখন আগের সকল ধর্ম বাতিল হয়ে যাবে। তাই তাদেরকে শেষনবীর আনীত কিতাব ও জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করতে হবে।
তাদের নবী ও আসমানী কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী যুক্তির দাবি ছিল, হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ করে মুসলিম হয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা মুসলমান তো হয়ইনি, বরং ইসলাম ও শেষনবীর বিরুদ্ধে হিংসা ও ক্রোধে জ্বলে-পুড়ে মরতে থাকে। কেননা, তাদের ধারণা ছিল, তাদের কাওম বনি ইসরাইলে শেষনবীর আগমন ঘটবে। তাই তারা কিছুতেই মক্কার ইবরাহীম (আ.)-এর বংশের ইসমাইলি ধারার কোরাইশ বংশে আখেরি নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অস্তিত্ব সহ্য করতে পরেনি। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজারো ষড়যন্ত্র শুরু দেয়। নবী করিম (সা.)-এর জন্মের দিন থেকে শুরু করে তাদের ষড়যন্ত্র আজও চলমান।
তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আর যখন একখানা কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের নিকট এলো, যে কিতাব পূর্ব থেকে তাদের নিকট যা আছে তারই সত্যতা সাক্ষ্য দেয় এবং এ কিতাবের আগমনের পূর্বে তারা কাফিদের মোকাবেলায় যার দ্বারা বিজয় ও সাহায্য প্রার্থনা করত। এতদসত্বেও সে জিনিস যখন তাদের সামনে এসে গেল এবং তাকে তারা চিনতেও পারল, তথাপি তাকে মেনে নিতে অস্বীকার করল। (সূরা বাকারা : ৮৯)।
মুসলমানদের সবচাইতে বড় দুশমন হচ্ছে ইহুদি সম্প্রদায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তুমি মুমিনদের বিরুদ্ধে ইহুদি ও মুশরিকদের কঠোরতম দুশমন হিসাবে দেখতে পাবে। (সূরা মায়েদা : ৬৪)।
কোরআন মাজিদের বিভিন্ন সূরা ও আয়াতে বনি ইসরাইল তথা ইহুদিদের সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বহু আয়াত নাযিল হয়েছে। কোরআনের মোট ১১৪টি সূরার মধ্যে ৫০টিতেই ইহুদিদের সম্পর্কে সরাসরি এবং পরোক্ষ ইশারা-ইঙ্গিতে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে এত বেশি আলোচনার উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানগণ তাদের ব্যাপারে যেন যথেষ্ট সতর্ক থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।